কুড়িগ্রামে একটি সেতু নির্মাণ কাজের ধীরগতি এখন এলাকাবাসীর জন্য দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ওয়াপদা বাজার সংলগ্ন রাস্তার সেতুটি প্রায় বছর ছয়েক আগে ভেঙে যায়।
সেতুটি ভেঙে যাওয়ার চার বছর পর নতুন করে পাকা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। কিন্তু কাজ এখনো শেষ হয়নি। সেতুর নির্মাণকাজে ধীরগতির ফলে সৃষ্টি হয়েছে জনদুর্ভোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যার পানির সেতুটি স্রোতে দেবে যায়। ভেঙে যায় সেতুর দুপাশের সংযোগ সড়ক। আর অত্র এলাকার মানুষের জীবন জীবিকায় নেমে আসে দুর্ভোগ। অবশেষে মানুষের ভোগান্তি দূর করতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ সড়কে সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৭০ লাখ ৫২ হাজার ৪২১ টাকা ব্যয়ে নতুন সেতু নির্মাণের বরাদ্দ আসে। সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় কুড়িগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন ট্রেডার্সকে।
চুক্তি মোতাবেক ৩০ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে কাজ শুরু করে একই বছরের ৩০ জুন তারিখে কাজ শেষ করার কথা। মাত্র ছয় মাসেই কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা দেড় বছরেও শেষ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নবনির্মিত পাকা সেতুটির দুই পাশে বড় গর্ত। এতোদিন চলাচলের জন্য বাঁশের সাঁকো ভরসা ছিল সেটিও ভেঙে গেছে। ফলে যাতায়াতের জন্য ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ওই এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল হক বলেন, ২০১৭ সালের বন্যার কারণে সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই আমরা খুব বিপদে পড়েছি। প্রায় ছয় বছর ধরে আমাদের যাতায়াতের খুব কষ্ট।
অবশেষে এখানে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুনেছি ছয় মাসেই সেতু কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু বছর যায় বছর আসে কাজ তো শেষই হয় না।
আমজাদ হোসেন নামের আরেক জন বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও দুপাশে এখনো মাটি কাটেনি। মই ছাড়া সেতুতে ওঠার কোনো উপায় নেই। এই সেতু আমাদের কোনো কাজে লাগে বলেন?
চর বড়লই গ্রামের আজিজুল হক, আইয়ুব আলী ও লম্বা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, এই সেতুর উপর দিয়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ যাতায়াত করি।
সেতুর সংযোগ সড়ক নেই। সেতুর পাশের বিকল্প সড়কও ভেঙ্গে গেছে। গত ছয়টি বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এবার বর্ষার আগে সেতুর কাজ শেষ না হলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে।
সেতু নির্মাণকাজে ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন বলেন, আরও একমাস পরে সেতু হস্তান্তর হবে।
হস্তারের আগে সংযোগ সড়ক হলে লোকজনের চলাচলে সেতুর ক্ষতি হতে পারে। তার আগে মাটির কাজ হবে। বন্যা ও পানির কারণে কাজ করতে কিছুটা সময় লাগছে।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, আকস্মিক বন্যায় সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মানুষের যাতায়াতের কষ্ট দূর করতে সরকার সেতু নির্মাণের বরাদ্দ দিয়েছে।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ছয় মাসের কাজ দেড় বছরেও শেষ হয়নি। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সেতুটির ব্যাপারে উপজেলা ত্রাণ পুনর্বাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ বাকি আছে।
দ্রুত সময়ে সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করে দিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। আসন্ন বর্ষার আগেই সেতুটি জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।