ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডাব্লিউবি, পূর্বের নাম ভিজিডি) প্রকল্পের মাধ্যমে বিনা মূল্যে ৩০ কেজি করে চাল পান দুস্থ ও অসহায় নারীরা।
আর তাদের এই বরাদ্দের চার মাসের চাল বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই একত্রে দেওয়া হয় ময়মনসিংহের নান্দাইল চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে দুস্থদের জন্য বরাদ্দের চাল ইউপি চত্বরেই বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দেখা যায়, আপাদমস্তক বোরকা পরিহিত কয়েকজন নারী কার্ড নিয়ে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করেন। আবার উপকারভোগী ছাড়াও অনেকেই কার্ড হাতে নিয়ে চার বস্তা চাল উত্তোলন করে পরিষদের চত্বরেই কম মূল্যে পাইকার ও মৎস্য খামারিদের কাছে বিক্রি করেন।
এসব চাল বহনে সেখানে আগে থেকেই অটোরিকশা দাঁড়িয়ে ছিল। তাতে চেপে বিভিন্ন বাজারে চাল নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন না তদারকি কর্মকর্তা।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর নান্দাইল উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নে ২৮৯ জন হতদরিদ্র নারীকে ভিডাব্লিউ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রতি মাসে একজন কার্ডধারী উপকারভোগী ৩০ কেজি করে বিনা মূল্যে চাল বরাদ্দ পাবেন। বর্তমান বাজারে ৩০ কেজি চালের মূল্য ১৫০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে চণ্ডীপাশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি প্রকল্পের চাল বেচাকেনা হচ্ছে। পাইকাররা সরকারি বস্তার সেলাই খুলে চাল বের করে প্লাস্টিকের বস্তায় পুড়ছেন। পরে চালভর্তি বস্তাগুলো ইজিবাইকে তুলে লোক দিয়ে নিজেদের দোকানে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে ইউপি থেকে চাল বিতরণের কাজ শুরু হয়। ওই সময় থেকেই চাল বেচাকেনা শুরু হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা প্রতিবস্তা চাল ৮০০-৮৫০ টাকায় কিনে নিচ্ছেন।
একজন নারী কার্ডধারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, এসব চালের ভাতে গন্ধ হয়। খেতে পারি না। তাই এই চাল বাড়িতে না নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
বীরঘোষপালা গ্রাম থেকে চাল ক্রয় করতে এসেছেন মো. হাতেম আলী নামে এক ব্যক্তি। তার মাছের খামার আছে। উপকারভোগীরা চাল বিক্রি করে দিচ্ছেন।
তিনি চার হাজার টাকা দিয়ে পাঁচ বস্তা (১৫০ কেজি) চাল কিনেছেন। হাতেম আলী আরো জানান, বাজারে মাছের যেকোনো খাদ্য ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এখান থেকে ৩০ কেজির এক বস্তা চাল ৮০০ টাকায় ক্রয় করা যায়। দামাদামি করলে আরো কমে পাওয়া যায়।
ইউপিতে গিয়ে কোনো তদারকি কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। পরিপত্রে বলা রয়েছে, কোনো অবস্থাতেই তদারকি কর্মকতার অনুপস্থিতিতে বরাদ্দ বিতরণ করা যাবে না।
চত্বরে সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, উপকারভোগীরা চাল বিক্রি করে দিলে আমার কী করার আছে। তা ছাড়া বিষয়টি আমার নজরে পড়েনি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা রহমান বলেন,আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে চাল বিক্রির সত্যতা পেয়েছি। তবে কোনো অবস্থায়ই সরকারি বরাদ্দের চাল বিক্রি করার নিয়ম নেই। যেসব উপকারভোগী চাল বিক্রি করে দিয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করতে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।