জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়ের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। লোডশেডিংয়ের সুযোগ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের উপ সাহিত্য সম্পাদক গৌতম কুমার দাসের প্রত্যক্ষ নির্দেশে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এ সময় প্রত্যয়কে মারধরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেন তারা।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ৩১ মে থেকে সেখানে অনশনে বসেন প্রত্যয়।
তারা সেখানে অবস্থানরত প্রগতিশীল আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের বলতে থাকে, ‘অন্য হলের ছেলেরা এখানে ী করে?’ এ সময় সেখানে উপস্থিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, অর্ণব সিদ্দীকী, সিল্কী নূরকে টানাহ্যাচড়া করে। পরে প্রত্যয়ের বিছানা তুলে ফেলে দেয় হামলাকারীরা।
অনশনরত প্রত্যয়কে সেখান থেকে তুলে দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসেন গৌতম। জাবি চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে নম্বরটি (০১৫৬৮১২০৮৬৩) গৌতমের বলে জানা যায়।
পরে গৌতমের নির্দেশে হামলাকারীরা ধস্তাধস্তি করে প্রত্যয়কে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। এ সময় পুনরায় অ্যাম্বুলেন্সে হামলা চালিয়ে পেছনের গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীর ওপর হামলা চালায় গোলাম রাব্বি (ইংরেজি ৪৫ ব্যাচ), মুরাদ (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ৪৬), মনোজ (গণিত ৪৬), তানভীর (৪৬ ব্যাচ), রায়হান (প্রাণরসায়ন ৪৬ ব্যাচ), রাহাত (জার্নালিজম ৪৭ ব্যাচ), তারেক মীর (৪৬ ব্যাচ), ফাহাত (রসায়ন ৪৭), নাফিস (অর্থনীতি ৪৬ ব্যাচ), সজীব (৪৫ ব্যাচ), সোহেল (ইংরেজি ৪৬ ব্যাচ), তুষার (ফার্মেসি ৪৫), ফেরদৌস (ফার্মেসি ৪৫) প্রমুখ।
এ সময় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ, মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক এবং শারমিন সুরকে হেনস্তা করা হয়।
ভুক্তভোগী মার্কেটিং ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সৃষ্টি বলেন, ‘হলের সামনে আমরা যখন প্রত্যয়ের অনশনস্থলে গেলাম, সেখানে লোডশেডিং হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামলা চালায়। এ সময় আমাকে হেনস্তা করা হয়। প্রশাসনের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল না। পরে রাত সাড়ে ১১টায় বিদ্যুৎ আসলে প্রক্টর ও প্রভোস্ট সেখানে উপস্থিত হন।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমি সবার বডিগার্ড না, সবার পাহারাদার না। আমাদের একজন এসিসট্যান্ট প্রক্টর এখানে দাঁড়ানো ছিল। কিন্তু একটা মবে আমাদের কি করার আছে। এটা একমাত্র এলিয়েন বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে কেউ নিয়ম মানে না।’
এদিকে হামলার উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম, রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার,প্রক্টর এবং সহকারী প্রক্টররা৷
মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সাব্বির বলেন, ‘আজকে রাত ৮টায় আমরা ছাত্রদের রুম ছেড়ে দেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করি৷ আমরা গণরুম থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নন এলোটেড শিক্ষার্থীদের রুমে তুলে দিচ্ছিলাম। এ ঘটনায় ছাত্ররা অসন্তুষ্ট হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রায় দুই ঘন্টা অবস্থান শেষে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন।’
দাবিগুলো হলো- সূর্যোদয়ের পূর্বে মীর মশাররফ হলের সকল অবৈধ ছাত্রকে বের করা, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার ও রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা, দায়িত্ব থেকে প্রক্টর ও প্রভোস্টকে অব্যাহতি দেওয়া, গণরুম- গেস্টরুম বন্ধ করা এবং প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের ব্যবস্থা করা।
শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘আগামীকাল বেলা ১১টায় ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সভা বসবে। সভায় আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আর প্রক্টর ও প্রভোস্টের ব্যাপারে প্রশাসনিক ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তবে বুধবার দুপুর একটার মধ্যে দাবি মানা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, ‘আমরা গত ছয় দিন যাবৎ একই দাবি নিয়ে বারবার তাদের সামনে হাজির হয়েছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কার্যকর কিছুই পাইনি। আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব। আগামীকাল দুপুর একটার মধ্যে কার্যকর সিদ্ধান্ত না আসলে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব।’