ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঢাবিতে অধ্যাপক ইমতিয়াজের ‘শাস্তি’

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১০:১৭:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩
  • ১১২৩ বার পড়া হয়েছে

অবসরোত্তর ছুটিতে রয়েছেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, এ অবস্থাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত- ভবিষ্যতেও আর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একাডেমিক কাজ করতে পারবেন না।

‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড : স্টেট ভার্সাস পার্সন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়।

তবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলছেন, তিনি নিজেই অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কারণে অব্যহতি চেয়েছেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘যে বইটি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেটা ১৪ বছর আগের। তখন তো বিষয়টি এখনকার মতো এত পরিষ্কার ছিল না। বিচারপতি হাবিবুর রহমান, কবি শামসুর রাহমান, নির্মল সেনও তখন বিষয়টি বলেছেন, লিখেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এটা নিয়ে কেন বিতর্ক তৈরি হলো সেটা আমার বোধগম্য নয়। কেউ হয়ত মনে করতে পারেন, আমি যেহেতু অবসরে যাচ্ছি, বড় কোনো দায়িত্বে আমাকে দেয়া হতে পারে? যদিও আমি কারো কাছে এসব নিয়ে কিছুই বলিনি। আমি আসলে গবেষণার কাজটা করে যেতে চাই। ২০০৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন, তখন আমাকে ডাকা হয়েছিল, উনার সামনে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বক্তৃতা দেয়ার জন্য। সেখানেও আমি কথা বলেছি। বিরোধী দলে থাকলে তো অনেকেই সামনে আসতে চান না, আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলেছি। হয়ত যারা আমাকে পছন্দ করেন না, তারা এগুলো করছেন। এসব বিষয়ে আমি তো ৫০টির বেশি বই লিখেছি, সবগুলো কাজ ধরেই কাউকে বিচার করা উচিত।’

গত রোববার সিন্ডিকেটের নিয়মিত সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক ইমতিয়াজ রচিত ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সাস পার্সন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের বিষয় উদ্ঘাটনের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। সভা মনে করে, তার গ্রন্থে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পরিবেশিত কতিপয় তথ্য অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও ইতিহাসের বিকৃতি। সভায় উল্লেখিত গ্রন্থে অসত্য তথ্য পরিবেশন ও ইতিহাস বিকৃতির তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। গ্রন্থটির লেখক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং প্রকাশক ইউপিএলকে গ্রন্থটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সভা থেকে আহ্বান জানানো হয়। একইসাথে বঙ্গবন্ধুর অবমাননাকারী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সাথে জড়িত ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার পর একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়ার কারণ জানতে চাইলে সিন্ডিকেট সভার সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আখতারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দেই না। এখানে কোনো আপস নেই।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজের কাছে কী বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, ‘তার কিছু বলার থাকলে তিনি বলবেন। আমরা তো তদন্ত কমিটি করেছি, সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ গণহত্যা নিয়ে তো অধ্যাপক ইমতিয়াজ অনেক কাজ করেছেন, এইসব সিদ্ধান্তের ফলে কি তার কাজগুলো বিতর্কিত হয়ে যাবে? এক্ষেত্রে ভিসির জবাব, ‘প্রত্যেক কাজই তো আলাদা। সেগুলো পৃথকভাবে মূল্যায়ন হবে।’

গত ২৯ মার্চ একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কলামে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড : স্টেট ভার্সাস পার্সন’ শীর্ষক বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। ২ এপ্রিল ইমতিয়াজ আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ এবং একটি উচ্চক্ষমতার তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীও সেখানে যোগ দেন।

এরপর ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক ড. ফকরুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন ভিসি। কমিটি একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কতটুকু সত্যতা পাওয়া গেছে জানতে চাইলে ড. ফকরুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কোনো ধরনের মন্তব্য করার ইচ্ছে আমার নেই।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ৬ এপ্রিল ভিসিকে স্মারকলিপি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ৭ এপ্রিল এক বিবৃতিতে অভিযোগ তদন্ত করে অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। এর মধ্যে ৩ এপ্রিল ভিসির কাছে আবেদন করে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক এবং অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালকের পদ অব্যহতি চান অধ্যাপক ইমতিয়াজ। ৬ এপ্রিল অবসরোত্তর ছুটিতে যান তিনি। এরপর তার ওই আবেদনে সাড়া না দিয়ে ১১ এপ্রিল সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক পদ থেকে এবং ১৩ এপ্রিল অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেন ভিসি।

