ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রানওয়ে থেকে ১২ কোটি টাকার স্ল্যাব গায়েব

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৩
  • ১১৩৩ বার পড়া হয়েছে

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুকুর নয়, সাগর চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো অংশ নির্মাণের জায়গা খালি করার নামে বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকা রাডার ভবন সংলগ্ন স্টেক ইয়ার্ড থেকে ১২ কোটি টাকা মূল্যের এপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে কংক্রিট স্ল্যাব উধাও করে দিয়েছে একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এসব দ্রব্যসামগ্রী বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে রাডার ভবন ও রানওয়ে ১৪ প্রান্তের কাছে স্তূপ আকারে পড়েছিল। সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো ভবন নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করতে গেলে এই চৌর্যবৃত্তি ধরা পড়ে।

গত ১৭ জুলাই বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে দেওয়া এক চিঠি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অনুপ কুমার তালুকদার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকা। এখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই ঢুকতে পারবে না। তাছাড়া এত বড় অঙ্কের এসব সামগ্রী কারও হাতে করে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। এজন্য ট্রাক কিংবা ভারী যানবাহন রানওয়ে সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে তারপর এগুলো বের করতে হবে। এজন্য অবশ্যই গেটপাসসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন। কারণ এগুলো সরকারি সম্পত্তি। তাছাড়া রানওয়ে সংলগ্ন এলাকা থেকে যে কোনো সামগ্রী অপসারণ করতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে কিংবা নিলামে বিক্রি করার নিয়ম।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, এটি সরকারি সম্পত্তি দিনেদুপুরে ডাকাতি করার মতো ঘটনা। বেবিচকের টার্মিনাল ভবন ও রানওয়ে সাইট- দুটি অংশে ভাগ করে এর উন্নয়ন ও মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষনের কাজ করে থাকে সিভিল ডিভিশন-১। চুরি হওয়া প্রতিটি স্ল্যাব ২৫ ফুট বাই ২৫ ফুট আকারের। থিকনেস ২৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এ ধরনের একটি স্ল্যাব বানাতে ১৩৬৫ সিএফটি কংক্রিট ও ডাওয়েল বার ব্যবহার করতে হয়। পুরনো স্ল্যাব ভাঙলে ১৩৬৫ সিএফটি আকারের ভাঙা স্ল্যাব পাওয়া যায়। ঢাকা শহরসহ সারাদেশে এসব পুরনো স্ল্যাব ক্রাশিং মেশিনে ভেঙে তা থেকে প্রাপ্ত স্টোন চিপস ফের ব্যবহার উপযোগী করা হয়। এভাবে রিসাইক্লিং করে নতুন স্ল্যাব তৈরির শত শত কারখানা ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় পুরনো স্ল্যাব ভাঙা স্টোন চিপস ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট বিক্রি হয়ে থাকে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সাইটে রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের ভাঙা স্ল্যাব দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাডার ও রানওয়ে ১৪ প্রান্ত এলাকায় রাখা ছিল। সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো ভবন নির্মাণ করার জন্য জায়গা খালি করার নামে বিমানবন্দরের একটি সিন্ডিকেট কাউকে না জানিয়ে পুরো মালামাল গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে থার্ড টার্মিনালের কিছু কর্মকর্তা ও কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদার জড়িত রয়েছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সিন্ডিকেটের এক সদস্য এসব স্ল্যাব বিক্রি করে কাওলা এলাকায় ৭২ লাখ টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন। যদি রানওয়ে থেকে বছরে ১ হাজার স্ল্যাব ভাঙা হয়, তাহলে গত ৫ বছরে যে স্ল্যাব ভাঙা হয়েছে তার বাজার মূল্য ছিল কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি বছর রানওয়ে থেকে গড়ে দেড় হাজারের বেশি স্ল্যাব ভাঙা হয়ে থাকে। সে হিসাবে এর বাজার মূল্য ১২ কোটি টাকার বেশি। সরকারি সম্পত্তি স্পট নিলামের ব্যবস্থা না করে শুধু নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য এগুলো গোপনে সরিয়ে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে। এ ঘটনা তদন্ত করলে আরও ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অনুপ কুমার তালুকদার গতকাল সোমবার আমাদের সময়কে জানান, অভিযোগের বিষয়ে বেবিচককে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

