ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে যা করবেন

মানুষ যখন সুস্থ থাকেন, তখন তার হৃদযন্ত্র প্রতিমিনিটে ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত পুরো দেহে সঞ্চালন করে। আর এ রক্ত ধমনিগুলোর মাধ্যমে দেহের সব কোষের ভেতরে পৌঁছে যায় এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।

আমাদের হৃদযন্ত্র অনেকটাই ঘড়ির কাঁটার মতো। যন্ত্রে ব্যাটারি বা বিদ্যুতের সংযোগ থাকলে যেমন বিরামহীনভাবে চলে, কোনো ত্রুটি হলে যেমন গতিতে ছন্দপতন ঘটে, হৃদযন্ত্রও তাই। অসচেতনতা, অযত্ন আর অবহেলায় হদযন্ত্রেও ছন্দপতন ঘটে। কারণ আমাদের রক্তনালিতে ধীরে ধীরে চর্বি জমে। তবে সচেতন থেকে কায়িক শ্রম করলে আর কসরতে ঝরিয়ে ফেলা যায় বাড়তি চর্বি। কিন্তু ঘাম ঝরানোর মতো আমাদের ফুরসত কোথায়? বার্ধক্যে উপনীত হলে ক্যালসিয়াম ও রক্তকণিকার জমাট উপাদানে ভরে ওঠে ধমনির গা। হার্টের রক্তনালি বা করোনারি আর্টারি যেসব মাংসপেশিতে নিরবচ্ছিন্ন রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে এতদিন অক্সিজেন জোগাত, দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেনের অভাবে সেই পেশিগুলো একসময় অকেজো হয়ে পড়ে। হার্টের মাংসপেশি নিস্তেজ হওয়ার আগেই অক্সিজেনের অভাবে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। এমন অবস্থা হার্টের অ্যানজাইনার ব্যথা বলে অভিহিত করেন চিকিৎসকরা। এ ধরনের ব্যথা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন বা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বসংকেত। আর এরপরও যদি আমরা হার্টের প্রতি যত্নশীল না হই, তখনই প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়।

হৃদরোগের কারণ : পঁয়ষট্টি বা তার বেশি বয়সী মানুষের অধিকাংশ ক্ষেত্রে করোনারি হৃদরোগের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে সচেতন না হলে পুরুষরা ৪৫ বছর আর নারীরা ৫৫ বছর বয়স থেকেই এ ধরনের মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে থাকেন। শুধু রক্তনালির জমাট বাঁধা নয়, উচ্চ রক্তচাপের কারণেও আমরা আমাদের হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে ফেলতে পারি। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে দুশ্চিন্তা, ধূমপান, মদ্যপান, আয়েশি জীবনযাপন, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ও পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে। অনেক সময় জন্মগত হৃদরোগের কারণেও আমাদের হৃদযন্ত্র কাজের শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে জিনগত কারণে হৃৎপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে হৃদযন্ত্রের ছন্দপতন হতে পারে।

যেভাবে বুঝবেন : রক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে অ্যানজাইনার কারণে বুকে ব্যথা হওয়ার নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে হাড়ের পেছনে অনুভভূত হয়। শরীর ঘেমে ওঠে। ব্যথা অনেক ক্ষেত্রে বাম হাতের ভেতর দিক বরাবর নেমে আসতে পারে। হাঁটাহাঁটি করলে, বিশেষ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে এ ব্যথা তীব্রতর হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের কোনো একপর্যায়ে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে মাথা ও ঘাড়ে ব্যথার সমস্যার কথা এ ধরনের রোগীরা বলে থাকেন। জটিল আকার ধারণ করলে হার্ট ফেইলিওর হয়ে হাত-পা ও পেটে পানি আসতে পারে।

যেভাবে হার্টের যত্ন নেবেন : খাদ্যতালিকায় হার্টের জন্য উপকারী এমন খাবার, যেমন- তাজা শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ, অলিভ ওয়েল বা শর্ষের তেল ও ফল রাখুন। তবে হার্ট ফেইলিওরের সমস্যা থাকলে রসাল ফল খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। খাবারে বাড়তি লবণ পরিহার করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ মিনিট হাঁটুন। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন। মাদক ও তামাক জাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করুন। হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অল্প বয়স থেকেই স্ক্রিনিং করান। মানসিক চাপ কমে বা মনে প্রফুল্লতা আসে- এ ধরনের কর্মকা-ে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান

শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

ও হাসপাতাল, ঢাকা

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে যা করবেন

আপডেট সময় ১০:০৮:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

মানুষ যখন সুস্থ থাকেন, তখন তার হৃদযন্ত্র প্রতিমিনিটে ৫ থেকে ৬ লিটার রক্ত পুরো দেহে সঞ্চালন করে। আর এ রক্ত ধমনিগুলোর মাধ্যমে দেহের সব কোষের ভেতরে পৌঁছে যায় এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে।

