ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ইজতেমায় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে প্রথম দিনের হেদায়েতি বয়ান

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১২:২৭:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৪৪ বার পড়া হয়েছে

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে টানা দুই বছর বিরতি দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দাওয়াত ও তাবলীগের এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গত মঙ্গলবার থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের এই ইজতেমায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মুসল্লিদের সংখ্যাও বেড়েছে।

তিন দিনের এই ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা কিভাবে সময় কাটাবেন সেই বিষয়ে আজ ফজরের নামাজের পরে দিকনির্দেশনা দেয়া হয় ইজতেমার বয়ানের মিম্বার থেকে। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে উর্দু ভাষায় করা সেই বয়ানের অনুবাদ করেছেন আলেম সাংবাদিক মুহাম্মদুল্লাহ বিন ওয়াহিদ।

পাঠকদের জন্য উর্দু বয়ানের বাংলা অনুবাদ হলো : আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় অনুগ্রহ যে তিনি আমাদেরকে এই মোবারক ইজতিমায় এনেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এই ইজতিমায় আসা, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা, অন্যকে দ্বীনের জন্য দাওয়াত দেয়া এসবের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমাদের জীবনে দ্বীন এসে যাওয়া।

মানুষ ব্যবসা করে লাভের জন্য, চাকরি করে টাকা পয়সা উপার্জনের জন্য, পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জনের জন্য, ঠিক একইভাবে আমাদের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো হেদায়েত পাওয়া। আমরা যেন পরিপূর্ণ দ্বীন মানতে পারি, আল্লাহর পথে জীবন চালাতে পারি- এটাই হলো আমাদের মেহনতের উদ্দেশ্য।

দুনিয়া হলো হালতের ঘর। এখানে সুখ আছে, দুঃখ আছে, হাসি আছে, কান্না আছে, মুসিবত আছে। মোটকথা সবকিছু মিলিয়েই হলো জীবন। যাদের ভেতরে দ্বীন আছে, আল্লাহ তাদের জীবনকে ঠিক করে দেন। দুঃখ দুর্দশা এলে এর থেকে উত্তরণের পথ বের করে তাদেরকে সুখময় জীবন দান করেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, ঈমানের পরে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো সুস্থতা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে সুস্থতার নেয়ামত চাও। কখনো অসুস্থতা ও দুঃখ-দুর্দশা চেয়ো না। আল্লাহ তায়ালা দ্বীনদার মানুষকে এমন সুখময় জীবন দান করেন যে আশপাশের সবাই ঈর্ষান্বিত হয়। হায়, আমিও যদি এমন জীবন পেতাম!

যার ভেতরে দ্বীন এসে গেছে, আল্লাহ তার সবকিছুকে সহজ করে দেন। দুনিয়ার জীবনের পাশাপাশি তার পরকালের জীবনও সহজ এবং সুখের হয়। মৃত্যু সহজ হয়। তার কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দেয়া হয়। কেয়ামতের ভয়াবহ সময়ে তার ওপরে আরশের ছায়া দেয়া হবে। জাহান্নামের আগুনের ওপরে প্রতিষ্ঠিত পুলসিরাত তিনি বিদ্যুৎ বেগে পার হয়ে যাবেন। কেয়ামতের কঠিন দিনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনদার ব্যক্তিকে নিজ হাতে পানি পান করাবেন।

শুধু তাই নয়, তিনি জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়ে চির সুখের জায়গা জান্নাতে চলে যাবেন। সবচেয়ে সফল ব্যক্তি তো তিনিই, যিনি জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়ে জান্নাতে যেতে পারবেন। আর দুনিয়া তো কেবল ধোঁকা ও প্রতারণার জায়গা।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের এসব মেহনতের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমাদের জীবনে দ্বীন নিয়ে আসা। আজকে উম্মতের কাছে দ্বীনের ইলম আছে। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের ওপরে চলার হিম্মত ও শক্তি নেই। আর পরিপূর্ণ দ্বীনের ওপরে চলার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালা যেসব কাজের আদেশ দিয়েছেন তা করা এবং যেসব কাজের বিষয়ে নিষেধ করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকা।

