ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

এক সপ্তাহেও উদঘাটন হয়নি রহস্য…‘ক্লু’ পায়নি পুলিশ

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৫:৩৯:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩
  • ১১৩৬ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এখনো ৪ মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি স্বজনদের মধ্যে।

উপকূলের জেলেদের মতে, নিহতরা সবাই সাগরে ডাকাতি করতে গিয়েছিল। আর বারবার ডাকাতের কবলে পড়া বিক্ষুব্ধ সাধারণ জেলেরা তাদের হত্যা করেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ ও র‍্যাব।

গত রোববার গুরা মিয়া নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার ভাসতে ভাসতে নাজিরারটেক উপকূলে চলে আসে। ওই ট্রলারের হিমঘর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে সামশুল আলম প্রকাশ ‘সামশু মাঝি’। তার মরদেহ শনাক্ত করে গ্রহণ করেছেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম। ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া মামলার বাদিও তিনি। রোকেয়া বেগমও স্বীকার করেছেন ট্রলারটি মালিক তার স্বামী।

মহেশখালীর হোয়ানক, কালার মারছাড়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, বদরখালী, পেকুয়া এলাকার বেশ কয়েকজন জেলে জানান, সামশুলের ট্রলারটি সাগরে গিয়েছিল ডাকাতি করতে। যদিও বা ট্রলারটির মাঝি মো. মুসা ওরফে মুসা জালালকে জীবিত বা মৃত এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই ট্রলারে থাকা সামশুল, মুছা, নুরুল কবির, অন্যরা ছিল সাধারণ উঠতি বয়সের ছেলে। এই তিনজনকেই টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সাগরে ডাকাতি করতে।

তারা আরও জানান, সামশুলের ট্রলারে প্রথমে গ্রেপ্তার বাইট্টা কামালের ট্রলারটি জব্দ করে। ওই ট্রলারের মাঝি মাল্লাদের বেঁধে‌ রেখে ওই ট্রলার দিয়ে তারা সাগরে ডাকাতি করতে থাকে। এরপর একটি ট্রলারের পিছনে আরেকটি ছোট ট্রলার দেখে দূর থেকে অন্য মাছ ধরা ট্রলারগুলোর সন্দেহ হয়। তখন অনেকগুলো ছটি জালের ট্রলার এক হয়ে তাদের ঘিরে ফেলে। এরপর সামশুলের ট্রলারে থাকা কয়েকজনের হাত-পা বেঁধে ভেতর প্রবেশ করিয়ে মুখ বন্ধ করে ট্রলারটি সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওসব জেলেরা আরও জানান, মূলত বারবার ডাকাতের কবলে পড়া বিক্ষুব্ধ সাধারণ ছটি জেলেরাই তাদের হত্যা করেছে।

নিহত ট্রলার মালিক সামশুল মাঝির মা সোনা খাতুন বলেন, ‘আমার বিয়াই করিম সিকদার চাইলে আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারতেন। তার সামনে আমার ছেলেকে হত্যা করলেও তিনি সামনের দিকে বোট চালিয়ে চলে যান। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

মরদেহ উদ্ধারের পর শনাক্ত হওয়া মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের শওকত আলীর দুই মাস আগে বিয়ে হওয়া নতুন স্ত্রী ইসমত আরা বলেন, ‘মাত্র দুই মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। এখনো শ্বশুর বাড়ি যাইনি। বাপের বাড়িতে ছিলাম। কথা ছিল ঈদের পর সেই আমাকে তাদের বাড়ি তুলে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমাকে ফেলে সে নিজেই চলে গেছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

এদিকে লাশ উদ্ধারের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও ঘটনার কারণ উদ্ধার করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

এ নিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি অনেক বড় ঘটনা। পুলিশ সুপার মহোদয় নিজেই ঘটনার বিষয়টি তদারকি করে সিনিয়র অফিসারদের নিয়ে প্রতিদিন নানা ঘটনা বিশ্লেষণ করে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে ৪ জনের মরদেহ। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বাকি পাঁচজনের পরিচয়।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

