ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

তারেক-জুবাইদার বিচার

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১২:০৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩
  • ১১৩৮ বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তত্ত্বগতভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ দুটো দিকই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতার প্রয়োগ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ নীতিগতভাবে অনুমোদিত না হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়। এই অস্বাভাবিক প্রবণতা প্রতিরোধ করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রয়েছে নানা ব্যবস্থা। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমনই একটি ব্যবস্থা বা তাত্ত্বিক ধারণা হলো ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি (Theory of separation of powers)। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের কথা বলেন। তবে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে এ নীতি রাজনৈতিক আলোচনা প্রাধান্য লাভ করেনি। আধুনিককালে মন্টেস্কু এ নীতির প্রায়োগিক ব্যাখ্যা দেন।

সাধারণভাবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে বুঝায়, রাষ্ট্রের শাসন আইন ও বিচার ক্ষমতা পৃথক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে ন্যস্ত করা এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ না করা। যখন সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে ভিন্ন ভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়, তখন একে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলা হয়। আর সি আগারওয়ালের মতে, ‘Where all the power of the government is not be concentrated in the hands of an organ is called separation of power.’ মন্টেস্কু বলেন, ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে এমন এক নীতিকে বুঝায়, যেখানে সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা পৃথক হবে এবং কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে না।’ মেডিসনের মতে, ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ হলো, সরকারের তিনটি বিভাগের ওপর ক্ষমতার পৃথক পৃথক ব্যবহার ও নিশ্চিত প্রয়োগ, যেখানে একে অপরের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপমুক্ত।’ এসব সংজ্ঞার মূল বার্তাটি হলো- ‘ক্ষমতার বণ্টন অর্থাৎ প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগের ক্ষমতা আলাদা আলাদাভাবে বণ্টন করা যার ফলে প্রত্যেক বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।’

১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে।’ ১৯৭২ সালের সংবিধানে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিয়ে এ রকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য ২০০৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। বহুল আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগ আলাদা হয়। পরিহাসের বিষয় হলো- বাংলাদেশে কোনো নির্বাচিত বা ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার নয়, একটি সেনাসমর্থিত ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের বদলে অনিশ্চিত করে তোলে। সরকার ২০০৯ সালে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারায় ৪ উপধারা হিসেবে একটি নতুন বিধান যুক্ত করে। এখানে বলা আছে, সরকার চাইলেই যেকোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে। এটি স্পষ্টতই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী। আওয়ামী লীগ সরকার এভাবে বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপে চেষ্টা করে।

বিচার বিভাগকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার একটি চূড়ান্ত নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়। সংবিধানে বিচারকদের অভিযুক্তকরণ বা অভিশংসনের বিধানটি ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’-এর এখতিয়ারভুক্ত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের আরো দু’জন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সমন্বয়ে কাউন্সিলটি গঠিত। আওয়ামী লীগ সরকার বিচারকদের বিচার করার ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে চাইল । সে লক্ষ্যে তারা জাতীয় সংসদে একটি আইন করে বিচারকদের বিচার করার ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত করে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবীর এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ গত ৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দিলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে। ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজ করা হলো। ষোড়শ সংশোধনী যেহেতু সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সেহেতু ওই সংশোধনীর আগে যে ব্যবস্থা ছিল, তা পুনঃস্থাপিত হলো। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত, তার কারণ এটি নয় যে, তা অভ্রান্ত; সেসব সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত, কারণ তা চূড়ান্ত হয়েছে সংবিধানের ভিত্তিতে।’ ওই রায়-পরবর্তী ঘটনাবলি সচেতন নাগরিক সাধারণের জানা কথা। বিচারপতি এস কে সিনহা অপমানিত অপদস্থ হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় তার এই করুণ পরিণতি ঘটে। এর আগে সিনহা সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে বশংবদ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের হাল-হকিকত বোঝানোর জন্য এই তত্ত্বকথা ও তথ্যের প্রয়োজন ছিল।

সর্বশেষ ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে পঞ্চম মামলায় তার সাজা হলো। রায়ে তারেক রহমানের সাথে তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম কোনো মামলার রায়। এ রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তারেক রহমানকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাকে আরো তিন মাস সাজা ভোগ করতে হবে। জুবাইদাকে তিন বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে তাকে আরো এক মাস দণ্ড ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া এই দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসাবে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত।

