নেপালে এক মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় ৭২ আরোহীর মধ্যে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির পুলিশ। আর এটিই হচ্ছে হিমালয়ান দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণহানিকর বিমান দুর্ঘটনা। খবর এএফপি।
এ কে ছেত্রি নামে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘৩১টি লাশ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩৬টি লাশ এখনো ৬০০ ফুট গভীর গিরিখাতে পড়ে আছে, যেখানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।’
বিষয়টির অংশত নিশ্চিত করে নেপালের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ২৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরো ৩৩টি লাশ মধ্য নেপালের পোখারার দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে আছে।
বিবিসির খবরে প্রকাশ, রোববার ইয়েতি এয়ারলাইন্সের বিমানটি কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় যাওয়ার পর অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। সেই সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
এটিআর-৭২ মডেলের দুই ইঞ্জিনের বিমানটিতে মোট ৬৮ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের ১৫ জনই ছিলেন বিদেশী নাগরিক। বাকি চারজন ছিলেন বিমানটির কর্মী।
যাত্রীদের মধ্যে ৫৩ জন নেপালি ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। বাকিদের মধ্যে পাঁচজন ভারতীয়, চারজন রাশিয়ান এবং দুইজন কোরিয়ার নাগরিক ছিলেন।
এছাড়া আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা এবং ফ্রান্সের একজন করে নাগরিক ছিলেন বিমানটিতে।
নেপালে ১৯৯২ সালের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পরে এটাই সবচেয়ে বেশি মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা। এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুযায়ী, সেই বছর পাকিস্তানি এয়ারবাস এ৩০০ কাঠমান্ডুতে অবতরণ করতে গিয়ে একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়।
এই বিমানটি ১৫ বছরের পুরনো ছিল বলে জানা যাচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, দুই ইঞ্জিনের এটিআর-৭২ বিমানগুলো যৌথভাবে তৈরি করে এয়ারবাস এবং ইটালির লিওনার্দো কোম্পানি।
ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এ ধরনের ছয়টি বিমান রয়েছে।
নেপালে বিমান দুর্ঘটনা একেবারে বিরল নয়। গত এক যুগে নেপালে অন্তত আটটি বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে যাতে যাত্রী ও ক্রু মিলে ১৬৬ জন নিহত হয়েছে।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান।
সেই দুর্ঘটনায় বিমানের মোট ৫১ জন যাত্রী এবং ক্রু নিহত হন। ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর।
গত বছরের ২৯ মে পোখারা থেকে পশ্চিমের শহর জমসমে যাওয়ার পথে ২২ জন যাত্রী নিয়ে তারা এয়ারের একটি বিমান নিখোঁজ হয়। পরে পাহাড়ের একটি খাঁজে ভেঙ্গে পড়া বিমানটির সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে যাত্রীদের সবাই নিহত হয়েছিল।
বিশ্বের সর্বোচ্চ ১৪টি পর্বত শৃঙ্গের আটটি নেপালে রয়েছে, যার মধ্যে হিমালয়ও অন্যতম। নেপালে যেকোনো সময় পরিবর্তনশীল আবহাওয়া এবং পাহাড়ের মাঝে কঠিন এয়ারস্ট্রিপ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।