ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

স্বামীর হাড় থেকে স্ত্রীর সৃষ্টি : ইসলাম কী বলে?

  • মো: নাঈম ইসলাম
  • আপডেট সময় ০৯:১৮:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৫৯ বার পড়া হয়েছে

‘স্ত্রীকে তার স্বামীর বাম পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে’- কথাটি জনমুখে প্রচলিত থাকলেও এর ভিত্তি পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নেই। কথাটি কুরআনের আয়াত ও হাদিসের স্পষ্ট অপব্যাখ্যা!

‘নারীকে (স্ত্রীকে) পুরুষের (স্বামীর) বাম পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে’-এ কথাটির কাছাকাছি থাকা কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি এবং তার ব্যাখ্যা নিয়ে ধাপে ধাপে আলোচনা করব, চলুন-

প্রথমে দেখি সূরা নিসার প্রথম আয়াত। সেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি ‘নফস’ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।”

আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তিনি তোমাদেরকে একটি নফস থেকে সৃষ্টি করেছেন’। এই নফস কথাটির অর্থ- প্রাণ বা জীবন। এখানে, ‘একটি নফস বা প্রাণ’ বলতে হজরত আদম আ:-কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আদম আ: থেকেই তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।
আয়াতের এই অংশটুকু বৃহদার্থে সমগ্র মানবজাতিকে এক আদম আ: থেকে সৃষ্টি করার ব্যাপারটি বুঝিয়েছেন। লক্ষণীয়, আদম শব্দটির অর্থ-ই কিন্তু আদি বা যেখান থেকে কোনো কিছুর সূচনা।
আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে- ‘তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন’। এই অংশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচনার মূল পয়েন্ট।

এখানে হজরত আদম আ: থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়া আ:-কে সৃষ্টি করার ব্যাপারটি স্পষ্ট করেছেন। যখন হাওয়া আ:-কে সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয়েছিল তখন কেবল হজরত আদম আ:-এর অস্তিত্বই ছিল। অন্য কোনো মানুষের অস্তিত্ব ছিল না। তাই হাওয়া আ:-এর সৃষ্টি আদম আ:-এর থেকেই হবে সেটিই স্বাভাবিক।

এ কথা বুঝতে হবে, হজরত আদম আ: থেকে হাওয়া আ:-এর এই সৃষ্টি প্রক্রিয়াটি কেবল হাওয়া আ:-এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দুনিয়ার আর কোনো নারীর জন্য প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ, দুনিয়ার অন্য কোনো নারী তার স্বামী থেকে বা স্বামীর অঙ্গ থেকে সৃষ্ট নয়।
অন্য আরেকটি আয়াত দেখি। সেটি সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াত। সেখানে বলা হয়েছে- ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতি থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই যারা চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে।’

অনুরূপভাবে সূরা নাহলের ৭২ নম্বর আয়াতে এসেছে- ‘আর আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জোড়া থেকে তোমাদের জন্য নাতিপুতি সৃষ্টি করেছেন ও উত্তম জীবিকা দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নিয়ামতগুলো অস্বীকার করবে?’

আয়াত দু’টিতে বলা- ‘তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রী বা জোড়া সৃষ্টি করা’ বলতে এটি বোঝানো হয়নি যে, স্ত্রীদেরকে তার সঙ্গীদের মধ্য থেকে (হাড় থেকে) সৃষ্টি করা হয়েছে; বরং বুঝানো হয়েছে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে দু’টি ভাগে সৃষ্টি করেছেন। আর এই বৃহত্তর জাতি থেকেই তার সঙ্গীদেরকে বাছাই করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। সঙ্গিনীদেরকে হাড় থেকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে কোনো কিছু বলা হয়নি।

অন্য দিকে সূরা জুমারের ৬ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে বলা হয়েছে- ‘তিনি তোমাদের একটি প্রাণী থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়াও সৃষ্টি করেছেন’।
আয়াতটি সূরা নিসার প্রথম আয়াতের মতোই প্রায়। এখানেও বলা হয়েছে- হজরত আদম থেকেই সবার সৃষ্টির সূচনা। আর তাঁর থেকেই আকৃতি দেয়া হয়েছে তাঁর বিবি হজরত হাওয়া আ:-কে।
চলুন, এবার কতগুলো হাদিস নিয়ে আলোচনা করি-

বুখারি ও মুসলিম শরিফের যথাক্রমে ৩৩৩১ ও ১৪৮৬ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে- ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও, কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের মধ্যে উপরের হাড় সবচেয়ে বেশি বাঁকা। যদি তা সোজা করতে চাও- ভেঙে ফেলবে, ছেড়ে দিলেও তার বক্রতা যাবে না। অতএব নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।’
এই হাদিসে কয়েকটি বিষয় লুকায়িত- প্রথমত, মনে হতে পারে এই হাদিস দিয়ে এটি প্রমাণ করা যায়, স্ত্রীকে সত্যিই তার স্বামীর বাম পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে! কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ কথার মধ্যে কার বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা উল্লেখ নেই! তার মানে, স্বামীর বাম পাঁজরের হাড় থেকে যে স্ত্রী সৃষ্ট তা বলা যুক্তিসঙ্গত হবে না।

দ্বিতীয়ত, হাদিসের পরের অংশ পড়ে এটি বোঝা যায়, কথাটি কেবলই রূপক অর্থে বলা হয়েছে। নারীদের ব্যাপারে পুরুষদের কল্যাণকামী হওয়ার জন্য নারীদের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি সর্বজনস্বীকৃত যে, স্বভাব ও মন-মানসিকতার দিক দিয়ে নারীরা পুরুষদের থেকে শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মতোই কিছুটা আলাদা। এটি নারীদের জন্য দোষের নয়; বরং নারীদের সৌন্দর্য। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে একাধিক জায়গায় তাদের এই স্বভাবকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
ওই হাদিসটিতেও নারীদের এই স্বভাবকে সমর্থন জানানো হয়েছে। মূলত, নারীদের প্রতি পুরুষের কল্যাণকামী ও সদাচরণের মনোভাব আনয়নের জন্যই ওই হাদিসের অবতারণা।

উপরোক্ত হাদিসটিকে অন্য আরেকটি হাদিস দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। হাদিসটি বুখারি শরিফের ৫১৮৪ নম্বর সিরিয়ালে বর্ণিত আছে- সেখানে ইরশাদ হয়েছে, ‘নারীরা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের ন্যায়। যদি একেবারে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙে যাবে। সুতরাং, যদি তোমরা তাদের থেকে উপকার লাভ করতে চাও, তাহলে ওই বাঁকা অবস্থাতেই লাভ করতে হবে।’
এখানে কিন্তু স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘নারীরা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের ন্যায়।’ অর্থাৎ, পাঁজরের হাড়ের সাথে নারীদের সাদৃশ্য কেবলই রূপকার্থে।

সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে, ‘নারীকে (স্ত্রী) পুরুষের (স্বামীর) বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ তত্ত্বটি কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে স্পষ্টত অবান্তর ও অযৌক্তিক।

লেখক : আরবি সাহিত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

স্বামীর হাড় থেকে স্ত্রীর সৃষ্টি : ইসলাম কী বলে?

আপডেট সময় ০৯:১৮:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩

‘স্ত্রীকে তার স্বামীর বাম পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে’- কথাটি জনমুখে প্রচলিত থাকলেও এর ভিত্তি পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নেই। কথাটি কুরআনের আয়াত ও হাদিসের স্পষ্ট অপব্যাখ্যা!

‘নারীকে (স্ত্রীকে) পুরুষের (স্বামীর) বাম পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে’-এ কথাটির কাছাকাছি থাকা কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি এবং তার ব্যাখ্যা নিয়ে ধাপে ধাপে আলোচনা করব, চলুন-

প্রথমে দেখি সূরা নিসার প্রথম আয়াত। সেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “হে মানবসমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একটি ‘নফস’ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।”

আয়াতে বলা হয়েছে- ‘তিনি তোমাদেরকে একটি নফস থেকে সৃষ্টি করেছেন’। এই নফস কথাটির অর্থ- প্রাণ বা জীবন। এখানে, ‘একটি নফস বা প্রাণ’ বলতে হজরত আদম আ:-কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আদম আ: থেকেই তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।
আয়াতের এই অংশটুকু বৃহদার্থে সমগ্র মানবজাতিকে এক আদম আ: থেকে সৃষ্টি করার ব্যাপারটি বুঝিয়েছেন। লক্ষণীয়, আদম শব্দটির অর্থ-ই কিন্তু আদি বা যেখান থেকে কোনো কিছুর সূচনা।
আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে- ‘তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন’। এই অংশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচনার মূল পয়েন্ট।

এখানে হজরত আদম আ: থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়া আ:-কে সৃষ্টি করার ব্যাপারটি স্পষ্ট করেছেন। যখন হাওয়া আ:-কে সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয়েছিল তখন কেবল হজরত আদম আ:-এর অস্তিত্বই ছিল। অন্য কোনো মানুষের অস্তিত্ব ছিল না। তাই হাওয়া আ:-এর সৃষ্টি আদম আ:-এর থেকেই হবে সেটিই স্বাভাবিক।

এ কথা বুঝতে হবে, হজরত আদম আ: থেকে হাওয়া আ:-এর এই সৃষ্টি প্রক্রিয়াটি কেবল হাওয়া আ:-এর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দুনিয়ার আর কোনো নারীর জন্য প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ, দুনিয়ার অন্য কোনো নারী তার স্বামী থেকে বা স্বামীর অঙ্গ থেকে সৃষ্ট নয়।
অন্য আরেকটি আয়াত দেখি। সেটি সূরা রুমের ২১ নম্বর আয়াত। সেখানে বলা হয়েছে- ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতি থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করো এবং তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। অবশ্যই যারা চিন্তাভাবনা করে তাদের জন্য এর মধ্যে বহু নিদর্শন রয়েছে।’

অনুরূপভাবে সূরা নাহলের ৭২ নম্বর আয়াতে এসেছে- ‘আর আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জোড়া থেকে তোমাদের জন্য নাতিপুতি সৃষ্টি করেছেন ও উত্তম জীবিকা দান করেছেন। তবুও কি তারা মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নিয়ামতগুলো অস্বীকার করবে?’

আয়াত দু’টিতে বলা- ‘তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রী বা জোড়া সৃষ্টি করা’ বলতে এটি বোঝানো হয়নি যে, স্ত্রীদেরকে তার সঙ্গীদের মধ্য থেকে (হাড় থেকে) সৃষ্টি করা হয়েছে; বরং বুঝানো হয়েছে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে দু’টি ভাগে সৃষ্টি করেছেন। আর এই বৃহত্তর জাতি থেকেই তার সঙ্গীদেরকে বাছাই করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। সঙ্গিনীদেরকে হাড় থেকে সৃষ্টি করার ব্যাপারে কোনো কিছু বলা হয়নি।

অন্য দিকে সূরা জুমারের ৬ নম্বর আয়াতের প্রথমাংশে বলা হয়েছে- ‘তিনি তোমাদের একটি প্রাণী থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার জোড়াও সৃষ্টি করেছেন’।
আয়াতটি সূরা নিসার প্রথম আয়াতের মতোই প্রায়। এখানেও বলা হয়েছে- হজরত আদম থেকেই সবার সৃষ্টির সূচনা। আর তাঁর থেকেই আকৃতি দেয়া হয়েছে তাঁর বিবি হজরত হাওয়া আ:-কে।
চলুন, এবার কতগুলো হাদিস নিয়ে আলোচনা করি-

বুখারি ও মুসলিম শরিফের যথাক্রমে ৩৩৩১ ও ১৪৮৬ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে- ‘তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও, কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঁজরের মধ্যে উপরের হাড় সবচেয়ে বেশি বাঁকা। যদি তা সোজা করতে চাও- ভেঙে ফেলবে, ছেড়ে দিলেও তার বক্রতা যাবে না। অতএব নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।’
এই হাদিসে কয়েকটি বিষয় লুকায়িত- প্রথমত, মনে হতে পারে এই হাদিস দিয়ে এটি প্রমাণ করা যায়, স্ত্রীকে সত্যিই তার স্বামীর বাম পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি করা হয়েছে! কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, ‘নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ কথার মধ্যে কার বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে তা উল্লেখ নেই! তার মানে, স্বামীর বাম পাঁজরের হাড় থেকে যে স্ত্রী সৃষ্ট তা বলা যুক্তিসঙ্গত হবে না।

দ্বিতীয়ত, হাদিসের পরের অংশ পড়ে এটি বোঝা যায়, কথাটি কেবলই রূপক অর্থে বলা হয়েছে। নারীদের ব্যাপারে পুরুষদের কল্যাণকামী হওয়ার জন্য নারীদের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এটি সর্বজনস্বীকৃত যে, স্বভাব ও মন-মানসিকতার দিক দিয়ে নারীরা পুরুষদের থেকে শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মতোই কিছুটা আলাদা। এটি নারীদের জন্য দোষের নয়; বরং নারীদের সৌন্দর্য। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে একাধিক জায়গায় তাদের এই স্বভাবকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
ওই হাদিসটিতেও নারীদের এই স্বভাবকে সমর্থন জানানো হয়েছে। মূলত, নারীদের প্রতি পুরুষের কল্যাণকামী ও সদাচরণের মনোভাব আনয়নের জন্যই ওই হাদিসের অবতারণা।

উপরোক্ত হাদিসটিকে অন্য আরেকটি হাদিস দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। হাদিসটি বুখারি শরিফের ৫১৮৪ নম্বর সিরিয়ালে বর্ণিত আছে- সেখানে ইরশাদ হয়েছে, ‘নারীরা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের ন্যায়। যদি একেবারে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙে যাবে। সুতরাং, যদি তোমরা তাদের থেকে উপকার লাভ করতে চাও, তাহলে ওই বাঁকা অবস্থাতেই লাভ করতে হবে।’
এখানে কিন্তু স্পষ্টভাবে বলা আছে, ‘নারীরা হচ্ছে পাঁজরের হাড়ের ন্যায়।’ অর্থাৎ, পাঁজরের হাড়ের সাথে নারীদের সাদৃশ্য কেবলই রূপকার্থে।

সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে, ‘নারীকে (স্ত্রী) পুরুষের (স্বামীর) বাম পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে’ তত্ত্বটি কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতে স্পষ্টত অবান্তর ও অযৌক্তিক।

লেখক : আরবি সাহিত্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