ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

কুয়াকাটায় পলিথিন-প্লাস্টিকে সয়লাব, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৯:১১:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৪৮ বার পড়া হয়েছে

ইটপাথরের পরিবেশ থেকে নিজেকে একটু প্রশান্তি দিতে সমুদ্র ও পাহাড় বেষ্টিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সুন্দর প্রকৃতি পরিবেশের খোঁজে ভ্রমণ করেন পর্যটকরা। তেমনই একটি পর্যটন কেন্দ্র বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি কুয়াকাটা।

তবে এ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এখন পলিথিন আর প্লাস্টিকে সয়লাব। যত্রতত্র এ প্লাস্টিকে যে শুধু সমুদ্র সৈকতের পরিবেশই নষ্ট হচ্ছে না সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র এলাকার জীববৈচিত্র্যও রয়েছে হুমকির মুখে।

১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতসহ উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রবেষ্টিত চরগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পয়েন্টে পানি, ড্রিংকসের বোতল, চিপসসহ নানা অপচনশীল পলিথিন ও নানা পাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেগুলোর কারণে প্রতিদিন ঘুরতে আসা হাজারো পর্যটকদের অভিযোগ ও সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য নিয়ে শঙ্কায় পরিবেশকর্মীরা।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী, ব্যবসায়ীরা মাঝে পরিচ্ছন্নতা অভিযান করলেও স্থায়ী কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকায় দিনদিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে এ সৈকত।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা আশরাফুজ্জামান নামের একজন পর্যটক আক্ষেপ করে বলেন, কুয়াকাটা এতো সুন্দর একটি জায়গা সবকিছুই বেশ সুন্দর তবে কুয়াকাটা সৈকতে অনেক প্লাস্টিক বর্জ্য যেগুলো আমাদের খুব বিরক্ত করে। অবশ্যই এগুলো পরিষ্কার না রাখলে কুয়াকাটায় আমরা স্বাচ্ছন্দ্যভাবে ভ্রমণ করতে পারছি না।

ঢাকা থেকে আসা সাবানা জামান নামের অন্য এক পর্যটক বলেন, আমরা শহর থেকে এখানে একটু সুন্দর পরিবেশ, নিরবচ্ছিন্ন সৌন্দর্য, প্লাস্টিকমুক্ত সৈকতের খোঁজে এখানে আসি কিন্তু এসে দেখি বিপরীত চিত্র। তবে এত সুন্দর একটি জায়গায় এ সমস্যাগুলোর জন্য স্থানীয়দের আরও সচেতন হওয়া দরকার।

কুয়াকাটা সৈকতে স্ট্রিটফুটের বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে তাদের ব্যবহৃত পলিথিন সংরক্ষিত করে ডাস্টবিনে ফেললেও অনেক ব্যবসায়ী, পর্যটকদের অবহেলায় এ বেহাল দশা সৈকতের এমনটাই মনে করে করেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার।

তিনি আরও বলেন, সৈকতকে পরিষ্কার রাখার জন্য আমরা সৈকতে থাকা প্রায় ১০-১২ টি পেশার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের মাধ্যমে ট্রেনিং করেছি এবং গতকাল প্রায় দুইশো ময়লা রাখার বিন বিভিন্ন পয়েন্টে দিয়েছে টোয়াকের উদ্যোগে। তবে সরকার যদি আরও একটু খেয়াল করে সৈকতের দিকে তাহলে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে।

কলাপাড়া উপজেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় বছরে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। আর কুয়াকাটা সৈকত বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠায় অতিরিক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্য জমায় সমুদ্রে থাকা প্রাণী হুমকিতে রয়েছে। যে কারণে প্রতি বছর কয়েকশো তিমি, ডলফিন, কচ্ছপ, রাজ কাকড়াসহ নানা জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়। এগুলোকে বন্ধ না করা গেলে আমরা আরও হুমকিতে পরতে পারি।

টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, সৈকতে যেন ময়লা না ফেলা হয় সে জন্য আমরা বার-বার মাইকিং করে সতর্ক করি সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহে একবার আমাদের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান করা হয়। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যদি সবসময় লোক নিয়োজিত করে থাকে পরিষ্কারের জন্য তাহলে এটার সমাধান হবে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা সৈকতকে পরিষ্কার রাখার জন্য পৌরসভা ও আমি সার্বিকভাবে কাজ করছি। আমাদের কয়েকটি টিম সকাল-বিকেল ময়লা পরিষ্কার করে কিন্তু কিছু অসচেতন পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কারণে এ সমস্যাটা মাঝে মাঝে হয়।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সংকর চন্দ্র বৌদ্ধ বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে যত্রতত্র ময়লাগুলোকে পরিষ্কারর এবং সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে আমরা শিগগির ব্যবস্থা নেবো।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

কুয়াকাটায় পলিথিন-প্লাস্টিকে সয়লাব, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

