ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

দোয়ার তাৎপর্য

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৯:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০২৩
  • ১১১৭ বার পড়া হয়েছে

দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়, আল্লাহর প্রতি বান্দার অন্তরে আনুগত্য ও বিশ্বাসের পাহাড় গড়ে ওঠে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থাশীলতা এবং তাঁর মহান শক্তির ওপর নির্ভরতার প্রত্যয় বান্দার অন্তরে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়। দোয়া যেমন এক দিকে বান্দার দীনতা, হীনতা, অক্ষমতা ও বিনয়ের প্রকাশ ঘটায়, অপর দিকে আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত্ব, সর্বব্যাপী ক্ষমতা ও দয়া-মায়ার প্রতি সুগভীর বিশ্বাস গড়ে তোলে।
দোয়ার শাব্দিক অর্থ ডাকা, আরাধনা, প্রার্থনা, জিকির। শরিয়তের পরিভাষায় মালিকের কাছে বিশেষ কোনো আবেদন, প্রার্থনা বা জিকিরের নাম দোয়া। প্রত্যেক ইবাদতের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়মাবলি রয়েছে, নিশ্চয় দোয়া এর বাইরে নয়।

কুরআন-হাদিসে দোয়ার বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। যারা অহঙ্কারবশে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়।’ এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ দোয়া। (সূরা মু’মিন-৬০)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে ডাকে না, তিনি তার ওপর ক্রুদ্ধ হন।’ (ইবনে মাজাহ-৩৮২৭)
দোয়া কবুলের আদব ও শর্তাবলি
১. দোয়ার শুরুতে এবং শেষে হামদ ও দরূদ পাঠ করা। ২. দোয়া আল্লাহর প্রতি খালেছ আনুগত্যসহকারে হওয়া। ৩. দোয়ায় কোনো পাপের কথা কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা না থাকা। ৪. খাদ্য-পানীয় ও পোশাক হালাল ও পবিত্র হওয়া। ৫. দোয়া কবুলের জন্য বেশি অস্থির না হওয়া। ৬. নিরাশ হয়ে দোয়া পরিত্যাগ না করা। ৭. উদাসীনভাবে দোয়া না করা এবং দোয়া কবুলের ব্যাপারে সর্বদা দৃঢ় আশাবাদী থাকা। ৮. দোয়াকারীকে তাওহিদপন্থী হতে হবে। ৯. আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে দোয়া করা। ১০. কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা। ১১. দুই হাত উত্তোলন করা।

উল্লিখিত বিষয়গুলো যথাযথ মান্য করে কেউ দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া গৃহীত হবে।
যেকোনো সময় দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। তবে হাদিসে কিছু বিশেষ সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে, যখন দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

১. শেষরাতে দোয়া করলে কবুল হয়।
২. সিজদার সময় দোয়া।
৩. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়।
৪. ফরজ সালাতের পর।
আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- একবার রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি উত্তর দিলেন, ‘রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পর।’ (তিরমিজি-৩৪৯৮)
৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়।
৬. বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।
৭. রমজান ও শবেকদরের রাত।

এ ছাড়াও রোগে আক্রান্ত অবস্থায়, বিপদ-আপদের সময়, দূরবর্তী সফরের সময় এবং সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া খুব বেশি কবুল হয়। বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন স্থানে সম্মিলিত দোয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত দোয়া নিয়ে সমাজে বিদঘুটে এক পরিস্থিতি বিরাজমান, আর এ পরিস্থিতির কবলে ইমামরা। কোনো কোনো মসজিদে সম্মিলিত দোয়া না করলে ইমামের চাকরি থাকে না। কোথাও আবার দোয়া করলে ইমাম বিদয়াতি হয়ে যায়। বিপাকে পড়ে যায় এই সম্মানিত ইমামরা।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘দোয়া হলো ইবাদত’। (মিশকাত-২২৩০) অন্যান্য নফল ইবাদতের মতো দোয়াও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইবাদত।
দোয়া কি হাত তুলে করতে হবে নাকি হাত তোলা ছাড়াও হবে? উভয় পদ্ধতিতেই দোয়া করা যায়। অর্থাৎ হাত তুলেও করা যায়। যেমন- একদা একজন গ্রাম্য সাহাবি রাসূল সা:-এর কাছে এলেন জুমার দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (অনাবৃষ্টিতে) জিনিসপত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ কথা শুনে রাসূল সা: তার উভয় হাত উত্তোলন করলেন দোয়ার উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সা:-এর সাথে দোয়ার জন্য হাত উত্তোলন করলেন। (বুখারি-১০২৯)
অনুরূপভাবে হাত না তুলেও দোয়া করা যায়। রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি ফরজ নামাজের পরে হাত না তুলে এই দোয়াগুলো পাঠ করতেন- রাসূল সা: প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে তিনবার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন। (মুসলিম-১২২২) ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লি ওয়াল ইকরাম’-এটি পাঠ করতেন। (মুসলিম, হাদিস-১২২১)

দোয়া কি শুধু একা একা করতে হবে নাকি সম্মিলিতও দোয়া করা যায়?