ইজতিমার তিন দিন আগত মুসল্লিরা কীভাবে সময় কাটাবে এ বিষয়ে মেহমান বলেন, পবিত্র কুরআনে সবার হেদায়েতের অংশ আছে। ইজতিমায় তা’লীমের আমলের মাঝখানে যখন কুরআন শেখা-শেখানোর আমল হবে। তখন সবাই খুব গুরুত্ব দিয়ে এতে শরিক হবেন। যিনি সহিহশুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে পারেন, তিনি যারা পারেন না তাদের শেখাবেন। এর দ্বারা কুরআনের প্রতি মোহাব্বত বৃদ্ধি পাবে। বছরে কমপক্ষে দু’বার কুরআন খতম করা উচিত।

অনেকে মনে করেন, আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমার কুরআন শেখার বয়স নেই। আসলে কুরআন শেখার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুরআন শেখা যায়। আপনি কুরআন পড়তে না জানলে শেখা শুরু করে দিন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যিনি কুরআন শেখেন এবং শেখান তিনিই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

এই ইজতিমায় মূলত সিফাত বা গুণ শেখানো হয়। আমার আচার-আচরণ কেমন হবে, আমার চলাফেরা, ওঠাবসা কেমন হবে তা শেখানো হয়। আমার নামাজ, বান্দার প্রতি বান্দার হক, আল্লাহর হক শেখানো হয়। মোটকথা আল্লাহর সন্তুষ্টি আমরা কিভাবে অর্জন করতে পারি তা এখানে শেখানো হয়।

প্রিয় ভাইয়েরা, ইজতিমায়ি আমল যেমন বয়ান তালীম, এগুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমরা ইনফিরাদি বা ব্যক্তিগত আমল শুরু করে দিব। তিন তাসবীহ আদায় করব। বেশি বেশি দুরুদ শরিফ পড়ব। আর দুরুদ পড়ার সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এহসান বা অনুগ্রহের কথা মনে করব। আর আল্লাহর কাছে তাঁর শান অনুযায়ী নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রতিদান চাইব। যারা এভাবে বেশি বেশি দুরুদ পড়বে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্যই শাফায়াত করবেন।

ইনফিরাদি আমলের সময়, মাসনুন দুআগুলো শিখবো। খাবার খাওয়ার আগে-পরে দুআ আছে, ঘুমের দুআ আছে, ইস্তিঞ্জার দুআ আছে, উজুর দুআ আছে, মোটকথা প্রত্যহ কাজের আগে-পরে যেসব মাসনুন দুআ আছে ইনফিরাদি আমলের সময় সেগুলো শেখার চেষ্টা করব। কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব দুআ পড়ে দুআ করতেন, সেগুলো পড়ে দুআ করলে আল্লাহ তায়ালা সেই দুআ কবুল করেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, আরেকটা বিষয় খুব ভালোভাবে খেয়াল করব। এখানে অনেক মানুষের সমাগম। কেউ কাউকে কষ্ট দিব না। সবাই সবার প্রতি একরাম করব। সবাই সবার খেদমত করব। একে অন্যের কাজে সহযোগিতা করব। এতে পরস্পরে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। একে অন্যের খেদমত করলে নিজের ভেতরে নম্রতা আসবে। আর আল্লাহ তায়ালা নম্রতাকে পছন্দ করেন।

আমরা যখন ইস্তিঞ্জার জন্য বাথরুমে যাব, তখন যার প্রয়োজন বেশি তাকে আগে দিব। বয়স্ক মানুষদের আগে সুযোগ করে দিব। ঘুমানোর সময় জায়গার সংকুলান না হলে নিজে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে উঠে যাবো এবং অন্য ভাইকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিয়ে আমি দুআ দুরুদে পড়তে থাকব। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘুমাব। কারো যেন কষ্ট না হয় সে দিকে খুব খেয়াল করব।

