ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষের প্রতিযোগিতা

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:২১:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১১২৩ বার পড়া হয়েছে

বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের প্রতিযোগিতা চলছে। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক এবং অন্যদিকে খালগুলো হারাচ্ছে নাব্যতা। সম্প্রতি সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্ণকাঠী খাল, চরকারঞ্জীর ঘোপের হাট খাল, কড়াপুর এলাকার রায়পাশা কড়াপুর খাল এবং সর্বশেষ উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ কুড়লিয়া গ্রামে সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ বা স্থাপনা তৈরির চেষ্টা দেখা গেছে।

প্রশাসন এ বিষয়ে বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও থামছে না খাল দখল প্রবণতা। স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের দাবী, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজনে বা আশ্রায়ন প্রকল্পের নামে প্রশাসন নিজেই যখন খাল ভরাট করে তখন এ বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ শক্তিশালী বা গ্রহণযোগ্য হবেনা এটাই স্বাভাবিক। এদিকে বরিশালের উজিরপুরের কুড়লিয়া গ্রামে প্রভাবশালী মহলের খালের ভিতর বাঁধ তৈরির চেষ্টায় গ্রামবাসী বাধা দেওয়ায় তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দারা কৃষি কাজের জন্য জরুরী ভিত্তিতে সরকারি খালটি রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভয়ভীতি দক্ষিণ কুড়লিয়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, সেনের খাল নামে পরিচিত সরকারি খালটি শত বছর ধরে জনসাধারণের পণ্য পরিবহন, কৃষি কাজের জন্য পানি সেচসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের গৃহকর্মের প্রয়োজন মেটায়। সম্প্রতি জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটিতে বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় পার্শ্ববর্তী হারতা ইউনিয়নের কিছু প্রভাবশালী যুবক।

তারা খালে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের বানানোর চেষ্টা করছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। কয়েকদিন আগে খালের মাঝ বরাবর বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে গ্রামবাসী এতে বাঁধা দেয়। এ সময় ওই প্রভাবশালীদের ভাড়াটে লোকজন দেশি ধারালো অস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীদের তাড়া করে। খালে বাঁধ দিতে না পারায় এখন গ্রামবাসীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর পক্ষে সুনীল বাড়ৈ বাদী হয়ে উজিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঊর্মিলা বাড়ৈ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, কুড়লিয়া গ্রামের কিছু বাসিন্দা এ ব্যাপারে তার কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ পেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, খাল সরকারী এটা দেখভাল করার দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) কর্তৃপক্ষের। আমরা তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা ব্যাপারটি না দেখলে আমাদের কিছু করার নেই।

একই অভিযোগ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। এখানের আজিমপুর গ্রামে পাউবোর খালে বাঁধ নির্মাণ করে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

এব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, সদর উপজেলার কর্ণকাঠী ও কড়াপুরে খাল ভরাটের অভিযোগ পেয়ে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উজিরপুর ও মেহেন্দিগঞ্জের বিষয়টিও সেখানে দায়িত্বরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি।

সামাজিক আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, প্রশাসন নিজেরাই যখন বিভিন্ন স্থানে খালপাড়ে বা জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করেন সেখানে তাদের পক্ষে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তিনি আরো বলেন, এখানে জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল জেলায় খাল ও নদী দখলদার ২১৪৮ জন।

এর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় ২৯৩ জনের মধ্যে কীর্তনখোলা নদী দখলকারীদের সংখ্যাই ১২৩ জন। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলকারী আগৈলঝাড়া উপজেলায়। ওই তালিকায় উপজেলায় ১ হাজার ৮২ জন দখলকারীর নাম পাওয়া যায়। গৌরনদী উপজেলার অবৈধ দখলকারীদের সংখ্যা ২৭৩ জন। বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৮৬ দখলদার চিহিৃত করা হয়েছে।

মুলাদী উপজেলার ১০৯ জন দখলদার রয়েছে। বানারীপাড়া উপজেলার মোট দখলদারদের সংখ্যা ৭৩। উজিরপুর উপজেলার দখলদারদের সংখ্যা ৫৯ জন। মেহেন্দিগঞ্জে অবৈধ দখলকারীদের সংখ্যা ৭৩ জন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

