খুলনায় সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেয়া চার চিকিৎসকের ৭২ ঘন্টায়ও কোনো সন্ধান না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে খুলনা বিএমএ মিলনায়তনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার সুনির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে সাদাপোশাকে চার চিকিৎসককে তুলে নেয়া হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
চার চিকিৎসক হলেন ডা. লুইস সৌরভ সরকার, ডা. নাদিয়া মেহজাবিন তৃষা, ডা. মুত্তাহিন হাসান লামিয়া ও ডা. শর্মিষ্ঠা সাহা।
এ সময় তৃষার মা নিলুফার ইয়াসমিন, সৌরভের মা ম্যাকুয়েল সরকার, লামিয়ার মা ফেরদৌসী আক্তার ও শর্মিষ্ঠার বাবা ডা. দীনবন্ধু মন্ডল বক্তব্য রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ১৮ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে রাত ২টার ভেতরে সবাইকে নিজ বাড়ি থেকে সিআইডি সদস্যরা তুলে নিয়ে যান। এর মধ্যে ডা. লুইসকে তুলে নিয়ে যায় রাত ২টার দিকে। অভিযানের সময় সিআইডি সদস্যরা বাসার মালামাল তছনছসহ আটকের কারণ জানতে চাইলে তারা দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় তারা সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমার মোবাইল নম্বর দিয়ে যান। কিন্তু সেই নম্বরে ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা তাদের কোনো কথা বলার সুযোগ দেননি। তারা বাসায় তল্লাশির নামে ব্যক্তিগত কাগজপত্র ও ব্যবহার্য ইলেকনট্রিক ডিভাইস তছনছ করেন। কোনা গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। এক কাপড়ে পৃথকভাবে নিয়ে গেছেন। একটি যোগাযোগের মোবাইল নম্বর দিলেও সেটি কেউ ধরছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চার চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় সিআইডি সদর দফতরে গিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, সদর দফতরেই তাদের সন্তানদের আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন তাদের আটক করা হয়েছে, এ ব্যাপারে সিআইডির পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেয়া হচ্ছে না। তিন দিন অতিবাহিত হলেও পরিবারের কোনো সদস্যদের সাথে তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। দ্রুত সন্তানদের বিষয়ে তথ্য পেতে স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিভাবকরা বলেন, তাদের সন্তানরা অপরাধী হয়ে থাকলে কী অপরাধ করেছে, তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে আইন অনুযায়ী তাদের এ ব্যাপারে জানার অধিকার রয়েছে।
ডা. লামিয়ার মা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, লামিয়ার আড়াই বছরের একটি শিশুসহ দু’টি সন্তান রয়েছে। শিশুরা তাদের মাকে খুঁজছে, একটি শিশু বুকের দুধ পান করে। আমরা কোনোভাবেই তাদের বোঝাতে পারছি না।
এক প্রশ্নের জবাবে অভিভাবকরা জানান, তাদের সন্তানরা এক সময়ে খুলনার আলোচিত ডা. তারিমের থ্রি ডক্টর কোচিংয়ে পড়াশোনা করেছে। কোচিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী ফি পরিশোধ করেছে। নিজ নিজ মেধা ও যোগ্যতায় তারা চিকিৎসক হয়েছে। তাই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে যা বলা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।
নিখোঁজ চার চিকিৎসকের সন্ধান চেয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) খুলনা জেলা শাখা। রোববার রাতে পুলিশ কমিশনারকে দেয়া চিঠিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকদের খুঁজে বের করার দাবি জানানো হয়।
বিএমএ খুলনা জেলা সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, প্রায় তিন দিন ধরে নিখোঁজ চার চিকিৎসকের সন্ধান চেয়েছি। তারা কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হলে সেটি আইন অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু কোনোভাবেই আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাউকে আটকে রাখা যায় না। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু এখানে কী হচ্ছে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।
চিকিৎসকদের নিখোঁজের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) এ জেড এস তৈমুর রহমান।