এখানে আমরা এসেছি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই এখানে যেই কষ্ট হবে তা কষ্ট নয়; বরং তা কুরবানি হিসাবে গণ্য হবে। আর যে আল্লাহর কুরবানি দেয় সে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত হয়।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার মহব্বত ওই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়, যে আমার জন্য একত্রিত হয়। আমরা এই তিন দিন ইজতিমায়ি এবং ইনফিরাদি আমলগুলো এমনভাবে করব, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের আমাদের আমলগুলো পছন্দ করেন। আল্লাহ যখন আমাদের আমল পছন্দ করবেন, তখন মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে এসব কাজে লেগে থাকার তাওফিক দিবেন। শুধু তাই নয় এই কাজ করতে গিয়ে যত জরুরত হবে, সব জরুরত আল্লাহ নিজের খাজানা থেকে পূর্ণ করে দিবেন। সময় লাগলে সময় বের করে দিবেন। যোগ্যতা লাগলে যোগ্যতা দিবেন। সবকিছুরই আল্লাহ তাওফিক দিয়ে দেবেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, এখানে যারা এলাকার জিম্মাদার আছেন, তারা লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে ইজতিমায় এনেছেন। এখন ইনফিরাদি আমলের সময় তাদেরকে তাবলীগে বের করার জন্য তাশকিল করবেন। তাদেরকে তৈরি করবেন। মনে রাখবেন, আপনার দাওয়াতের কারণে একজন মানুষও যদি তৈরি হয়, তিনি সারাজীবন যত আমল করবে তার সমপরিমাণ আপনিও সওয়াব পাবেন। এই জন্য উপস্থিত সবাই নিয়ত করি-হয়ত আমি নিজে তাবলীগে বের হব, আর নিজে না পারলে অন্যকে তাশকিল করে বের করব।

সাহাবায়ে কেরাম আমাদের মতোই হায়াত পেয়েছেন। কিন্তু তাদের মাধ্যমে তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ হেদায়েত পেয়েছেন। এখন তারা দুনিয়ায় নেই। তবুও এসব মানুষের আমলের সওয়াব তারা এখনো পাচ্ছেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, এই তিন দিন দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকে ভালোভাবে বুঝব। এরপরে নিজের এলাকায় গিয়ে এভাবেই মেহনত করতে থাকব। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে আমলের তাওফীক দান করুন।

অনুবাদ : মুহাম্মদুল্লাহ বিন ওয়াহিদ
আলেম সাংবাদিক ও শিক্ষা পরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া মদিনাতুল উলূম, ডাকাতিয়া, ভালুকা, ময়মনসিংহ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ইজতেমায় মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে প্রথম দিনের হেদায়েতি বয়ান

আপডেট সময় ১২:২৭:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে টানা দুই বছর বিরতি দিয়ে শুরু হয়ে গেছে দাওয়াত ও তাবলীগের এ বছরের বিশ্ব ইজতেমা। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গত মঙ্গলবার থেকেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের এই ইজতেমায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মুসল্লিদের সংখ্যাও বেড়েছে।

তিন দিনের এই ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা কিভাবে সময় কাটাবেন সেই বিষয়ে আজ ফজরের নামাজের পরে দিকনির্দেশনা দেয়া হয় ইজতেমার বয়ানের মিম্বার থেকে। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে উর্দু ভাষায় করা সেই বয়ানের অনুবাদ করেছেন আলেম সাংবাদিক মুহাম্মদুল্লাহ বিন ওয়াহিদ।

পাঠকদের জন্য উর্দু বয়ানের বাংলা অনুবাদ হলো : আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় অনুগ্রহ যে তিনি আমাদেরকে এই মোবারক ইজতিমায় এনেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এই ইজতিমায় আসা, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা, অন্যকে দ্বীনের জন্য দাওয়াত দেয়া এসবের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমাদের জীবনে দ্বীন এসে যাওয়া।

মানুষ ব্যবসা করে লাভের জন্য, চাকরি করে টাকা পয়সা উপার্জনের জন্য, পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জনের জন্য, ঠিক একইভাবে আমাদের কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো হেদায়েত পাওয়া। আমরা যেন পরিপূর্ণ দ্বীন মানতে পারি, আল্লাহর পথে জীবন চালাতে পারি- এটাই হলো আমাদের মেহনতের উদ্দেশ্য।

দুনিয়া হলো হালতের ঘর। এখানে সুখ আছে, দুঃখ আছে, হাসি আছে, কান্না আছে, মুসিবত আছে। মোটকথা সবকিছু মিলিয়েই হলো জীবন। যাদের ভেতরে দ্বীন আছে, আল্লাহ তাদের জীবনকে ঠিক করে দেন। দুঃখ দুর্দশা এলে এর থেকে উত্তরণের পথ বের করে তাদেরকে সুখময় জীবন দান করেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, ঈমানের পরে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো সুস্থতা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে সুস্থতার নেয়ামত চাও। কখনো অসুস্থতা ও দুঃখ-দুর্দশা চেয়ো না। আল্লাহ তায়ালা দ্বীনদার মানুষকে এমন সুখময় জীবন দান করেন যে আশপাশের সবাই ঈর্ষান্বিত হয়। হায়, আমিও যদি এমন জীবন পেতাম!

