ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ও মায়ের মৃত্যুঝুঁকির ঘটনায় রাজধানীর গ্রিন রোডের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এমতাবস্থায় সাতটি নির্দেশনা দিয়েছে সরকারি সংস্থাটি।
আজ শুক্রবার দুপুরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে পরিদর্শনের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
- নির্দেশনায় ডা. সংযুক্তা সাহার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া পরবর্তীতে সেন্ট্রাল হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না।
- সেন্ট্রাল হাসপাতালের আইসিইউ ও জরুরি সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
- একই সঙ্গে ভুক্তভোগী আঁখির পরিবারের কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ নেওয়া সকল খরচ এবং চিকিৎসাজনিত জটিলতার যাবতীয় ব্যয় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
- আঁখির চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসক এবং চিকিৎসার সব কাগজপত্র বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে পাঠানো হবে। তদন্ত করে চিকিৎসকদের নিবন্ধনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে হবে বিএমডিসির।
- আদালতে চলমান মামলায় অভিযুক্ত ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনার যাবতীয় খরচ সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার কোনো ক্ষতিপূরণ দাবী করলে বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করতে হবে।
- অভিযোগ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিভাগে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনার আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া। এসব নির্দেশনা আজ শুক্রবার থেকেই কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়। এর ব্যত্যয় হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে অধিদপ্তর।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তারা।
ভুক্তভোগী আঁখির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের বিজ্ঞাপনে সেন্ট্রাল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তি সাহার কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে আসছিলেন কুমিল্লার মাহবুবুর রহমান আঁখি। প্রসব ব্যথা উঠলে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে প্রসব করার আশায় কুমিল্লা থেকে গত ৯ জুন সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আঁখিকে। সবকিছু অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও প্রসবে জটিলতা দেখা দেয়।
সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়েন আঁখি। জন্মের কয়েক ঘণ্টা পরই নবজাতকের মৃত্যু হয়। আঁখির অবস্থাও একেবারে সংকটাপন্ন। বর্তমানে তিনি ল্যাব এইড হাসপাতালের সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন। তবে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা তেমন নেই বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় লিখিত অভিযোগ দেন আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। পরে গত বুধবার পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে। এরপর দিনই গতকাল বৃহস্পতিবার দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া সংবাদকে আমলে নিয়ে মাঠে নামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও। সেই অনুযায়ী আজ শুক্রবার সরেজমিনে সেন্ট্রাল হাসপাতালে যায় অধিদপ্তরের একটি টিম। এ সময় তারা আঁখির চিকিৎসাজনিত বিভিন্ন
ত্রুটি দেখতে পান। পাশাপাশি হাসপাতালের জরুরি চিকিৎসা প্রদানে ব্যাপক ঘাটতি পেলে অপারেশন বন্ধসহ নানা পদক্ষেপ নেন।