বছরের প্রথমদিন সারাদেশে বই উৎসব উদযাপিত হলেও স্কুলগুলোতে শতভাগ বই এখনো পৌঁছায়নি। প্রকাশনা অধিদপ্তর থেকে প্রতিদিনই কমবেশি বই জেলা পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে, ঝালকাঠিতে বিষয় ও শ্রেণিভিত্তিক সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস সময় লাগতে পারে। বৈশ্বিক মন্দার কারণে কাগজ সংকট এবং এনসিটিবির দরপত্র প্রক্রিয়া জটিলতার কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই সব বই যথাসময়ে ছাপানো সম্ভব না হওয়ায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠির চার উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিকের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ২৪ হাজার ৪০০টি বই এবং অনুশীলন খাতা বরাদ্দ হয়েছে, যার শতভাগই পৌঁছেছে।
কিন্তু প্রথম শ্রেণিতে বরাদ্দ হয়েছে ১৭ হাজার ৪৪৫টি বই। এর মধ্যে পৌঁছেছে ১৪ হাজার ৭৪৫টি বই। অবশিষ্ট রয়েছে দুই হাজার ৭০০টি।
দ্বিতীয় শ্রেণিতে বই বরাদ্দ হয়েছে ১৭ হাজার ৫৩৪ বই, যার মধ্যে পৌঁছেছে ১৪ হাজার ৮১৪টি। অবশিষ্ট রয়েছে দুই হাজার ৭২০টি বই।
তৃতীয় শ্রেণিতে বই বরাদ্দ রয়েছে ৭৫ হাজার ৯০০, পৌঁছেছে ৩৭ হাজার ৯৫০টি। বাকি রয়েছে ৩৭ হাজার ৯৫০টি বই।
চতুর্থ শ্রেণিতে বই বরাদ্দ রয়েছে ৬২ হাজার ১৪৪টি, পৌঁছেছে ৩১ হাজার ৭২টি। বাকি রয়েছে ৩১ হাজার ৭২টি বই। পঞ্চম শ্রেণিতে বই বরাদ্দ ৭৫ হাজার ৮৯৪টি। পৌঁছেছে ৩৭ হাজার ৯৪৭টি। বই সরবরাহ বাকি আছে ৩৭ হাজার ৯৪৭টি বই।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের স্কুল, মাদরাসা ও ভোকেশনালে শিক্ষার্থী রয়েছে এক লাখ এক হাজার ৪৮১ জন।
মোট বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৮১টি। এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৯ হাজার ১৪৫টি বই পৌঁছেছে। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে তিন লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০টি।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরে বরাদ্দের অর্ধেক বই আসলেও মাধ্যমিক স্তরে বই এসেছে বরাদ্দের প্রায় ৩৪ শতাংশ।
বিকনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া জাহান বললো, তিনটি বই পেয়েছি, অন্য বই পাওয়ার আশায় আছি।
নবগ্রাম মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি পড়ুয়া নাদিরা, রাখেশ মণ্ডল ও ইশতিয়াক জানায়, গত ১৫ দিন ধরে তারা স্কুলে যাচ্ছে।
কিন্তু নাম ডেকে ঘণ্টাখানেক পরে তাদের স্কুল থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কারণ, এখনো তাদের সব বই আসেনি।
রাজাপুরের বড়ইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আল আমিন বলেন, সব শিক্ষার্থী বই না পাওয়ায় ঠিকভাবে গণিতের ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছে।
বাঁদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, মাধ্যমিকের সব শ্রেণির সম্পূর্ণ বই এখনো আসেনি।
যা এসেছিল তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সব শিক্ষার্থীকে সমানভাবে বই দিতে পারিনি। আমরা শ্রণিকক্ষে পাঠদানের জন্য একসেট বই রেখেছি, তা দিয়ে ক্লাস নিচ্ছি।
নলছিটির সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন একাডেমির প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার সিকদার বলেন, আমাদের সব শিক্ষার্থীকে এখনো বই দিতে পারিনি। অর্ধেক পরিমাণে বই এসেছে তা বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জানুয়ারির অর্ধেকেরেও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। অভিভাবকরা আসছেন বই নিতে। আমাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী দিচ্ছি। সবাইকে বই দিতে না পারলেও আমাদের পাঠদান চলছে।
সদর উপজেলার সাচিলাপুর কিস্তাকাঠি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মোসলেম আলী সিকদার বলেন, স্কুলে ২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে।
সব শ্রেণির সব বই এখনো আসেনি। বইয়ের অভাবে পড়াশোনা তো বন্ধ রাখা যায় না। তাই যেসব বই পেয়েছি সেসব দিয়েই শেখাচ্ছি।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার উম্মে ছালমা লাইজু বলেন, আমাদের কাছে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের সব বই পৌঁছেছে। আমরা তা এরইমধ্যে বিতরণ করেছি। অন্য শ্রেণির সব বই এখনো পৌঁছেনি।
তিনি বলেন, শিগগির সব বই পৌঁছে যাবে। হয়তো এ মাসের মধ্যেই প্রত্যেক শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে প্রতিদিনই বই আসছে। সমানুপাতিকহারে তা বিতরণ করা হচ্ছে।
সব বই এখনো পৌঁছায়নি। শিগগির সব বই পৌঁছে যাবে। হয়তো এ মাসের মধ্যেই প্রত্যেক শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পাবে।