যার ভেতরে দ্বীন এসে গেছে, আল্লাহ তার সবকিছুকে সহজ করে দেন। দুনিয়ার জীবনের পাশাপাশি তার পরকালের জীবনও সহজ এবং সুখের হয়। মৃত্যু সহজ হয়। তার কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দেয়া হয়। কেয়ামতের ভয়াবহ সময়ে তার ওপরে আরশের ছায়া দেয়া হবে। জাহান্নামের আগুনের ওপরে প্রতিষ্ঠিত পুলসিরাত তিনি বিদ্যুৎ বেগে পার হয়ে যাবেন। কেয়ামতের কঠিন দিনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনদার ব্যক্তিকে নিজ হাতে পানি পান করাবেন।

শুধু তাই নয়, তিনি জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়ে চির সুখের জায়গা জান্নাতে চলে যাবেন। সবচেয়ে সফল ব্যক্তি তো তিনিই, যিনি জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়ে জান্নাতে যেতে পারবেন। আর দুনিয়া তো কেবল ধোঁকা ও প্রতারণার জায়গা।

প্রিয় ভাইয়েরা, আমাদের এসব মেহনতের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আমাদের জীবনে দ্বীন নিয়ে আসা। আজকে উম্মতের কাছে দ্বীনের ইলম আছে। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের ওপরে চলার হিম্মত ও শক্তি নেই। আর পরিপূর্ণ দ্বীনের ওপরে চলার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তায়ালা যেসব কাজের আদেশ দিয়েছেন তা করা এবং যেসব কাজের বিষয়ে নিষেধ করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকা।

ইজতিমার তিন দিন আগত মুসল্লিরা কীভাবে সময় কাটাবে এ বিষয়ে মেহমান বলেন, পবিত্র কুরআনে সবার হেদায়েতের অংশ আছে। ইজতিমায় তা’লীমের আমলের মাঝখানে যখন কুরআন শেখা-শেখানোর আমল হবে। তখন সবাই খুব গুরুত্ব দিয়ে এতে শরিক হবেন। যিনি সহিহশুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে পারেন, তিনি যারা পারেন না তাদের শেখাবেন। এর দ্বারা কুরআনের প্রতি মোহাব্বত বৃদ্ধি পাবে। বছরে কমপক্ষে দু’বার কুরআন খতম করা উচিত।

অনেকে মনে করেন, আমি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি। আমার কুরআন শেখার বয়স নেই। আসলে কুরআন শেখার নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কুরআন শেখা যায়। আপনি কুরআন পড়তে না জানলে শেখা শুরু করে দিন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যিনি কুরআন শেখেন এবং শেখান তিনিই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।

এই ইজতিমায় মূলত সিফাত বা গুণ শেখানো হয়। আমার আচার-আচরণ কেমন হবে, আমার চলাফেরা, ওঠাবসা কেমন হবে তা শেখানো হয়। আমার নামাজ, বান্দার প্রতি বান্দার হক, আল্লাহর হক শেখানো হয়। মোটকথা আল্লাহর সন্তুষ্টি আমরা কিভাবে অর্জন করতে পারি তা এখানে শেখানো হয়।

প্রিয় ভাইয়েরা, ইজতিমায়ি আমল যেমন বয়ান তালীম, এগুলো শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমরা ইনফিরাদি বা ব্যক্তিগত আমল শুরু করে দিব। তিন তাসবীহ আদায় করব। বেশি বেশি দুরুদ শরিফ পড়ব। আর দুরুদ পড়ার সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এহসান বা অনুগ্রহের কথা মনে করব। আর আল্লাহর কাছে তাঁর শান অনুযায়ী নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য প্রতিদান চাইব। যারা এভাবে বেশি বেশি দুরুদ পড়বে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্যই শাফায়াত করবেন।