দোয়া যেমন একা একা করা যায় তেমনই সম্মিলিতভাবেও করা যায়। আনাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, (শুহাদাদের জন্য) প্রত্যেক দিন সকালে সালাতের পরে হাত তুলে দোয়া করতেন (বুখারি)। সম্মিলিতভাবেও আল্লাহর রাসূল সা: দোয়া করেছেন। আবু মূসা রা: বলেন, বৃষ্টি প্রর্থনার জন্য রাসূল সা: সম্মিলিত দোয়া করেছেন, এমনকি তার বগলের শুভ্রতাও দেখা যাচ্ছিল। (বুখারি)
দোয়া যেহেতু স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত; তাই ফরজ সালাতের জামাতের পর কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি ব্যতিরেকে আমাদের দেশে যে মুনাজাত প্রচলিত আছে, তা মুস্তাহাব আমল; বিদয়াত নয়। কারণ, বিদয়াত বলা হয় ওই আমলকে, শরিয়তে যার কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ ফরজ সালাতের পরে দোয়া বহু নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়াতে সুপ্রমাণিত।
এখন দোয়া একা একা করা হবে নাকি সম্মিলিত? ফরজ সালাতের পরে নাকি স্বাভাবিক সময়ে?

এটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। এ ব্যাপারে নবী করিম সা:-এর আমল ও নির্দেশনা বিদ্যমান। তাই যারা মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করে, তারাও ভুলের মধ্যে রয়েছে। আবার যারা ইমাম-মুক্তাদির সম্মিলিত মুনাজাতকে সর্বাবস্থায় বিদয়াত বলে, তাদের দাবিও ভিত্তিহীন এবং মুনাজাতকে যারা জরুরি মনে করে, এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা এবং কেউ না করলে তাকে কটাক্ষ করা, গালি দেয়া- এ শ্রেণীর মানুষও ভুলের মধ্যে আছে।
সুতরাং ফরজ সালাতের পরে দোয়ার বিষয়ে অতি বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিহার করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা একান্ত অপরিহার্য।

লেখক :

  • ইমদাদুল হক শেখ

সিনিয়র শিক্ষক, ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ: প্রতিষ্ঠিত, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ সদর

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

দোয়ার তাৎপর্য

আপডেট সময় ০৯:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০২৩

দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়, আল্লাহর প্রতি বান্দার অন্তরে আনুগত্য ও বিশ্বাসের পাহাড় গড়ে ওঠে, সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থাশীলতা এবং তাঁর মহান শক্তির ওপর নির্ভরতার প্রত্যয় বান্দার অন্তরে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়। দোয়া যেমন এক দিকে বান্দার দীনতা, হীনতা, অক্ষমতা ও বিনয়ের প্রকাশ ঘটায়, অপর দিকে আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত্ব, সর্বব্যাপী ক্ষমতা ও দয়া-মায়ার প্রতি সুগভীর বিশ্বাস গড়ে তোলে।
দোয়ার শাব্দিক অর্থ ডাকা, আরাধনা, প্রার্থনা, জিকির। শরিয়তের পরিভাষায় মালিকের কাছে বিশেষ কোনো আবেদন, প্রার্থনা বা জিকিরের নাম দোয়া। প্রত্যেক ইবাদতের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়মাবলি রয়েছে, নিশ্চয় দোয়া এর বাইরে নয়।

কুরআন-হাদিসে দোয়ার বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। যারা অহঙ্কারবশে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ হয়, সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়।’ এখানে ‘ইবাদত’ অর্থ দোয়া। (সূরা মু’মিন-৬০)

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে ডাকে না, তিনি তার ওপর ক্রুদ্ধ হন।’ (ইবনে মাজাহ-৩৮২৭)
দোয়া কবুলের আদব ও শর্তাবলি
১. দোয়ার শুরুতে এবং শেষে হামদ ও দরূদ পাঠ করা। ২. দোয়া আল্লাহর প্রতি খালেছ আনুগত্যসহকারে হওয়া। ৩. দোয়ায় কোনো পাপের কথা কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা না থাকা। ৪. খাদ্য-পানীয় ও পোশাক হালাল ও পবিত্র হওয়া। ৫. দোয়া কবুলের জন্য বেশি অস্থির না হওয়া। ৬. নিরাশ হয়ে দোয়া পরিত্যাগ না করা। ৭. উদাসীনভাবে দোয়া না করা এবং দোয়া কবুলের ব্যাপারে সর্বদা দৃঢ় আশাবাদী থাকা। ৮. দোয়াকারীকে তাওহিদপন্থী হতে হবে। ৯. আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে দোয়া করা। ১০. কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা। ১১. দুই হাত উত্তোলন করা।

উল্লিখিত বিষয়গুলো যথাযথ মান্য করে কেউ দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া গৃহীত হবে।
যেকোনো সময় দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। তবে হাদিসে কিছু বিশেষ সময়ের কথা উল্লেখ রয়েছে, যখন দোয়া করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

