ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে পটুয়াখালীর লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৯:১২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৭৪ বার পড়া হয়েছে

বহুল প্রত্যাশিত পটুয়াখালীর লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ অবশেষে শেষ হতে চলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে চায় সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, সেতুটি চালুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন পটুয়াখালীর চার উপজেলার কয়েকলাখ মানুষ। সেতুটি চালু হলে জেলার তিনটি উপজেলার সঙ্গে সরাসরি নিরবচ্ছিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে। পাশাপাশি জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলা মানুষও এই সেতুর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর অধিকাংশ উপজেলায় যেতে একাধিক নদী পাড়ি দিতে হয়। এতদিন লোহালিয়া নদীতে কোনো সেতু কিংবা ফেরি না থাকায় অনেকটা বাড়তি পথ ঘুরে গলাচিপা, বাউফল এবং দশমিনা উপজেলার মানুষকে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হতো। তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে এই সেতুর নির্মাণকাজ। বর্তমানে সেতুর কংক্রিট কাঠামোর কাজ শেষ করে এখন চলছে সেতুর মাঝখানে স্টিল কাঠামো নির্মাণের কাজ।

সেতুর স্টিল কাঠামো তৈরির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. শরীফ বলেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আমরা আমাদের নির্ধারিত কাজ শেষ করবো। আশা করছি, এরপর থেকেই ব্রিজের ১০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের যে স্টিল কাঠামো আছে এর নিচ দিয়ে বড় নৌযান চলাচল করতে পারবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তথ্য থেকে জান যায়, ২০১২ সালে লোহালিয়া নদীর ওপর একটি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন সেতুর হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৩৫ মিটার এবং ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৭ দশমিক ৩ মিটার। তখন ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেতুর ৫৪ শতাংশ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ সেতুটির নিচ থেকে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এমন আপত্তি তুলে ব্রিজের নির্মাণকাজে আপত্তি জানায়। এর ফলে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর নির্মাণ কাজের আর অগ্রগতি হয়নি। তবে দীর্ঘ কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।

এরপর ২০১৯ সালের আগস্টে সেতুর হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৭০ মিটার এবং ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১৩ দশমিক ৫০ মিটার রেখে নতুন করে ডিজাইন করা হয়। সেসময় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও পায়রা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র নিয়ে নতুন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজ শুরু হয়। আর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। সেতুর দুইপাশে কংক্রিটের কাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলেও নদীর মাঝখানে ১০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্টিলের কাঠামোর কাজ আটকে যায়। ১০৭ মিটার দৈর্ঘ্যর স্টিল কাঠামোটি চীনের একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে। তবে স্টিলের কাঠামো স্থাপনের জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা প্রয়োজন ছিল। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আবারও আটকে যায় ব্রিজের নির্মাণ কাজ। তবে ২০২২ সালের ২৭ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথটি (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) তিনমাসের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকে পরো উদ্যমে আবারও সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করতে চায় এলজিইডি।

এদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৗশল বিভাগের নির্মাণ করা সেতুতে কোনো টোল আদায় করা হয় না। এতে করে এই সেতুতে চলাচলকারী কোনো যানবাহনকে টোল দিতে হবে না। ফলে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষিশিল্পের জন্য নতুন এক দিগন্তের সূচনা ঘটবে বলে মনে করেন জেলার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান (হাফিজ) বলেন, লোহালিয়া সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ, এই সেতুটি নির্মাণ করার ফলে গলাচিপা, দশমিনা এবং বাউফল উপজেলার মানুষ এখন সরাসরি জেলা শহরে এবং দেশের যেকোনো স্থানে যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে দীর্ঘদিনের অবহেলিত এই অঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত কৃষি ও মৎস্যজাত পণ্য সরাসরি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। যার ফলে স্থানীয়দের জীবন জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে বলে আমি মনে করি।

পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৗশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে এর ফলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে। এর পরও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে পটুয়াখালীর লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ

