ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সরকারি-বেসরকারি হিসাবে বড় গরমিল

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১০:২৯:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩
  • ১৩৭৮ বার পড়া হয়েছে

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকম তথ্য দিচ্ছে। ফলে এক বছরে দেশে ঠিক কী পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ও হতাহতের সংখ্যা কত তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকারি হিসাব বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা দুটিই কমেছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া পরিসংখ্যান তা বলছে না। তাদের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর দুর্ঘটনা ও মৃত্যু প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন জাতীয় এবং স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, পোর্টাল ও টেলিভিশন থেকে তথ্য নিয়ে দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যান করে। এসব প্রতিবেদনে পুলিশের বক্তব্যও থাকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি সংস্থা ঠিক কোন হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান করে তা নিয়ে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিটি মৃত্যুর হিসাব পুলিশ রাখে। দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে লাশ দাফন করতে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন। ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগে। তাই দুর্ঘটনার তথ্য কমানোর সুযোগ নেই।

গতকাল রবিবার রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে এক কর্মশালায় সচিব আমিন উল্লাহ নুরী বেসরকারি সংগঠনের প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার মতে, এগুলো বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। সচিবের মতো পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারাও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শ্রমিক নেতা উবায়দুল্লাহ মজুমদার বলেন, যাত্রী ও পরিবহন খাতকে মুখোমুখি করতে দুর্ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীনসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছিলেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, নিরাপদ সড়ক চাইসহ (নিসচা) সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।

পুলিশের বরাত দিয়ে বিআরটিএ বলছে, ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ২০০ সড়ক দুর্ঘটনায় মোট চার হাজার ৬৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আগের বছরে পাঁচ হাজার ৪৭২ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচ হাজার ৮৪ জনের। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় সড়কে মৃত্যু প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদি হাসান বলেন, দুর্ঘটনায় যদি কোনো প্রাণহানি নাও হয়, সেসব ঘটনাও পুলিশের কাছে লিপিবদ্ধ থাকে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের মালিকদের মধ্যে সমঝোতার তথ্যও থাকে জিডিতে।

অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ২০২২ সালে সড়কে ছয় হাজার ৭৪৯ দুর্ঘটনায় মোট ৯ হাজার ৯৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ এবং মৃত্যু ২৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, ২০২২ সালে সাত হাজার ৭১৩ জনের প্রাণ গেছে সড়কে। আগের বছরে এ সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ২৮৪ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে সড়কে ২২ শতাংশ প্রাণহানি বেড়েছে। নিসচার তথ্য জানায়, গত বছর সড়কে আট হাজার ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় তিন হাজার ১৩৪ জন বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়কে। এ তথ্য বাংলাদেশি সংগঠনগুলোর দেওয়া বলে দাবি করেন সড়ক সচিব। তবে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। বাকি সব ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমেছে।

কর্মশালায় বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু অর্ধেক কমিয়ে আনতে হবে। ২০১০ সালে দেশে প্রতি দশ হাজার যানবাহনের বিপরীতে ১৯.৮১টি দুর্ঘটনায় ১৮.৫৪ জনের প্রাণ গেছে। সেখানে ২০২২ সালে এসে প্রতি দশ হাজার যানবাহনের বিপরীতে ৯.৩টি দুর্ঘটনায় ৮.২৯ জন নিহত হন। এতেই বোঝা যায় যে, দেশে সড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী ভারত, নেপালের তুলনায় বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো।

এদিকে কর্মশালায় বিআরটিএর ডিজিটাল সেবার তথ্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীর ঘরে পৌঁছে দিতে চুক্তি হয় ডাক বিভাগের সঙ্গে। জানানো হয়, এখন থেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে বিআরটিএ-তে যেতে হবে না। ৪৫ টাকায় লাইসেন্স আবেদনকারীর ঘরে পৌঁছে যাবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

সরকারি-বেসরকারি হিসাবে বড় গরমিল

আপডেট সময় ১০:২৯:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৩

দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকম তথ্য দিচ্ছে। ফলে এক বছরে দেশে ঠিক কী পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ও হতাহতের সংখ্যা কত তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

সরকারি হিসাব বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা দুটিই কমেছে। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া পরিসংখ্যান তা বলছে না। তাদের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর দুর্ঘটনা ও মৃত্যু প্রায় এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন জাতীয় এবং স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, পোর্টাল ও টেলিভিশন থেকে তথ্য নিয়ে দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যান করে। এসব প্রতিবেদনে পুলিশের বক্তব্যও থাকে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি সংস্থা ঠিক কোন হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান করে তা নিয়ে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিটি মৃত্যুর হিসাব পুলিশ রাখে। দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে লাশ দাফন করতে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা প্রয়োজন। ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগে। তাই দুর্ঘটনার তথ্য কমানোর সুযোগ নেই।

গতকাল রবিবার রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে এক কর্মশালায় সচিব আমিন উল্লাহ নুরী বেসরকারি সংগঠনের প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার মতে, এগুলো বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। সচিবের মতো পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতারাও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্ঘটনা ও হতাহতের পরিসংখ্যানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শ্রমিক নেতা উবায়দুল্লাহ মজুমদার বলেন, যাত্রী ও পরিবহন খাতকে মুখোমুখি করতে দুর্ঘটনা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হচ্ছে।

কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার, সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীনসহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছিলেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এবং রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, নিরাপদ সড়ক চাইসহ (নিসচা) সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।

পুলিশের বরাত দিয়ে বিআরটিএ বলছে, ২০২২ সালে পাঁচ হাজার ২০০ সড়ক দুর্ঘটনায় মোট চার হাজার ৬৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আগের বছরে পাঁচ হাজার ৪৭২ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে পাঁচ হাজার ৮৪ জনের। অর্থাৎ ২০২১ সালের তুলনায় সড়কে মৃত্যু প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মেহেদি হাসান বলেন, দুর্ঘটনায় যদি কোনো প্রাণহানি নাও হয়, সেসব ঘটনাও পুলিশের কাছে লিপিবদ্ধ থাকে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের মালিকদের মধ্যে সমঝোতার তথ্যও থাকে জিডিতে।

অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, ২০২২ সালে সড়কে ছয় হাজার ৭৪৯ দুর্ঘটনায় মোট ৯ হাজার ৯৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে; যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় দুর্ঘটনা ১৯.৮৯ শতাংশ এবং মৃত্যু ২৭.৪৩ শতাংশ বেড়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, ২০২২ সালে সাত হাজার ৭১৩ জনের প্রাণ গেছে সড়কে। আগের বছরে এ সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ২৮৪ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে সড়কে ২২ শতাংশ প্রাণহানি বেড়েছে। নিসচার তথ্য জানায়, গত বছর সড়কে আট হাজার ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় তিন হাজার ১৩৪ জন বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে বছরে ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়কে। এ তথ্য বাংলাদেশি সংগঠনগুলোর দেওয়া বলে দাবি করেন সড়ক সচিব। তবে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। বাকি সব ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা কমেছে।

কর্মশালায় বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু অর্ধেক কমিয়ে আনতে হবে। ২০১০ সালে দেশে প্রতি দশ হাজার যানবাহনের বিপরীতে ১৯.৮১টি দুর্ঘটনায় ১৮.৫৪ জনের প্রাণ গেছে। সেখানে ২০২২ সালে এসে প্রতি দশ হাজার যানবাহনের বিপরীতে ৯.৩টি দুর্ঘটনায় ৮.২৯ জন নিহত হন। এতেই বোঝা যায় যে, দেশে সড়কে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী ভারত, নেপালের তুলনায় বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো।

এদিকে কর্মশালায় বিআরটিএর ডিজিটাল সেবার তথ্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীর ঘরে পৌঁছে দিতে চুক্তি হয় ডাক বিভাগের সঙ্গে। জানানো হয়, এখন থেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে বিআরটিএ-তে যেতে হবে না। ৪৫ টাকায় লাইসেন্স আবেদনকারীর ঘরে পৌঁছে যাবে।