রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ফাতেমা বেগম মলির বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীতে একাধিক ফ্ল্যাট, গাড়ি এবং ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে কয়েক বিঘা জমি রয়েছে তার। সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের লে-আউট পরিবর্তন করা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ঠিকাদার থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এই কর্মচারীসহ সংস্থাটির আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি এদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফাতেমা বেগম রাজউকের জোন-৫-এর উচ্চমান সহকারী পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের একটি টিম করেছে দুদক। নেতৃত্বে আছেন কমিশনের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস। ইতোমধ্যে দুদক কর্মকর্তারা ফাতেমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তার কাছে বিভিন্ন নথিও চাওয়া হয়েছে।
দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে ২০২০ সালে ফাতেমা বেগম মলির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ জানান এক ভুক্তভোগী। সেখানে বলা হয়, ফাতেমা বেগমের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যে রাজউকের ঠিকাদাররাও অসুস্থ। দীর্ঘদিন চাকরি করার সুবাদে ফাতেমা রাজউকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটও গড়ে তুলেছেন। রাজউকের এই সিন্ডিকেটের কাছে সেবাগ্রহীতারা জিম্মি হয়ে রয়েছেন। ঘুষ ছাড়া কোনো নথিই সেখান থেকে নড়ে না।
অভিযোগে বলা হয়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঠিকাদারদের জিম্মি করে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রাক্কলন, চুক্তিপত্র, রোড সভার কর্মপত্র, ঠিকাদারদের বিল, এমনকি প্ল্যান পাসের নথিসহ কোনো ফাইলই টাকা ছাড়া ছাড়েন না ফাতেমা বেগম। অবৈধ আয়ে তিনি রাজধানীর ঝিগাতলায় ১৫/এ, গ্রিন টাওয়ারে তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি নোহা গাড়ি কিনেছেন। ঘুষ-দুর্নীতির টাকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জে কয়েক বিঘা জমিও কিনেছেন তিনি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ফাতেমা বেগমের স্বামী আবুল ফজল রাজু ‘রাজু ইন্টারন্যাশনাল’ এবং ‘রাজু প্রপার্টিজ অ্যান্ড ডেভেলপারস’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার বিরুদ্ধেও দলীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে টেন্ডার বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবুল ফজল রাজু আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক পল্লী উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক।
এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রাজউকের কয়েক কর্মীকেও একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘অনুসন্ধান চলছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে ফাতেমা বেগম মলির মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। এরপর অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও সাড়া দেননি।