আপডেট সময় ০৯:১২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৩

বহুল প্রত্যাশিত পটুয়াখালীর লোহালিয়া সেতুর নির্মাণকাজ অবশেষে শেষ হতে চলেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে চায় সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, সেতুটি চালুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন পটুয়াখালীর চার উপজেলার কয়েকলাখ মানুষ। সেতুটি চালু হলে জেলার তিনটি উপজেলার সঙ্গে সরাসরি নিরবচ্ছিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপিত হবে। পাশাপাশি জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলা মানুষও এই সেতুর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর অধিকাংশ উপজেলায় যেতে একাধিক নদী পাড়ি দিতে হয়। এতদিন লোহালিয়া নদীতে কোনো সেতু কিংবা ফেরি না থাকায় অনেকটা বাড়তি পথ ঘুরে গলাচিপা, বাউফল এবং দশমিনা উপজেলার মানুষকে জেলা শহরে যাতায়াত করতে হতো। তবে আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে এই সেতুর নির্মাণকাজ। বর্তমানে সেতুর কংক্রিট কাঠামোর কাজ শেষ করে এখন চলছে সেতুর মাঝখানে স্টিল কাঠামো নির্মাণের কাজ।

সেতুর স্টিল কাঠামো তৈরির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. শরীফ বলেন, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আমরা আমাদের নির্ধারিত কাজ শেষ করবো। আশা করছি, এরপর থেকেই ব্রিজের ১০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের যে স্টিল কাঠামো আছে এর নিচ দিয়ে বড় নৌযান চলাচল করতে পারবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তথ্য থেকে জান যায়, ২০১২ সালে লোহালিয়া নদীর ওপর একটি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন সেতুর হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৩৫ মিটার এবং ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ছিল ৭ দশমিক ৩ মিটার। তখন ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেতুর ৫৪ শতাংশ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ সেতুটির নিচ থেকে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হবে এমন আপত্তি তুলে ব্রিজের নির্মাণকাজে আপত্তি জানায়। এর ফলে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর নির্মাণ কাজের আর অগ্রগতি হয়নি। তবে দীর্ঘ কয়েক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।

এরপর ২০১৯ সালের আগস্টে সেতুর হরিজেন্টাল ক্লিয়ারেন্স ৭০ মিটার এবং ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স ১৩ দশমিক ৫০ মিটার রেখে নতুন করে ডিজাইন করা হয়। সেসময় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও পায়রা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র নিয়ে নতুন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অসমাপ্ত কাজ শুরু হয়। আর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ব্রিজের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। সেতুর দুইপাশে কংক্রিটের কাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলেও নদীর মাঝখানে ১০৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্টিলের কাঠামোর কাজ আটকে যায়। ১০৭ মিটার দৈর্ঘ্যর স্টিল কাঠামোটি চীনের একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে। তবে স্টিলের কাঠামো স্থাপনের জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা প্রয়োজন ছিল। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মধ্যে জটিলতা তৈরি হওয়ায় আবারও আটকে যায় ব্রিজের নির্মাণ কাজ। তবে ২০২২ সালের ২৭ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে পটুয়াখালী-গলাচিপা নৌপথটি (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) তিনমাসের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকে পরো উদ্যমে আবারও সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ করতে চায় এলজিইডি।

এদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৗশল বিভাগের নির্মাণ করা সেতুতে কোনো টোল আদায় করা হয় না। এতে করে এই সেতুতে চলাচলকারী কোনো যানবাহনকে টোল দিতে হবে না। ফলে স্থানীয় মৎস্য ও কৃষিশিল্পের জন্য নতুন এক দিগন্তের সূচনা ঘটবে বলে মনে করেন জেলার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান (হাফিজ) বলেন, লোহালিয়া সেতুটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ, এই সেতুটি নির্মাণ করার ফলে গলাচিপা, দশমিনা এবং বাউফল উপজেলার মানুষ এখন সরাসরি জেলা শহরে এবং দেশের যেকোনো স্থানে যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে দীর্ঘদিনের অবহেলিত এই অঞ্চলের মানুষের উৎপাদিত কৃষি ও মৎস্যজাত পণ্য সরাসরি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। যার ফলে স্থানীয়দের জীবন জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে বলে আমি মনে করি।

পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৗশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লতিফ হোসেন বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারিত থাকলেও বর্তমানে যে গতিতে কাজ চলছে এর ফলে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে। এর পরও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।