রানওয়ে থেকে ১২ কোটি টাকার স্ল্যাব গায়েব

আপডেট সময় ১১:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৩

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুকুর নয়, সাগর চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো অংশ নির্মাণের জায়গা খালি করার নামে বিমানবন্দরের স্পর্শকাতর এলাকা রাডার ভবন সংলগ্ন স্টেক ইয়ার্ড থেকে ১২ কোটি টাকা মূল্যের এপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে কংক্রিট স্ল্যাব উধাও করে দিয়েছে একটি চক্র। দীর্ঘদিন ধরে এসব দ্রব্যসামগ্রী বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে রাডার ভবন ও রানওয়ে ১৪ প্রান্তের কাছে স্তূপ আকারে পড়েছিল। সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো ভবন নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করতে গেলে এই চৌর্যবৃত্তি ধরা পড়ে।

গত ১৭ জুলাই বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে দেওয়া এক চিঠি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অনুপ কুমার তালুকদার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিমানবন্দরের রানওয়ে এলাকাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এলাকা। এখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই ঢুকতে পারবে না। তাছাড়া এত বড় অঙ্কের এসব সামগ্রী কারও হাতে করে নিয়ে যাওয়ারও সুযোগ নেই। এজন্য ট্রাক কিংবা ভারী যানবাহন রানওয়ে সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে তারপর এগুলো বের করতে হবে। এজন্য অবশ্যই গেটপাসসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন। কারণ এগুলো সরকারি সম্পত্তি। তাছাড়া রানওয়ে সংলগ্ন এলাকা থেকে যে কোনো সামগ্রী অপসারণ করতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে কিংবা নিলামে বিক্রি করার নিয়ম।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, এটি সরকারি সম্পত্তি দিনেদুপুরে ডাকাতি করার মতো ঘটনা। বেবিচকের টার্মিনাল ভবন ও রানওয়ে সাইট- দুটি অংশে ভাগ করে এর উন্নয়ন ও মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষনের কাজ করে থাকে সিভিল ডিভিশন-১। চুরি হওয়া প্রতিটি স্ল্যাব ২৫ ফুট বাই ২৫ ফুট আকারের। থিকনেস ২৬ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এ ধরনের একটি স্ল্যাব বানাতে ১৩৬৫ সিএফটি কংক্রিট ও ডাওয়েল বার ব্যবহার করতে হয়। পুরনো স্ল্যাব ভাঙলে ১৩৬৫ সিএফটি আকারের ভাঙা স্ল্যাব পাওয়া যায়। ঢাকা শহরসহ সারাদেশে এসব পুরনো স্ল্যাব ক্রাশিং মেশিনে ভেঙে তা থেকে প্রাপ্ত স্টোন চিপস ফের ব্যবহার উপযোগী করা হয়। এভাবে রিসাইক্লিং করে নতুন স্ল্যাব তৈরির শত শত কারখানা ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে গড়ে উঠেছে। এসব কারখানায় পুরনো স্ল্যাব ভাঙা স্টোন চিপস ৯০ থেকে ৯৫ টাকা দরে প্রতি ঘনফুট বিক্রি হয়ে থাকে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে সাইটে রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের ভাঙা স্ল্যাব দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাডার ও রানওয়ে ১৪ প্রান্ত এলাকায় রাখা ছিল। সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পের এক্সপোর্ট কার্গো ভবন নির্মাণ করার জন্য জায়গা খালি করার নামে বিমানবন্দরের একটি সিন্ডিকেট কাউকে না জানিয়ে পুরো মালামাল গোপনে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে থার্ড টার্মিনালের কিছু কর্মকর্তা ও কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদার জড়িত রয়েছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সিন্ডিকেটের এক সদস্য এসব স্ল্যাব বিক্রি করে কাওলা এলাকায় ৭২ লাখ টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন। যদি রানওয়ে থেকে বছরে ১ হাজার স্ল্যাব ভাঙা হয়, তাহলে গত ৫ বছরে যে স্ল্যাব ভাঙা হয়েছে তার বাজার মূল্য ছিল কমপক্ষে ১২ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতি বছর রানওয়ে থেকে গড়ে দেড় হাজারের বেশি স্ল্যাব ভাঙা হয়ে থাকে। সে হিসাবে এর বাজার মূল্য ১২ কোটি টাকার বেশি। সরকারি সম্পত্তি স্পট নিলামের ব্যবস্থা না করে শুধু নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য এগুলো গোপনে সরিয়ে বাইরে বিক্রি করা হয়েছে। এ ঘটনা তদন্ত করলে আরও ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসতে পারে।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অনুপ কুমার তালুকদার গতকাল সোমবার আমাদের সময়কে জানান, অভিযোগের বিষয়ে বেবিচককে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।