ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

হিমশীতল পানিতে পাথরশ্রমিকদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৯:২৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৭৭ বার পড়া হয়েছে

ভোরের কনকনে শীত। অসহনীয় ঠাণ্ডা। বইছে হিমেল হাওয়া। গত সাত দিন ধরে পঞ্চগড়ে গড়ে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতি দিন পাথর শ্রমিকরা মহানন্দা নদীর ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলে বাঁচার লড়াই করছেন। তুলছেন নুড়ি পাথর। জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রচণ্ড শীতে নদী থেকে নুড়ি পাথর তুলতে হচ্ছে। সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণে সকাল-সন্ধ্যা বরফশীতল পানিতে ডুবে তারা পাথর তোলেন। জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে নামেন নদীতে। সারা দিনে তোলা পাথর সন্ধ্যায় মহাজনের কাছে বিক্রি করেন, যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চলে। এই চিত্র সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা মহানন্দা নদীর।

তেঁতুলিয়া উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। তার প্রায় অর্ধেকই পাথর শ্রমিক। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত নদী মহানন্দা। এ নদী হাজার হাজার পাথর শ্রমিকের জীবিকা অর্জনের বিশাল ভাণ্ডার। প্রতিদিন লাখ লাখ সিএফটি নুড়ি পাথর তোলা হয়। পাথর তোলার আগে শ্রমিকরা হিমশীতল পানিতে হাওয়ায় ফুলানো ট্রাকের টিউব, লোহার জাকলা, চালুনি ও রড নিয়ে নদীতে নামেন। বিরতিহীনভাবে পাথর তোলেন। তারপর হাওয়ায় ভাসানো টিউবের ঢাকিতে করে তোলা পাথর নদীর কিনারে জমা করেন। সন্ধ্যা বেলা পাথরের মহাজনের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিজন শ্রমিক সারা দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন করেন, যা দিয়ে তাদের সংসার চলে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সরদার পাড়া, রনচণ্ডি, বারঘরিয়া, তীরনই, খয়খেট পাড়া, বাংলাবান্ধা, সিপাই পাড়া, দর্জি পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে পাথর শ্রমিকদের সাথে কথা হয়। পাথর শ্রমিকরা বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিক মহানন্দা নদীর বুকে পাথরের মধ্যে ব্যবস্থা করে রেখেছেন। করোনার পর থেকে তেঁতুলিয়ার অনেক জায়গায় পাথর তোলা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই মহানন্দা নদীতে পাথর তুলে শ্রমিকরা কোনো রকম ডাল ভাত খেয়ে জীবন পার করছেন। যত ঠাণ্ডাই পড়–ক, পাথর না তুললে সংসারের খরচ আসবে কোথা থেকে? পরিবার চালাব কিভাবে? পাথর শ্রমিক তাহেরুল জানান, তার পরিবারের সদস্য সাতজন। পরিবারের সব সদস্যের প্রয়োজনীয় খরচ তাকে বহন করতে হয়। তাই ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলতে হয়। আরো দুই শ্রমিক জহিরুল ও হাবিব বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলি, তবু অসুখ বিসুখ হয় না। সব আল্লাহর রহমত। শ্রমিক রহিম বলেন, জ¦র সর্দি হয়। তবে পাথর না তুলে উপায় নেই।

পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা বসে নেই। নদীর তীরে শত শত নারী শ্রমিক পাথর নেটিং, শোটিং ও ক্রাশিংয়ের কাজ করছেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, শীত মৌসুমে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি তাপমাত্র বিরাজ করছে। তবু পাথর শ্রমিকরা কনকনে ঠাণ্ডা মোকাবেলা করে মহানন্দা নদীতে পাথর তুলছেন জীবন ও জীবিকার জন্য। তাদের শীতবস্ত্রের অভাব। সরকার তাদেরকে যৎসামান্য সহযোগিতার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