আপডেট সময় ০৯:১১:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

ইটপাথরের পরিবেশ থেকে নিজেকে একটু প্রশান্তি দিতে সমুদ্র ও পাহাড় বেষ্টিত পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে সুন্দর প্রকৃতি পরিবেশের খোঁজে ভ্রমণ করেন পর্যটকরা। তেমনই একটি পর্যটন কেন্দ্র বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলাভূমি কুয়াকাটা।

তবে এ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এখন পলিথিন আর প্লাস্টিকে সয়লাব। যত্রতত্র এ প্লাস্টিকে যে শুধু সমুদ্র সৈকতের পরিবেশই নষ্ট হচ্ছে না সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র এলাকার জীববৈচিত্র্যও রয়েছে হুমকির মুখে।

১৮ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতসহ উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রবেষ্টিত চরগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পয়েন্টে পানি, ড্রিংকসের বোতল, চিপসসহ নানা অপচনশীল পলিথিন ও নানা পাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেগুলোর কারণে প্রতিদিন ঘুরতে আসা হাজারো পর্যটকদের অভিযোগ ও সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য নিয়ে শঙ্কায় পরিবেশকর্মীরা।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী, ব্যবসায়ীরা মাঝে পরিচ্ছন্নতা অভিযান করলেও স্থায়ী কোনো পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকায় দিনদিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে এ সৈকত।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা আশরাফুজ্জামান নামের একজন পর্যটক আক্ষেপ করে বলেন, কুয়াকাটা এতো সুন্দর একটি জায়গা সবকিছুই বেশ সুন্দর তবে কুয়াকাটা সৈকতে অনেক প্লাস্টিক বর্জ্য যেগুলো আমাদের খুব বিরক্ত করে। অবশ্যই এগুলো পরিষ্কার না রাখলে কুয়াকাটায় আমরা স্বাচ্ছন্দ্যভাবে ভ্রমণ করতে পারছি না।

ঢাকা থেকে আসা সাবানা জামান নামের অন্য এক পর্যটক বলেন, আমরা শহর থেকে এখানে একটু সুন্দর পরিবেশ, নিরবচ্ছিন্ন সৌন্দর্য, প্লাস্টিকমুক্ত সৈকতের খোঁজে এখানে আসি কিন্তু এসে দেখি বিপরীত চিত্র। তবে এত সুন্দর একটি জায়গায় এ সমস্যাগুলোর জন্য স্থানীয়দের আরও সচেতন হওয়া দরকার।

কুয়াকাটা সৈকতে স্ট্রিটফুটের বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে তাদের ব্যবহৃত পলিথিন সংরক্ষিত করে ডাস্টবিনে ফেললেও অনেক ব্যবসায়ী, পর্যটকদের অবহেলায় এ বেহাল দশা সৈকতের এমনটাই মনে করে করেন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার।

তিনি আরও বলেন, সৈকতকে পরিষ্কার রাখার জন্য আমরা সৈকতে থাকা প্রায় ১০-১২ টি পেশার ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের মাধ্যমে ট্রেনিং করেছি এবং গতকাল প্রায় দুইশো ময়লা রাখার বিন বিভিন্ন পয়েন্টে দিয়েছে টোয়াকের উদ্যোগে। তবে সরকার যদি আরও একটু খেয়াল করে সৈকতের দিকে তাহলে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হবে।

কলাপাড়া উপজেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় বছরে লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। আর কুয়াকাটা সৈকত বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠায় অতিরিক্ত প্লাস্টিকের বর্জ্য জমায় সমুদ্রে থাকা প্রাণী হুমকিতে রয়েছে। যে কারণে প্রতি বছর কয়েকশো তিমি, ডলফিন, কচ্ছপ, রাজ কাকড়াসহ নানা জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়। এগুলোকে বন্ধ না করা গেলে আমরা আরও হুমকিতে পরতে পারি।

টুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোন সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক বলেন, সৈকতে যেন ময়লা না ফেলা হয় সে জন্য আমরা বার-বার মাইকিং করে সতর্ক করি সঙ্গে সঙ্গে সপ্তাহে একবার আমাদের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা অভিযান করা হয়। তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যদি সবসময় লোক নিয়োজিত করে থাকে পরিষ্কারের জন্য তাহলে এটার সমাধান হবে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা সৈকতকে পরিষ্কার রাখার জন্য পৌরসভা ও আমি সার্বিকভাবে কাজ করছি। আমাদের কয়েকটি টিম সকাল-বিকেল ময়লা পরিষ্কার করে কিন্তু কিছু অসচেতন পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কারণে এ সমস্যাটা মাঝে মাঝে হয়।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সংকর চন্দ্র বৌদ্ধ বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে যত্রতত্র ময়লাগুলোকে পরিষ্কারর এবং সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে আমরা শিগগির ব্যবস্থা নেবো।