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা করা হয়। পরবর্তীতে সরকার সব মামলা খারিজ করে নেয়। অথচ ২০২২ সালের ১ নভেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ। ২১ মে মামলার বাদি জহিরুল হুদার জবানবন্দী গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২৪ জুলাই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। ১৯টির মধ্যে পাঁচ মামলায় সাজা-যাবজ্জীবনসহ ২৮ বছরের কারাদণ্ড ঝুলছে তারেক রহমানের মাথায় : লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৯ মামলার মধ্যে অবৈধ সম্পদের মামলার রায়সহ এ পর্যন্ত পাঁচ মামলার বিচার শেষ হয়েছে। মানিলন্ডারিং মামলায় বেকসুর খালাস পান তারেক রহমান। সেই কসুরে সেই বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়।

ওই মামলার প্রতিক্রিয়া হয়েছে ব্যাপক। দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এই রায়ের নিন্দা করেছে। এই রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ৩ আগস্ট রাতে এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত ২ আগস্ট রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রায়ের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাদের সাজা দেয়ার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন এবং দেশের মানুষের কাছে তাদের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ সাজার রায় দেয়া হয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড এবং হয়রানি বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে তাদের সাজা দেয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারো মনে হয়নি। বিচার বিভাগে দলীয়করণের এটি আরেকটি নিকৃষ্ট নজির। সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। সে জন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। এই ফরমায়েশি রায় দেয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্র শূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।’

সমাগত নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রায় প্রদান যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এটি নাবালকও বোঝে। রাজনীতিকরা অভিযোগ করছেন, এটি সরাসরি সরকারপ্রধানের ইচ্ছার পরিপূরক হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে তারা বলেন, আদালতে ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোর গতিতে এই মামলার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আদালতে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে। এক মাসে মামলাটির জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুতগতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা আমলে না নিয়ে তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এই সাজানো মিথ্যা মামলার কার্যক্রম এক মাস ২০ দিনে শেষ করা হয়েছে। মামলার আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, মামলাটি ‘মিথ্যা, কাল্পনিক, সাজানো ও ভিত্তিহীন।’ জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বামী তারেক রহমানকে কথিত অবৈধ সম্পদ অর্জনে ও সংরক্ষণে সহায়তা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ডা: জুবাইদা রহমানের নামে গচ্ছিত ৩৫ লাখ টাকা তার মা সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু জনমনে বিস্ময় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক মামলায়। রাজনীতিবিচ্ছিন্ন এই গৃহবধূ দীর্ঘদিন ধরেই নিশ্চুপ ও নিঃস্পৃহ জীবনযাপন করছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের আশা ছিল- জুবাইদা রহমানকে নির্বাচনের আগে নিয়ে আসা। সরকার বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে। জুবাইদা যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন এবং প্রচারণায় অংশ না নিতে পারেন এ জন্য তাকে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, দণ্ডিত হলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জুবাইদা রহমানের মতো পরিচ্ছন্ন ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে কলুষিত করার মাধ্যমে সরকার জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নির্মূল করে দিতে চায়- এটি স্পষ্ট।
এই সরকার মামলাবাজ হিসেবে দেশে-বিদেশে সুনাম! কুড়িয়েছে। এমন কোনো বিরোধী রাজনৈতিক নেতা নেই যার নামে মামলা নেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছে, তার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এসব মামলায় আসামি ৩৬ লাখ। আর কারাগারে আটক ২০ হাজার। ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর নতুন করে মামলা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি বিশাল। জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, ১৪ বছরে জামায়াতের বিরুদ্ধে ১৬ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে, আসামি প্রায় ১৬ লাখ নেতাকর্মী। তাদের ৪৯৬ জন খুন হয়েছেন। মামলা-হামলার ব্যাপারে সম্ভবত আওয়ামী লীগ বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করতে যাচ্ছে। সবচাইতে দুঃখের বিষয়, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার বিভাজন সুনির্দিষ্ট থাকা সত্ত্বেও তারা সীমালঙ্ঘন করছেন। আল্লাহ কুরআনে বলেন ‘সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা বাকারা-১৯০)

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

তারেক-জুবাইদার বিচার

আপডেট সময় ১২:০৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩

রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তত্ত্বগতভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগ দুটো দিকই গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতার প্রয়োগ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য অপরিহার্য। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ নীতিগতভাবে অনুমোদিত না হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়। এই অস্বাভাবিক প্রবণতা প্রতিরোধ করার জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রয়েছে নানা ব্যবস্থা। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমনই একটি ব্যবস্থা বা তাত্ত্বিক ধারণা হলো ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি (Theory of separation of powers)। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সর্বপ্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের কথা বলেন। তবে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে এ নীতি রাজনৈতিক আলোচনা প্রাধান্য লাভ করেনি। আধুনিককালে মন্টেস্কু এ নীতির প্রায়োগিক ব্যাখ্যা দেন।

সাধারণভাবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে বুঝায়, রাষ্ট্রের শাসন আইন ও বিচার ক্ষমতা পৃথক ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির হাতে ন্যস্ত করা এবং এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ না করা। যখন সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে ভিন্ন ভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেয়া হয়, তখন একে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলা হয়। আর সি আগারওয়ালের মতে, ‘Where all the power of the government is not be concentrated in the hands of an organ is called separation of power.’ মন্টেস্কু বলেন, ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে এমন এক নীতিকে বুঝায়, যেখানে সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা পৃথক হবে এবং কেউ কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে না।’ মেডিসনের মতে, ‘ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ হলো, সরকারের তিনটি বিভাগের ওপর ক্ষমতার পৃথক পৃথক ব্যবহার ও নিশ্চিত প্রয়োগ, যেখানে একে অপরের এখতিয়ারে হস্তক্ষেপমুক্ত।’ এসব সংজ্ঞার মূল বার্তাটি হলো- ‘ক্ষমতার বণ্টন অর্থাৎ প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগের ক্ষমতা আলাদা আলাদাভাবে বণ্টন করা যার ফলে প্রত্যেক বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।’

১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবে।’ ১৯৭২ সালের সংবিধানে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিয়ে এ রকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা বাস্তবায়নের জন্য ২০০৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। বহুল আলোচিত মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগ আলাদা হয়। পরিহাসের বিষয় হলো- বাংলাদেশে কোনো নির্বাচিত বা ‘গণতান্ত্রিক’ সরকার নয়, একটি সেনাসমর্থিত ‘তত্ত্বাবধায়ক’ সরকার এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের বদলে অনিশ্চিত করে তোলে। সরকার ২০০৯ সালে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারায় ৪ উপধারা হিসেবে একটি নতুন বিধান যুক্ত করে। এখানে বলা আছে, সরকার চাইলেই যেকোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে। এটি স্পষ্টতই বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী। আওয়ামী লীগ সরকার এভাবে বিচার বিভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপে চেষ্টা করে।

বিচার বিভাগকে শতভাগ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার একটি চূড়ান্ত নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়। সংবিধানে বিচারকদের অভিযুক্তকরণ বা অভিশংসনের বিধানটি ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’-এর এখতিয়ারভুক্ত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের আরো দু’জন জ্যেষ্ঠ বিচারপতির সমন্বয়ে কাউন্সিলটি গঠিত। আওয়ামী লীগ সরকার বিচারকদের বিচার করার ক্ষমতা নিজেদের হাতে নিতে চাইল । সে লক্ষ্যে তারা জাতীয় সংসদে একটি আইন করে বিচারকদের বিচার করার ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত করে। উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবীর এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারকের আপিল বিভাগ গত ৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে দিলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে। ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায়ে বলা হয়, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজ করা হলো। ষোড়শ সংশোধনী যেহেতু সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক, সেহেতু ওই সংশোধনীর আগে যে ব্যবস্থা ছিল, তা পুনঃস্থাপিত হলো। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত, তার কারণ এটি নয় যে, তা অভ্রান্ত; সেসব সিদ্ধান্ত অভ্রান্ত, কারণ তা চূড়ান্ত হয়েছে সংবিধানের ভিত্তিতে।’ ওই রায়-পরবর্তী ঘটনাবলি সচেতন নাগরিক সাধারণের জানা কথা। বিচারপতি এস কে সিনহা অপমানিত অপদস্থ হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় তার এই করুণ পরিণতি ঘটে। এর আগে সিনহা সরকারের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে বশংবদ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের হাল-হকিকত বোঝানোর জন্য এই তত্ত্বকথা ও তথ্যের প্রয়োজন ছিল।

সর্বশেষ ঘটনায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ নিয়ে পঞ্চম মামলায় তার সাজা হলো। রায়ে তারেক রহমানের সাথে তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম কোনো মামলার রায়। এ রায়ে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তারেক রহমানকে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাকে আরো তিন মাস সাজা ভোগ করতে হবে। জুবাইদাকে তিন বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে তাকে আরো এক মাস দণ্ড ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া এই দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসাবে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত।