১. শেষরাতে দোয়া করলে কবুল হয়।
২. সিজদার সময় দোয়া।
৩. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়।
৪. ফরজ সালাতের পর।
আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে- একবার রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন সময়ের দোয়া দ্রুত কবুল হয়? তিনি উত্তর দিলেন, ‘রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পর।’ (তিরমিজি-৩৪৯৮)
৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়।
৬. বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়।
৭. রমজান ও শবেকদরের রাত।

এ ছাড়াও রোগে আক্রান্ত অবস্থায়, বিপদ-আপদের সময়, দূরবর্তী সফরের সময় এবং সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া খুব বেশি কবুল হয়। বর্তমানে সমাজের বিভিন্ন স্থানে সম্মিলিত দোয়া নিয়ে কিছু বিতর্ক পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিত দোয়া নিয়ে সমাজে বিদঘুটে এক পরিস্থিতি বিরাজমান, আর এ পরিস্থিতির কবলে ইমামরা। কোনো কোনো মসজিদে সম্মিলিত দোয়া না করলে ইমামের চাকরি থাকে না। কোথাও আবার দোয়া করলে ইমাম বিদয়াতি হয়ে যায়। বিপাকে পড়ে যায় এই সম্মানিত ইমামরা।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘দোয়া হলো ইবাদত’। (মিশকাত-২২৩০) অন্যান্য নফল ইবাদতের মতো দোয়াও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইবাদত।
দোয়া কি হাত তুলে করতে হবে নাকি হাত তোলা ছাড়াও হবে? উভয় পদ্ধতিতেই দোয়া করা যায়। অর্থাৎ হাত তুলেও করা যায়। যেমন- একদা একজন গ্রাম্য সাহাবি রাসূল সা:-এর কাছে এলেন জুমার দিন। এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (অনাবৃষ্টিতে) জিনিসপত্র, পরিবার, মানুষ সবই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ কথা শুনে রাসূল সা: তার উভয় হাত উত্তোলন করলেন দোয়ার উদ্দেশ্যে। উপস্থিত সবাই রাসূল সা:-এর সাথে দোয়ার জন্য হাত উত্তোলন করলেন। (বুখারি-১০২৯)
অনুরূপভাবে হাত না তুলেও দোয়া করা যায়। রাসূলুল্লাহ সা: প্রতি ফরজ নামাজের পরে হাত না তুলে এই দোয়াগুলো পাঠ করতেন- রাসূল সা: প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে তিনবার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন। (মুসলিম-১২২২) ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লি ওয়াল ইকরাম’-এটি পাঠ করতেন। (মুসলিম, হাদিস-১২২১)

দোয়া কি শুধু একা একা করতে হবে নাকি সম্মিলিতও দোয়া করা যায়?

দোয়া যেমন একা একা করা যায় তেমনই সম্মিলিতভাবেও করা যায়। আনাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, (শুহাদাদের জন্য) প্রত্যেক দিন সকালে সালাতের পরে হাত তুলে দোয়া করতেন (বুখারি)। সম্মিলিতভাবেও আল্লাহর রাসূল সা: দোয়া করেছেন। আবু মূসা রা: বলেন, বৃষ্টি প্রর্থনার জন্য রাসূল সা: সম্মিলিত দোয়া করেছেন, এমনকি তার বগলের শুভ্রতাও দেখা যাচ্ছিল। (বুখারি)
দোয়া যেহেতু স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত; তাই ফরজ সালাতের জামাতের পর কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি ব্যতিরেকে আমাদের দেশে যে মুনাজাত প্রচলিত আছে, তা মুস্তাহাব আমল; বিদয়াত নয়। কারণ, বিদয়াত বলা হয় ওই আমলকে, শরিয়তে যার কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ ফরজ সালাতের পরে দোয়া বহু নির্ভরযোগ্য রিওয়ায়াতে সুপ্রমাণিত।
এখন দোয়া একা একা করা হবে নাকি সম্মিলিত? ফরজ সালাতের পরে নাকি স্বাভাবিক সময়ে?

এটি সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। এ ব্যাপারে নবী করিম সা:-এর আমল ও নির্দেশনা বিদ্যমান। তাই যারা মুনাজাতকে একেবারেই অস্বীকার করে, তারাও ভুলের মধ্যে রয়েছে। আবার যারা ইমাম-মুক্তাদির সম্মিলিত মুনাজাতকে সর্বাবস্থায় বিদয়াত বলে, তাদের দাবিও ভিত্তিহীন এবং মুনাজাতকে যারা জরুরি মনে করে, এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা এবং কেউ না করলে তাকে কটাক্ষ করা, গালি দেয়া- এ শ্রেণীর মানুষও ভুলের মধ্যে আছে।
সুতরাং ফরজ সালাতের পরে দোয়ার বিষয়ে অতি বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিহার করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা একান্ত অপরিহার্য।

লেখক :

  • ইমদাদুল হক শেখ

সিনিয়র শিক্ষক, ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ: প্রতিষ্ঠিত, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ সদর