অভিযোগের বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ২ এপ্রিল রাতে একটি বিবৃতি পাঠান ইমতিয়াজ আহমেদ। সেখানে তিনি দাবি করেন, প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় তিনি আশ্চর্য হয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যে বইটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত জেনোসাইডের বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে রচিত, তাতে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকেই অস্বীকার কিংবা এর গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো কিভাবে সম্ভব? প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় আমি আশ্চর্য হয়েছি। আমি মনে করি, কোথাও বইয়ের কোনো কোনো অংশ বুঝতে ভুল হয়েছে কিংবা ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।’

পুরো বিষয়টির সুন্দর সমাধান সম্ভব ছিল কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘অবশ্যই ইতিবাচকভাবে এর সমাধান করা যেতে। অধ্যাপক ইমতিয়াজ জেনোসাইড নিয়ে যে কাজ করেছেন তা অনেকেই করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ গঠনেও তার ভূমিকা আছে। এ নিয়ে তিনি প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। তবে হ্যাঁ, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে আমিও ছিলাম। অধ্যাপক ইমতিয়াজ ছিলেন কিনা আমি জানি না। একজন বিদেশী সাংবাদিকের দোভাষী হিসেবে কাজ করার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেননি। যদিও বিচারপতি হাবিবুর রহমান, কবি শামসুর রাহমানও এই কথাটা বলেছেন। তারা কোথায় পেয়েছেন সেটা আমি জানি না। কিন্তু অধ্যাপক ইমতিয়াজ যদি এই কথাটা লিখেও থাকেন, আমি বিশ্বাস করি তিনি বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার জন্য এটা বলেননি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক আলোচনা হতে পারে। আমি মনে করি, কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, অধ্যাপক ইমতিয়াজকে ডেকে কথা বলা। তখন বোঝা যেতে, তিনি ১৪ বছর আগের সেই অবস্থানে আছেন কিনা? বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্ত বুদ্ধির চর্চার জায়গা। সবাই যে একমত হবেন বিষয়টি তো এমন না-ও হতে পারে। বরং আমি মনে করি, বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে জেনোসাইড নিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজকে আরো বেশি কাজে লাগালে সেটি ভালো হতো।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ঢাবিতে অধ্যাপক ইমতিয়াজের ‘শাস্তি’

আপডেট সময় ১০:১৭:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩

অবসরোত্তর ছুটিতে রয়েছেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, এ অবস্থাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত- ভবিষ্যতেও আর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একাডেমিক কাজ করতে পারবেন না।

‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড : স্টেট ভার্সাস পার্সন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসনিক পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়।

তবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলছেন, তিনি নিজেই অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কারণে অব্যহতি চেয়েছেন।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘যে বইটি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেটা ১৪ বছর আগের। তখন তো বিষয়টি এখনকার মতো এত পরিষ্কার ছিল না। বিচারপতি হাবিবুর রহমান, কবি শামসুর রাহমান, নির্মল সেনও তখন বিষয়টি বলেছেন, লিখেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই এটা নিয়ে কেন বিতর্ক তৈরি হলো সেটা আমার বোধগম্য নয়। কেউ হয়ত মনে করতে পারেন, আমি যেহেতু অবসরে যাচ্ছি, বড় কোনো দায়িত্বে আমাকে দেয়া হতে পারে? যদিও আমি কারো কাছে এসব নিয়ে কিছুই বলিনি। আমি আসলে গবেষণার কাজটা করে যেতে চাই। ২০০৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন, তখন আমাকে ডাকা হয়েছিল, উনার সামনে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বক্তৃতা দেয়ার জন্য। সেখানেও আমি কথা বলেছি। বিরোধী দলে থাকলে তো অনেকেই সামনে আসতে চান না, আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলেছি। হয়ত যারা আমাকে পছন্দ করেন না, তারা এগুলো করছেন। এসব বিষয়ে আমি তো ৫০টির বেশি বই লিখেছি, সবগুলো কাজ ধরেই কাউকে বিচার করা উচিত।’

গত রোববার সিন্ডিকেটের নিয়মিত সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাপক ইমতিয়াজ রচিত ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সাস পার্সন’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের বিষয় উদ্ঘাটনের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। সভা মনে করে, তার গ্রন্থে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধু এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পরিবেশিত কতিপয় তথ্য অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও ইতিহাসের বিকৃতি। সভায় উল্লেখিত গ্রন্থে অসত্য তথ্য পরিবেশন ও ইতিহাস বিকৃতির তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়। গ্রন্থটির লেখক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং প্রকাশক ইউপিএলকে গ্রন্থটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সভা থেকে আহ্বান জানানো হয়। একইসাথে বঙ্গবন্ধুর অবমাননাকারী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সাথে জড়িত ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।

অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার পর একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নেয়ার কারণ জানতে চাইলে সিন্ডিকেট সভার সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আখতারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দেই না। এখানে কোনো আপস নেই।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজের কাছে কী বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, ‘তার কিছু বলার থাকলে তিনি বলবেন। আমরা তো তদন্ত কমিটি করেছি, সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ গণহত্যা নিয়ে তো অধ্যাপক ইমতিয়াজ অনেক কাজ করেছেন, এইসব সিদ্ধান্তের ফলে কি তার কাজগুলো বিতর্কিত হয়ে যাবে? এক্ষেত্রে ভিসির জবাব, ‘প্রত্যেক কাজই তো আলাদা। সেগুলো পৃথকভাবে মূল্যায়ন হবে।’

গত ২৯ মার্চ একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত কলামে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড : স্টেট ভার্সাস পার্সন’ শীর্ষক বইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। ২ এপ্রিল ইমতিয়াজ আহমেদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ এবং একটি উচ্চক্ষমতার তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীও সেখানে যোগ দেন।

এরপর ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক ড. ফকরুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন ভিসি। কমিটি একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কতটুকু সত্যতা পাওয়া গেছে জানতে চাইলে ড. ফকরুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কোনো ধরনের মন্তব্য করার ইচ্ছে আমার নেই।’

অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ৬ এপ্রিল ভিসিকে স্মারকলিপি দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ৭ এপ্রিল এক বিবৃতিতে অভিযোগ তদন্ত করে অধ্যাপক ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। এর মধ্যে ৩ এপ্রিল ভিসির কাছে আবেদন করে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক এবং অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালকের পদ অব্যহতি চান অধ্যাপক ইমতিয়াজ। ৬ এপ্রিল অবসরোত্তর ছুটিতে যান তিনি। এরপর তার ওই আবেদনে সাড়া না দিয়ে ১১ এপ্রিল সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক পদ থেকে এবং ১৩ এপ্রিল অফিস অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেন ভিসি।

অভিযোগের বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে ২ এপ্রিল রাতে একটি বিবৃতি পাঠান ইমতিয়াজ আহমেদ। সেখানে তিনি দাবি করেন, প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় তিনি আশ্চর্য হয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যে বইটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত জেনোসাইডের বিচার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজ সেন্টার প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে রচিত, তাতে ১৯৭১ সালের জেনোসাইডকেই অস্বীকার কিংবা এর গুরুত্ব কমিয়ে দেখানো কিভাবে সম্ভব? প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অভিযোগ ওঠায় আমি আশ্চর্য হয়েছি। আমি মনে করি, কোথাও বইয়ের কোনো কোনো অংশ বুঝতে ভুল হয়েছে কিংবা ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।’

পুরো বিষয়টির সুন্দর সমাধান সম্ভব ছিল কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘অবশ্যই ইতিবাচকভাবে এর সমাধান করা যেতে। অধ্যাপক ইমতিয়াজ জেনোসাইড নিয়ে যে কাজ করেছেন তা অনেকেই করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ গঠনেও তার ভূমিকা আছে। এ নিয়ে তিনি প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। তবে হ্যাঁ, ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে আমিও ছিলাম। অধ্যাপক ইমতিয়াজ ছিলেন কিনা আমি জানি না। একজন বিদেশী সাংবাদিকের দোভাষী হিসেবে কাজ করার জন্য আমি সেখানে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু জয় পাকিস্তান বলেননি। যদিও বিচারপতি হাবিবুর রহমান, কবি শামসুর রাহমানও এই কথাটা বলেছেন। তারা কোথায় পেয়েছেন সেটা আমি জানি না। কিন্তু অধ্যাপক ইমতিয়াজ যদি এই কথাটা লিখেও থাকেন, আমি বিশ্বাস করি তিনি বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার জন্য এটা বলেননি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক আলোচনা হতে পারে। আমি মনে করি, কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, অধ্যাপক ইমতিয়াজকে ডেকে কথা বলা। তখন বোঝা যেতে, তিনি ১৪ বছর আগের সেই অবস্থানে আছেন কিনা? বিশ্ববিদ্যালয় হল মুক্ত বুদ্ধির চর্চার জায়গা। সবাই যে একমত হবেন বিষয়টি তো এমন না-ও হতে পারে। বরং আমি মনে করি, বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে জেনোসাইড নিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজকে আরো বেশি কাজে লাগালে সেটি ভালো হতো।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে