অর্থসংকটে পড়েছে মিয়ানমারে বাংলাদেশের ইয়াঙ্গুন ও সিট্যুয়ে মিশন। ফলে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে। শুধু তাই নয়, দৈনন্দিন খরচ মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। মিশন দুটি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রায় ২ কোটি টাকার সমপরিমাণ নগদ ডলারের চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দ্রুতই অর্থের সংস্থান করা না গেলে মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশনে স্থবিরতা নেমে আসতে পারে।অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বর্তমানে দেশে ডলারের সংকট রয়েছে। প্রচুর চাহিদাপত্র আসে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, বর্তমানে সংকটের কারণে নগদ ডলার প্রদান প্রায় বন্ধ রয়েছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সংকট শুরু হয়। এ ছাড়া পশ্চিমা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার খড়গ নেমে আসে দেশটির ওপর। সংকট এখনো অব্যাহত থাকায় মিয়ানমারের বাংলাদেশের ইয়াঙ্গুন ও সিট্যুয়ে মিশন মিয়ানমারের ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় নগদ মার্কিন ডলার পাচ্ছে না। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বাড়ি ভাড়া ও নিয়মিত দৈনন্দিন খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মিশন দুটি থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বিদেশে মিশনের জন্য বাড়ি ভাড়া চুক্তি ডলারে করতে হয়। সেই হিসেবে ইয়াঙ্গুন ও সিট্যুয়ে বাংলাদেশ মিশনে বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ডলারে করা। ফলে বাড়ি মালিকরা ডলার ছাড়া স্থানীয় মুদ্রা গ্রহণে আগ্রহী নন। এ ছাড়া বৈদেশিক মিশন হিসেবে অন্যান্য দৈনন্দিন কাজের খরচও ডলারে সম্পন্ন করতে হয়। ফলে তীব্র ডলার সংকট দেখা দেয়। এর আগে নগদ ডলারের সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতায় গত বছরের অক্টোবর মাসে নগদ ২ লাখ ৪ হাজার মার্কিন ডলার জোগাড় করে মিশন দুটি। বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে মিয়ানমার হতে মিশনের দুই কর্মকর্তা সশরীরে ঢাকায় এসে সেই ডলার বহন করে নিয়ে যান। সেই ডলারে প্রায় ৫ মাস চলার পর আবারও মিশনের নগদ মার্কিন ডলারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। মিশন দুটির চাহিদার প্রেক্ষিতে গত ৩ ও ৪ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস ও ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয় হতে সিট্যুয়ে মিশনের জন্য ৪৪ লাখ টাকা ও ইয়াঙ্গুন মিশনের জন্য ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার (প্রায়) সমপরিমাণ ডলারের চাহিদা বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদাগুলো সোনালী ব্যাংকে প্রেরণ করে। কিন্তু সোনালী ব্যাংক ওই পরিমাণ নগদ মার্কিন ডলার প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ও ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হলেও বিষয়টির সুরহা হয়নি।
সূত্র জানায়, ডলারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে তাগিদাপত্র দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস ও ফিন্যান্স অফিসারের দপ্তর। তবে খুব শিগগির সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশন সূত্রে জানা গেছে।