আমাদের হৃদযন্ত্র অনেকটাই ঘড়ির কাঁটার মতো। যন্ত্রে ব্যাটারি বা বিদ্যুতের সংযোগ থাকলে যেমন বিরামহীনভাবে চলে, কোনো ত্রুটি হলে যেমন গতিতে ছন্দপতন ঘটে, হৃদযন্ত্রও তাই। অসচেতনতা, অযত্ন আর অবহেলায় হদযন্ত্রেও ছন্দপতন ঘটে। কারণ আমাদের রক্তনালিতে ধীরে ধীরে চর্বি জমে। তবে সচেতন থেকে কায়িক শ্রম করলে আর কসরতে ঝরিয়ে ফেলা যায় বাড়তি চর্বি। কিন্তু ঘাম ঝরানোর মতো আমাদের ফুরসত কোথায়? বার্ধক্যে উপনীত হলে ক্যালসিয়াম ও রক্তকণিকার জমাট উপাদানে ভরে ওঠে ধমনির গা। হার্টের রক্তনালি বা করোনারি আর্টারি যেসব মাংসপেশিতে নিরবচ্ছিন্ন রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে এতদিন অক্সিজেন জোগাত, দীর্ঘক্ষণ অক্সিজেনের অভাবে সেই পেশিগুলো একসময় অকেজো হয়ে পড়ে। হার্টের মাংসপেশি নিস্তেজ হওয়ার আগেই অক্সিজেনের অভাবে বুকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। এমন অবস্থা হার্টের অ্যানজাইনার ব্যথা বলে অভিহিত করেন চিকিৎসকরা। এ ধরনের ব্যথা মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন বা হার্ট অ্যাটাকের পূর্বসংকেত। আর এরপরও যদি আমরা হার্টের প্রতি যত্নশীল না হই, তখনই প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দেয়।

হৃদরোগের কারণ : পঁয়ষট্টি বা তার বেশি বয়সী মানুষের অধিকাংশ ক্ষেত্রে করোনারি হৃদরোগের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে সচেতন না হলে পুরুষরা ৪৫ বছর আর নারীরা ৫৫ বছর বয়স থেকেই এ ধরনের মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে থাকেন। শুধু রক্তনালির জমাট বাঁধা নয়, উচ্চ রক্তচাপের কারণেও আমরা আমাদের হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে ফেলতে পারি। হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে দুশ্চিন্তা, ধূমপান, মদ্যপান, আয়েশি জীবনযাপন, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ও পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে। অনেক সময় জন্মগত হৃদরোগের কারণেও আমাদের হৃদযন্ত্র কাজের শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে জিনগত কারণে হৃৎপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে হৃদযন্ত্রের ছন্দপতন হতে পারে।

যেভাবে বুঝবেন : রক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে অ্যানজাইনার কারণে বুকে ব্যথা হওয়ার নির্দিষ্ট ধরন রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝখানে হাড়ের পেছনে অনুভভূত হয়। শরীর ঘেমে ওঠে। ব্যথা অনেক ক্ষেত্রে বাম হাতের ভেতর দিক বরাবর নেমে আসতে পারে। হাঁটাহাঁটি করলে, বিশেষ করে সিঁড়ি বেয়ে উঠলে এ ব্যথা তীব্রতর হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী, তাদের কোনো একপর্যায়ে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে মাথা ও ঘাড়ে ব্যথার সমস্যার কথা এ ধরনের রোগীরা বলে থাকেন। জটিল আকার ধারণ করলে হার্ট ফেইলিওর হয়ে হাত-পা ও পেটে পানি আসতে পারে।

যেভাবে হার্টের যত্ন নেবেন : খাদ্যতালিকায় হার্টের জন্য উপকারী এমন খাবার, যেমন- তাজা শাকসবজি, সামুদ্রিক মাছ, অলিভ ওয়েল বা শর্ষের তেল ও ফল রাখুন। তবে হার্ট ফেইলিওরের সমস্যা থাকলে রসাল ফল খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন। খাবারে বাড়তি লবণ পরিহার করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ মিনিট হাঁটুন। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন। মাদক ও তামাক জাতীয় দ্রব্য ত্যাগ করুন। হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে অল্প বয়স থেকেই স্ক্রিনিং করান। মানসিক চাপ কমে বা মনে প্রফুল্লতা আসে- এ ধরনের কর্মকা-ে নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান

শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট

ও হাসপাতাল, ঢাকা