ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পটুয়াখালীতে পাঁচ শ্রমিকের মাথায় ঢালা হলো ১০১ কলস পানি

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:২৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৬৮ বার পড়া হয়েছে

পটুয়াখালীর গলাচিপায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে রাইস মিলের পাঁচ শ্রমিককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের পর কথিত পিরের পড়ানো ডিম সিদ্ধ ও পিরের নির্দেশনা অনুযায়ী মাথায় ১০১ কলস পানি ঢেলে ওই শ্রমিকদের গোসল করানো হয়েছে। এর আগে পিরের পড়ানো রুটি ওই শ্রমিকদের খাওয়ানো হয়।

রোববার (১ জানুয়ারি) বিকালে গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই শ্রমিকদের ৪ জনকে গলাচিপা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আশঙ্কাজনক হওয়ায় একজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার শিকার শ্রমিকরা হলেন- রহিম খাঁ (৬৫), বেল্লাল বিশ্বাস (৩০), আবু তালেব গাজী (৩৫), আলাউদ্দিন সরদার (৩৫) ও মোস্তফা (৫৫)। তারা সবাই গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের রাইস মিলের শ্রমিক।

নির্যাতনের শিকার সরদার রহিম খাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের বলেন, কথিত পিরের কাছ থেকে রুটি পড়া এনে চোর সন্দেহে তাকে জোর করে খাওয়ায় স্থানীয় সাবেক কমিশনার বশার। একই সঙ্গে অন্য শ্রমিকদেরও পড়ানো রুটি খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরে তিনিসহ শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন-মারধর। এ সময় তারা চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরের ঘটনা তারা আর বলতে পারেন না। স্থানীয় শত শত মানুষের সামনেই চলে এই কর্মযজ্ঞ।

রহিম খাঁ আরও বলেন, শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের ৭৫ হাজার টাকা তার সঙ্গে ছিল। ঘটনার পর থেকে সেই টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা নির্দোষ, নিরীহ শ্রমিক বিনাদোষে এমন নির্যাতন করল। এখন আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুদ্দুস প্যাদার গোয়াল থেকে পাঁচটি গরু চুরি হয়েছে। সেই গরু চুরির সন্দেহে রোববার ওই শ্রমিকদের ধরে পিরের পড়ানো রুটি খাওয়ানো হয়। পরে পিরের নির্দেশ অনুযায়ী মাথায় ১০১ কলস পানি ঢেলে গোসল করানো হয়। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই শ্রমিকদের গলাচিপা থানা পুলিশের সহায়তায় উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আবদুল মমিন বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রাথমিক লক্ষণ দেখে মনে হয়েছে শ্রমিকদের যে রুটি খাওয়ানো হয়েছে তাতে ফুট পয়জনিং ছিল। এছাড়া ওই অবস্থায় তাদের শরীরে একাধিকবার পানি দেয়ায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি জানার পর পুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

পটুয়াখালীতে পাঁচ শ্রমিকের মাথায় ঢালা হলো ১০১ কলস পানি

আপডেট সময় ১১:২৫:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ জানুয়ারী ২০২৩

পটুয়াখালীর গলাচিপায় গরু চুরির অপবাদ দিয়ে রাইস মিলের পাঁচ শ্রমিককে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতনের পর কথিত পিরের পড়ানো ডিম সিদ্ধ ও পিরের নির্দেশনা অনুযায়ী মাথায় ১০১ কলস পানি ঢেলে ওই শ্রমিকদের গোসল করানো হয়েছে। এর আগে পিরের পড়ানো রুটি ওই শ্রমিকদের খাওয়ানো হয়।

রোববার (১ জানুয়ারি) বিকালে গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই শ্রমিকদের ৪ জনকে গলাচিপা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আশঙ্কাজনক হওয়ায় একজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনার শিকার শ্রমিকরা হলেন- রহিম খাঁ (৬৫), বেল্লাল বিশ্বাস (৩০), আবু তালেব গাজী (৩৫), আলাউদ্দিন সরদার (৩৫) ও মোস্তফা (৫৫)। তারা সবাই গলাচিপা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের রাইস মিলের শ্রমিক।

নির্যাতনের শিকার সরদার রহিম খাঁ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিকদের বলেন, কথিত পিরের কাছ থেকে রুটি পড়া এনে চোর সন্দেহে তাকে জোর করে খাওয়ায় স্থানীয় সাবেক কমিশনার বশার। একই সঙ্গে অন্য শ্রমিকদেরও পড়ানো রুটি খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরে তিনিসহ শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন-মারধর। এ সময় তারা চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরের ঘটনা তারা আর বলতে পারেন না। স্থানীয় শত শত মানুষের সামনেই চলে এই কর্মযজ্ঞ।

রহিম খাঁ আরও বলেন, শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের ৭৫ হাজার টাকা তার সঙ্গে ছিল। ঘটনার পর থেকে সেই টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা নির্দোষ, নিরীহ শ্রমিক বিনাদোষে এমন নির্যাতন করল। এখন আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুদ্দুস প্যাদার গোয়াল থেকে পাঁচটি গরু চুরি হয়েছে। সেই গরু চুরির সন্দেহে রোববার ওই শ্রমিকদের ধরে পিরের পড়ানো রুটি খাওয়ানো হয়। পরে পিরের নির্দেশ অনুযায়ী মাথায় ১০১ কলস পানি ঢেলে গোসল করানো হয়। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই শ্রমিকদের গলাচিপা থানা পুলিশের সহায়তায় উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আবদুল মমিন বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার পর প্রাথমিক লক্ষণ দেখে মনে হয়েছে শ্রমিকদের যে রুটি খাওয়ানো হয়েছে তাতে ফুট পয়জনিং ছিল। এছাড়া ওই অবস্থায় তাদের শরীরে একাধিকবার পানি দেয়ায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় অসুস্থ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি জানার পর পুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ভিকটিমের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।