ইনফিরাদি আমলের সময়, মাসনুন দুআগুলো শিখবো। খাবার খাওয়ার আগে-পরে দুআ আছে, ঘুমের দুআ আছে, ইস্তিঞ্জার দুআ আছে, উজুর দুআ আছে, মোটকথা প্রত্যহ কাজের আগে-পরে যেসব মাসনুন দুআ আছে ইনফিরাদি আমলের সময় সেগুলো শেখার চেষ্টা করব। কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব দুআ পড়ে দুআ করতেন, সেগুলো পড়ে দুআ করলে আল্লাহ তায়ালা সেই দুআ কবুল করেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, আরেকটা বিষয় খুব ভালোভাবে খেয়াল করব। এখানে অনেক মানুষের সমাগম। কেউ কাউকে কষ্ট দিব না। সবাই সবার প্রতি একরাম করব। সবাই সবার খেদমত করব। একে অন্যের কাজে সহযোগিতা করব। এতে পরস্পরে মহব্বত বৃদ্ধি পাবে। একে অন্যের খেদমত করলে নিজের ভেতরে নম্রতা আসবে। আর আল্লাহ তায়ালা নম্রতাকে পছন্দ করেন।

আমরা যখন ইস্তিঞ্জার জন্য বাথরুমে যাব, তখন যার প্রয়োজন বেশি তাকে আগে দিব। বয়স্ক মানুষদের আগে সুযোগ করে দিব। ঘুমানোর সময় জায়গার সংকুলান না হলে নিজে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে উঠে যাবো এবং অন্য ভাইকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিয়ে আমি দুআ দুরুদে পড়তে থাকব। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঘুমাব। কারো যেন কষ্ট না হয় সে দিকে খুব খেয়াল করব।

এখানে আমরা এসেছি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই এখানে যেই কষ্ট হবে তা কষ্ট নয়; বরং তা কুরবানি হিসাবে গণ্য হবে। আর যে আল্লাহর কুরবানি দেয় সে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত হয়।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার মহব্বত ওই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়, যে আমার জন্য একত্রিত হয়। আমরা এই তিন দিন ইজতিমায়ি এবং ইনফিরাদি আমলগুলো এমনভাবে করব, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের আমাদের আমলগুলো পছন্দ করেন। আল্লাহ যখন আমাদের আমল পছন্দ করবেন, তখন মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আমাদেরকে এসব কাজে লেগে থাকার তাওফিক দিবেন। শুধু তাই নয় এই কাজ করতে গিয়ে যত জরুরত হবে, সব জরুরত আল্লাহ নিজের খাজানা থেকে পূর্ণ করে দিবেন। সময় লাগলে সময় বের করে দিবেন। যোগ্যতা লাগলে যোগ্যতা দিবেন। সবকিছুরই আল্লাহ তাওফিক দিয়ে দেবেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, এখানে যারা এলাকার জিম্মাদার আছেন, তারা লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে ইজতিমায় এনেছেন। এখন ইনফিরাদি আমলের সময় তাদেরকে তাবলীগে বের করার জন্য তাশকিল করবেন। তাদেরকে তৈরি করবেন। মনে রাখবেন, আপনার দাওয়াতের কারণে একজন মানুষও যদি তৈরি হয়, তিনি সারাজীবন যত আমল করবে তার সমপরিমাণ আপনিও সওয়াব পাবেন। এই জন্য উপস্থিত সবাই নিয়ত করি-হয়ত আমি নিজে তাবলীগে বের হব, আর নিজে না পারলে অন্যকে তাশকিল করে বের করব।

সাহাবায়ে কেরাম আমাদের মতোই হায়াত পেয়েছেন। কিন্তু তাদের মাধ্যমে তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ হেদায়েত পেয়েছেন। এখন তারা দুনিয়ায় নেই। তবুও এসব মানুষের আমলের সওয়াব তারা এখনো পাচ্ছেন।

প্রিয় ভাইয়েরা, এই তিন দিন দাওয়াত ও তাবলীগের কাজকে ভালোভাবে বুঝব। এরপরে নিজের এলাকায় গিয়ে এভাবেই মেহনত করতে থাকব। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে আমলের তাওফীক দান করুন।

অনুবাদ : মুহাম্মদুল্লাহ বিন ওয়াহিদ
আলেম সাংবাদিক ও শিক্ষা পরিচালক, জামিয়া আরাবিয়া মদিনাতুল উলূম, ডাকাতিয়া, ভালুকা, ময়মনসিংহ।