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা করা হয়। পরবর্তীতে সরকার সব মামলা খারিজ করে নেয়। অথচ ২০২২ সালের ১ নভেম্বর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ। ২১ মে মামলার বাদি জহিরুল হুদার জবানবন্দী গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২৪ জুলাই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। ১৯টির মধ্যে পাঁচ মামলায় সাজা-যাবজ্জীবনসহ ২৮ বছরের কারাদণ্ড ঝুলছে তারেক রহমানের মাথায় : লন্ডনে নির্বাসিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৯ মামলার মধ্যে অবৈধ সম্পদের মামলার রায়সহ এ পর্যন্ত পাঁচ মামলার বিচার শেষ হয়েছে। মানিলন্ডারিং মামলায় বেকসুর খালাস পান তারেক রহমান। সেই কসুরে সেই বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়।

ওই মামলার প্রতিক্রিয়া হয়েছে ব্যাপক। দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। বিএনপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল এই রায়ের নিন্দা করেছে। এই রায়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ৩ আগস্ট রাতে এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত ২ আগস্ট রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রায়ের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাদের সাজা দেয়ার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাদের যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন এবং দেশের মানুষের কাছে তাদের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার জন্যই পরিকল্পিতভাবে এ সাজার রায় দেয়া হয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও শিষ্টাচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড এবং হয়রানি বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে তাদের সাজা দেয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারো মনে হয়নি। বিচার বিভাগে দলীয়করণের এটি আরেকটি নিকৃষ্ট নজির। সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। সে জন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। এই ফরমায়েশি রায় দেয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্র শূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।’

সমাগত নির্বাচনকে সামনে রেখে এই রায় প্রদান যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এটি নাবালকও বোঝে। রাজনীতিকরা অভিযোগ করছেন, এটি সরাসরি সরকারপ্রধানের ইচ্ছার পরিপূরক হয়েছে। প্রমাণ হিসেবে তারা বলেন, আদালতে ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোর গতিতে এই মামলার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। আদালতে রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে। এক মাসে মামলাটির জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুতগতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন। বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা আমলে না নিয়ে তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এই সাজানো মিথ্যা মামলার কার্যক্রম এক মাস ২০ দিনে শেষ করা হয়েছে। মামলার আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, মামলাটি ‘মিথ্যা, কাল্পনিক, সাজানো ও ভিত্তিহীন।’ জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বামী তারেক রহমানকে কথিত অবৈধ সম্পদ অর্জনে ও সংরক্ষণে সহায়তা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ডা: জুবাইদা রহমানের নামে গচ্ছিত ৩৫ লাখ টাকা তার মা সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু জনমনে বিস্ময় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক মামলায়। রাজনীতিবিচ্ছিন্ন এই গৃহবধূ দীর্ঘদিন ধরেই নিশ্চুপ ও নিঃস্পৃহ জীবনযাপন করছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের আশা ছিল- জুবাইদা রহমানকে নির্বাচনের আগে নিয়ে আসা। সরকার বিষয়টিকে আমলে নিয়েছে। জুবাইদা যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন এবং প্রচারণায় অংশ না নিতে পারেন এ জন্য তাকে তিন বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, দণ্ডিত হলে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জুবাইদা রহমানের মতো পরিচ্ছন্ন ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে কলুষিত করার মাধ্যমে সরকার জিয়া পরিবারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে নির্মূল করে দিতে চায়- এটি স্পষ্ট।
এই সরকার মামলাবাজ হিসেবে দেশে-বিদেশে সুনাম! কুড়িয়েছে। এমন কোনো বিরোধী রাজনৈতিক নেতা নেই যার নামে মামলা নেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীদের নামে যেসব মামলা হয়েছে, তার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এসব মামলায় আসামি ৩৬ লাখ। আর কারাগারে আটক ২০ হাজার। ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর নতুন করে মামলা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি বিশাল। জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, ১৪ বছরে জামায়াতের বিরুদ্ধে ১৬ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে, আসামি প্রায় ১৬ লাখ নেতাকর্মী। তাদের ৪৯৬ জন খুন হয়েছেন। মামলা-হামলার ব্যাপারে সম্ভবত আওয়ামী লীগ বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করতে যাচ্ছে। সবচাইতে দুঃখের বিষয়, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতার বিভাজন সুনির্দিষ্ট থাকা সত্ত্বেও তারা সীমালঙ্ঘন করছেন। আল্লাহ কুরআনে বলেন ‘সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সূরা বাকারা-১৯০)