এক সপ্তাহেও উদঘাটন হয়নি রহস্য…‘ক্লু’ পায়নি পুলিশ

আপডেট সময় ০৫:৩৯:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এখনো ৪ মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি স্বজনদের মধ্যে।

উপকূলের জেলেদের মতে, নিহতরা সবাই সাগরে ডাকাতি করতে গিয়েছিল। আর বারবার ডাকাতের কবলে পড়া বিক্ষুব্ধ সাধারণ জেলেরা তাদের হত্যা করেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ ও র‍্যাব।

গত রোববার গুরা মিয়া নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ট্রলার ভাসতে ভাসতে নাজিরারটেক উপকূলে চলে আসে। ওই ট্রলারের হিমঘর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ট্রলারটির মালিক মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার ছনখোলা পাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে সামশুল আলম প্রকাশ ‘সামশু মাঝি’। তার মরদেহ শনাক্ত করে গ্রহণ করেছেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম। ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া মামলার বাদিও তিনি। রোকেয়া বেগমও স্বীকার করেছেন ট্রলারটি মালিক তার স্বামী।

মহেশখালীর হোয়ানক, কালার মারছাড়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, বদরখালী, পেকুয়া এলাকার বেশ কয়েকজন জেলে জানান, সামশুলের ট্রলারটি সাগরে গিয়েছিল ডাকাতি করতে। যদিও বা ট্রলারটির মাঝি মো. মুসা ওরফে মুসা জালালকে জীবিত বা মৃত এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই ট্রলারে থাকা সামশুল, মুছা, নুরুল কবির, অন্যরা ছিল সাধারণ উঠতি বয়সের ছেলে। এই তিনজনকেই টাকার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সাগরে ডাকাতি করতে।

তারা আরও জানান, সামশুলের ট্রলারে প্রথমে গ্রেপ্তার বাইট্টা কামালের ট্রলারটি জব্দ করে। ওই ট্রলারের মাঝি মাল্লাদের বেঁধে‌ রেখে ওই ট্রলার দিয়ে তারা সাগরে ডাকাতি করতে থাকে। এরপর একটি ট্রলারের পিছনে আরেকটি ছোট ট্রলার দেখে দূর থেকে অন্য মাছ ধরা ট্রলারগুলোর সন্দেহ হয়। তখন অনেকগুলো ছটি জালের ট্রলার এক হয়ে তাদের ঘিরে ফেলে। এরপর সামশুলের ট্রলারে থাকা কয়েকজনের হাত-পা বেঁধে ভেতর প্রবেশ করিয়ে মুখ বন্ধ করে ট্রলারটি সাগরে ভাসিয়ে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওসব জেলেরা আরও জানান, মূলত বারবার ডাকাতের কবলে পড়া বিক্ষুব্ধ সাধারণ ছটি জেলেরাই তাদের হত্যা করেছে।

নিহত ট্রলার মালিক সামশুল মাঝির মা সোনা খাতুন বলেন, ‘আমার বিয়াই করিম সিকদার চাইলে আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারতেন। তার সামনে আমার ছেলেকে হত্যা করলেও তিনি সামনের দিকে বোট চালিয়ে চলে যান। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

মরদেহ উদ্ধারের পর শনাক্ত হওয়া মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের শওকত আলীর দুই মাস আগে বিয়ে হওয়া নতুন স্ত্রী ইসমত আরা বলেন, ‘মাত্র দুই মাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। এখনো শ্বশুর বাড়ি যাইনি। বাপের বাড়িতে ছিলাম। কথা ছিল ঈদের পর সেই আমাকে তাদের বাড়ি তুলে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমাকে ফেলে সে নিজেই চলে গেছে। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

এদিকে লাশ উদ্ধারের এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও ঘটনার কারণ উদ্ধার করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।

এ নিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি অনেক বড় ঘটনা। পুলিশ সুপার মহোদয় নিজেই ঘটনার বিষয়টি তদারকি করে সিনিয়র অফিসারদের নিয়ে প্রতিদিন নানা ঘটনা বিশ্লেষণ করে ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে উদ্ধার হওয়া ছয়জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করলেও মর্গে রয়ে গেছে ৪ জনের মরদেহ। ডিএনএ পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বাকি পাঁচজনের পরিচয়।’