হিমশীতল পানিতে পাথরশ্রমিকদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম

আপডেট সময় ০৯:২৮:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

ভোরের কনকনে শীত। অসহনীয় ঠাণ্ডা। বইছে হিমেল হাওয়া। গত সাত দিন ধরে পঞ্চগড়ে গড়ে ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতি দিন পাথর শ্রমিকরা মহানন্দা নদীর ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলে বাঁচার লড়াই করছেন। তুলছেন নুড়ি পাথর। জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রচণ্ড শীতে নদী থেকে নুড়ি পাথর তুলতে হচ্ছে। সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণে সকাল-সন্ধ্যা বরফশীতল পানিতে ডুবে তারা পাথর তোলেন। জীবিকার তাগিদে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে নামেন নদীতে। সারা দিনে তোলা পাথর সন্ধ্যায় মহাজনের কাছে বিক্রি করেন, যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চলে। এই চিত্র সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার সীমান্ত ঘেঁষা মহানন্দা নদীর।

তেঁতুলিয়া উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। তার প্রায় অর্ধেকই পাথর শ্রমিক। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত নদী মহানন্দা। এ নদী হাজার হাজার পাথর শ্রমিকের জীবিকা অর্জনের বিশাল ভাণ্ডার। প্রতিদিন লাখ লাখ সিএফটি নুড়ি পাথর তোলা হয়। পাথর তোলার আগে শ্রমিকরা হিমশীতল পানিতে হাওয়ায় ফুলানো ট্রাকের টিউব, লোহার জাকলা, চালুনি ও রড নিয়ে নদীতে নামেন। বিরতিহীনভাবে পাথর তোলেন। তারপর হাওয়ায় ভাসানো টিউবের ঢাকিতে করে তোলা পাথর নদীর কিনারে জমা করেন। সন্ধ্যা বেলা পাথরের মহাজনের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিজন শ্রমিক সারা দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা উপার্জন করেন, যা দিয়ে তাদের সংসার চলে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সরদার পাড়া, রনচণ্ডি, বারঘরিয়া, তীরনই, খয়খেট পাড়া, বাংলাবান্ধা, সিপাই পাড়া, দর্জি পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে পাথর শ্রমিকদের সাথে কথা হয়। পাথর শ্রমিকরা বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিক মহানন্দা নদীর বুকে পাথরের মধ্যে ব্যবস্থা করে রেখেছেন। করোনার পর থেকে তেঁতুলিয়ার অনেক জায়গায় পাথর তোলা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই মহানন্দা নদীতে পাথর তুলে শ্রমিকরা কোনো রকম ডাল ভাত খেয়ে জীবন পার করছেন। যত ঠাণ্ডাই পড়–ক, পাথর না তুললে সংসারের খরচ আসবে কোথা থেকে? পরিবার চালাব কিভাবে? পাথর শ্রমিক তাহেরুল জানান, তার পরিবারের সদস্য সাতজন। পরিবারের সব সদস্যের প্রয়োজনীয় খরচ তাকে বহন করতে হয়। তাই ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলতে হয়। আরো দুই শ্রমিক জহিরুল ও হাবিব বলেন, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পানিতে পাথর তুলি, তবু অসুখ বিসুখ হয় না। সব আল্লাহর রহমত। শ্রমিক রহিম বলেন, জ¦র সর্দি হয়। তবে পাথর না তুলে উপায় নেই।

পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা বসে নেই। নদীর তীরে শত শত নারী শ্রমিক পাথর নেটিং, শোটিং ও ক্রাশিংয়ের কাজ করছেন। তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান, শীত মৌসুমে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি তাপমাত্র বিরাজ করছে। তবু পাথর শ্রমিকরা কনকনে ঠাণ্ডা মোকাবেলা করে মহানন্দা নদীতে পাথর তুলছেন জীবন ও জীবিকার জন্য। তাদের শীতবস্ত্রের অভাব। সরকার তাদেরকে যৎসামান্য সহযোগিতার চেষ্টা করে যাচ্ছে।