কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়কেন্দ্রিক অপহরণ ও ডাকাতির অন্যতম হোতা ছালেহ বাহিনীর প্রধান হাফিজুর রহমান ওরফে ছলে উদ্দীন ও তার সহযোগী পাঁচ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
অভিযান চলাকালে ছালেহ বাহিনীর সাথে র্যাবের গুলি বিনিময় হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
শুক্রবার (৫ মে) রাত ১০টায় টেকনাফের বাহারছড়া পাহাড় এলাকায় র্যাবের অভিযান শুরু হয় এবং আজ ভোর রাত পর্যন্ত এই অভিযান চলে।
আটকরা হলেন ছলেহ উদ্দিন প্রকাশ ছলে ডাকাত (৩০) ও তার সহযোগী নুরুল আলম প্রকাশ নূরু (৪০), আক্তার কামাল প্রকাশ সোহেল (৩৭), নুরুল আলম প্রকাশ লালু (২৪), হারুনুর রশিদ (২৩), রিয়াজ উদ্দিন ও বারি (১৭)।
উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি বিদেশী পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেশীয় তৈরি তিনটি এক নলা বড় বন্দুক, দু’টি এক নলা মাঝারি বন্দুক, ছয়টি এক নলা ছোট বন্দুকসহ মোট ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, চার রাউন্ড খালি কার্তুজ, দু’টি ছুরি ও ছয়টি দেশীয় তৈরি দা।
শনিবার দুপুরে কক্সবাজার র্যাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে ছলেহ ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে চক্রটি অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ দলের সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। তরা টেকনাফের শালবাগান পাহাড়, জুম্মা পাড়া ও নেচারি পার্ক এলাকা, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীপাড়া পাহাড়, বড় ডেইল পাহাড়, কছপিয়া পাহাড়, জাহাজপুরা পাহাড়, হলবনিয়া পাহাড়, শিলখালী পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কখনও অটোরিকশার চালক, কখনো সিএনজির চালক হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করতো। বিভিন্ন কৌশলে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হীলা হোয়াইক্যং, উনচিপ্রাং, শ্যামলাপুর, জাদিমোড়া ও টেকনাফ ইত্যাদি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের টার্গেট করে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় ও ডাকাতি করতো।
খন্দকার আল মঈন আরো বলেন, গ্রেফতার হাফিজুর রহমান প্রকাশ ওরফে ছালেহ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ২০১২ সালে মিয়ানমার থেকে তিনি অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসে। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের তালিকায় ছলের কোনো নামের তালিকা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ছলে তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা নয়। প্রতিবারই অপরাধ করে আবার মিয়ানমারে আত্মগোপন করেন।
তিনি আরো জানান, পরে ২০১৩ সালে তিনি অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যান এবং তৎকালীন সময় পাশের দেশগুলোর বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে যোগসাজসে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। পরে ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেন। এরপর অবৈধভাবে উখিয়া ও কক্সবাজারে অবস্থান করা এবং অবৈধভাবে পাশের দেশে যাতায়াত ও অপরাধমূলক কার্যক্রম করতে থাকেন। এ সময় অপহরণ-ডাকাতি, মাদককারবারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করছিলেন ছালেহ উদ্দিন।
ছালেহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করার জন্য ১২-১৫ জন সদস্য নিয়ে ছালে বাহিনী গঠন করেন। তিনি দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে অপহরণ, ডাকাতি ও মাদক চোরাচালান কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এছাড়াও মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মানবপাচার করতেন বলে জানা যায়।
খন্দকার আল মঈন জানান, এই ছালেহ উদ্দিন মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত।