দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা। বিগত ৯ বছরেও এ সড়কের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। ফলে ভোগান্তি এ জনপদের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।
এ এলাকার পর্যটকদের একমাত্র যাতায়াতের পথ বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ সড়ক দিয়ে পর্যটকরা সাগরকন্যা কুয়াকাটায় বেড়াতে আসেন।
উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় পর্যটকরা এখন কুয়াকাটামুখী হচ্ছেন। তবে তারা কুয়াকাটার প্রবেশমুখে এসে খানাখন্দে ভরা ১১ কিলোমিটারের ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দেখে অবাক হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাখিমারা থেকে মহিপুর পর্যন্ত সড়কের বেশির ভাগ স্থানের পিচ উঠে গেছে। বের হয়ে আছে ইট-বালু-খোয়া। কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে এমন অসংখ্য গর্ত।
যার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় অনেক দুর্ঘটনা। বৃষ্টিতে এসব গর্তে পানি জমে সড়কের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। সড়ক বিভাগ পাখিমারা বাজার এলাকা এবং আলীপুর থ্রি পয়েন্ট এলাকার গর্তে ইটের খোয়া ফেলে ভরাট করে সড়কটি সচল রাখার চেষ্টা করছে।
জানা গেছে, মামলা জটিলতায় দীর্ঘ এক যুগেও হয়নি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ।
২০০৯-২০১৪ অর্থবছরে কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা বাজার থেকে আলীপুর মৎস্যবন্দরের শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করে খুলনার দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ২০ কোটি টাকা। কাজটি মানসম্মত না হওয়ায় তখন ঠিকাদারের বিল আটকে দেয় পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দুটি দল সরেজমিনে তদন্তও করে। তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকেও কাজের গুণগত মান ভালো হয়নি বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
নিম্নমানের কাজের কারণে তখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮ কোটি টাকার বিল আটকে দেয়। তবে এ কাজ বাবদ ১২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দি রূপসা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম চূড়ান্ত বিল দাবি করে ২০১৪ সালে আদালতে মামলা করেন।
পরে আদালত ১১ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন। যার ফলে গত ৯ বছর ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকে পাখিমারা বাজার থেকে শেখ রাসেল সেতু পর্যন্ত সড়কটি। তবে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সওজ কর্তৃপক্ষ সড়কের এ অংশে জরুরি মেরামত করে সচল রাখার চেষ্টা করে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সংস্কার না করায় সড়কের বেশিরভাগ জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থান দেবে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে সড়কটি।
এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিকল হচ্ছে যানবাহন। তাই দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
তারা জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুই দফায় ইটের খোয়া ফেলে গর্তগুলো ভরাট করলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার আগের মতো হয়ে গেছে। আগের চেয়ে এখন আরও খারাপ অবস্থা হয়েছে। পানি জমে সড়ক চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। আমরা এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চাই।
কুয়াকাটা মৎস্য আড়তদার ব্যবসায়ী আবদুর রহিম খান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম মাছের মোকাম মহিপুর, আলীপুর ও কুয়াকাটা। মৌসুমের সময় প্রতিদিন এখান থেকে লাখ লাখ টাকার ইলিশসহ নানা ধরনের মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হয়।
কোনো কোনো সময় মাছবোঝাই ট্রাক, পিকআপ বা লরির চাকা গর্তে পড়ে আটকে যায়। এতে সময় বেশি লাগছে, খরচও বাড়ছে। এ রাস্তা স্থায়ী সংস্কার করা খুব জরুরি।
পটুয়াখালী সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার লিমন বলেন, আদালতের আদেশে ওই রাস্তায় বড় ধরনের সংস্কার কাজ করা যায়নি। তবে উচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন। সড়কের নির্মাণ কাজের জন্য আর কোনো বাধা নেই।
এরই মধ্যে সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ১৭ কোটি টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখেছিল। রাস্তার কাজের জন্য মালামাল ইতোমধ্যে আনা হয়েছে। বৃষ্টি কমলেই সংস্কার কাজ শুর হবে।