বরিশালের বিভিন্ন উপজেলায় খালে বাঁধ দিয়ে চলছে মাছ চাষের প্রতিযোগিতা

আপডেট সময় ১১:২১:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের প্রতিযোগিতা চলছে। এতে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক এবং অন্যদিকে খালগুলো হারাচ্ছে নাব্যতা। সম্প্রতি সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্ণকাঠী খাল, চরকারঞ্জীর ঘোপের হাট খাল, কড়াপুর এলাকার রায়পাশা কড়াপুর খাল এবং সর্বশেষ উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের দক্ষিণ কুড়লিয়া গ্রামে সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ বা স্থাপনা তৈরির চেষ্টা দেখা গেছে।

প্রশাসন এ বিষয়ে বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও থামছে না খাল দখল প্রবণতা। স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের দাবী, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজনে বা আশ্রায়ন প্রকল্পের নামে প্রশাসন নিজেই যখন খাল ভরাট করে তখন এ বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ শক্তিশালী বা গ্রহণযোগ্য হবেনা এটাই স্বাভাবিক। এদিকে বরিশালের উজিরপুরের কুড়লিয়া গ্রামে প্রভাবশালী মহলের খালের ভিতর বাঁধ তৈরির চেষ্টায় গ্রামবাসী বাধা দেওয়ায় তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দারা কৃষি কাজের জন্য জরুরী ভিত্তিতে সরকারি খালটি রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভয়ভীতি দক্ষিণ কুড়লিয়া গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, সেনের খাল নামে পরিচিত সরকারি খালটি শত বছর ধরে জনসাধারণের পণ্য পরিবহন, কৃষি কাজের জন্য পানি সেচসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের গৃহকর্মের প্রয়োজন মেটায়। সম্প্রতি জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটিতে বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নেয় পার্শ্ববর্তী হারতা ইউনিয়নের কিছু প্রভাবশালী যুবক।

তারা খালে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের বানানোর চেষ্টা করছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। কয়েকদিন আগে খালের মাঝ বরাবর বাঁধ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে গ্রামবাসী এতে বাঁধা দেয়। এ সময় ওই প্রভাবশালীদের ভাড়াটে লোকজন দেশি ধারালো অস্ত্র নিয়ে গ্রামবাসীদের তাড়া করে। খালে বাঁধ দিতে না পারায় এখন গ্রামবাসীকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গ্রামবাসীর পক্ষে সুনীল বাড়ৈ বাদী হয়ে উজিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

জল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ঊর্মিলা বাড়ৈ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, কুড়লিয়া গ্রামের কিছু বাসিন্দা এ ব্যাপারে তার কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ পেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম মিরন বলেন, খাল সরকারী এটা দেখভাল করার দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) কর্তৃপক্ষের। আমরা তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তারা ব্যাপারটি না দেখলে আমাদের কিছু করার নেই।

একই অভিযোগ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। এখানের আজিমপুর গ্রামে পাউবোর খালে বাঁধ নির্মাণ করে প্রভাবশালীরা মাছ চাষের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

এব্যাপারে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, সদর উপজেলার কর্ণকাঠী ও কড়াপুরে খাল ভরাটের অভিযোগ পেয়ে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উজিরপুর ও মেহেন্দিগঞ্জের বিষয়টিও সেখানে দায়িত্বরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি।

সামাজিক আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, প্রশাসন নিজেরাই যখন বিভিন্ন স্থানে খালপাড়ে বা জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করেন সেখানে তাদের পক্ষে প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তিনি আরো বলেন, এখানে জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী বরিশাল জেলায় খাল ও নদী দখলদার ২১৪৮ জন।

এর মধ্যে বরিশাল সদর উপজেলায় ২৯৩ জনের মধ্যে কীর্তনখোলা নদী দখলকারীদের সংখ্যাই ১২৩ জন। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলকারী আগৈলঝাড়া উপজেলায়। ওই তালিকায় উপজেলায় ১ হাজার ৮২ জন দখলকারীর নাম পাওয়া যায়। গৌরনদী উপজেলার অবৈধ দখলকারীদের সংখ্যা ২৭৩ জন। বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১৮৬ দখলদার চিহিৃত করা হয়েছে।

মুলাদী উপজেলার ১০৯ জন দখলদার রয়েছে। বানারীপাড়া উপজেলার মোট দখলদারদের সংখ্যা ৭৩। উজিরপুর উপজেলার দখলদারদের সংখ্যা ৫৯ জন। মেহেন্দিগঞ্জে অবৈধ দখলকারীদের সংখ্যা ৭৩ জন।