ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

দ্বীনি কাজে মধ্যমপন্থা অবলম্বন

দ্বীনি কাজে অতিরঞ্চন ও অতি শৈথিল্য প্রদর্শন কোনোটাই ভালো নয়, বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই সুন্নাত ও উত্তম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দ্বারা তাই প্রতীয়মান হয়। মহানবী সা: একদা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা:-কে বলেন, হে আবদুল্লাহ! আমি কি খবর পাইনি যে, তুমি দিনে রোজা রাখো ও সারারাত সালাত আদায় করো। আবদুল্লাহ বলেন, হ্যাঁ! হে আল্লাহর রাসূল, আমি তাই করি। তখন মহানবী সা: বলেন, এরূপ করো না। কখনো রোজা রাখবে, কখনো ভঙ্গ করবে। রাতে নামাজ পড়বে আবার নিদ্রাও যাবে। কেননা তোমার ওপর তোমার দেহের হক রয়েছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে। যে ব্যক্তি সারাজীবন রোজা রাখল সে মূলত রোজাই রাখেনি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা সারা বছরের রোজার সমতুল্য।

অতএব প্রতি চন্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো এ তিন দিন রোজা রাখবে এবং প্রতি মাসে একবার কুরআন মাজিদ খতম করবে। হজরত আবদুল্লাহ রা: বলেন, আমি এর থেকেও অধিক করার সামর্থ্য রাখি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তবে তুমি হজরত দাউদ আ:-এর মতো রোজা রাখো, তা উত্তম রোজা। তা হলো এক দিন রোজা রাখা এবং এক দিন ভঙ্গ করা। আর সপ্তাহে একবার কুরআন খতম করো, এর অতিরিক্ত কিছু করতে যেও না। (সহিহ বুখারি, ইবনে মাজাহ)। হজরত সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস রা: বলেন, আমি বিদায় হজের বছর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন প্রিয় নবী সা: আমাকে দেখতে আসেন, আমি তখন আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার রোগের অবস্থা যে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনিই দেখতে পাচ্ছেন। আমার অনেক সম্পদ আছে, অথচ একমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কোনো উত্তরাধিকারী নেই। আমি কি আমার সম্পদের দু-তৃতীয়াংশ দান করতে পারব? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, তা হলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি আরজ করলাম, তবে এক-তৃতীয়াংশ? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, হ্যাঁ! এক-তৃতীয়াংশ দান করতে পারো, তবে তাও অনেক। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়াই উত্তম। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, তোমরা স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করো। তোমরা আমলে বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ বিরক্ত হন না। (সহিহ বুখারি, মিশকাত)

হজরত হুযায়ফা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মানুষের জন্য সুসময়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা কতই না উত্তম, দুঃসময়ে ভারসাম্য বজায় রাখা কতই না উত্তম। আর ইবাদত-বন্দেগিতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা কতই না সৌন্দর্যময় (মুসনাদ বাযযার, কানযুল উম্মাল) মহানবী সা: অন্যত্র বলেন, নিশ্চয়ই দ্বীনি বিধিবিধান সহজ-সাবলীল। যে ব্যক্তি দ্বীনের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করবে দ্বীন তাকে পরাজিত করবে। সুতরাং তোমরা সহজ ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, উত্তম প্রতিদানের সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছ অংশে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো (সহিহ বুখারি ও নাসাঈ)
মহানবী সা: এক বৃদ্ধকে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে পা হেঁচড়ে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, এই ব্যক্তির কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে পায়ে হেঁটে আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে মনস্থ করেছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, এই ব্যক্তিকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করা থেকে আল্লাহ মুক্ত। মহানবী সা: তখন তাকে বাহনে আরোহণ করার নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

মহানবী সা: হিজরতের পর আনসারী সাহাবি সালমান ও মুহাজির সাহাবি আবু দারদা রা:-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। এক দিন সালমান রা: আবু দারদা রা:-এর গৃহে যান। অতঃপর উম্মে দারদাকে (আবু দারদা রা:-এর স্ত্রীকে) নিম্নমানের পোশাকে দেখে বলেন, আপনার এ অবস্থা কেন? উম্মে দারদা বলেন, আপনার ভ্রাতার পৃথিবীর প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। অতঃপর আবু দারদা বাড়ি আসেন। হযরত সালমান রা: এর জন্য খাদ্য আনা হলে, তিনি হজরত আবু দারদা রা:-কেও খেতে বলেন। হজরত আবু দারদা বলেন, আমি রোজাদার। হজরত সালমান রা: বলেন, আপনি না খেলে আমি খাব না। হজরত আবু দারদা রা: অগত্যা রোজা ভঙ্গ করে খানা খান। যখন রাত হয়, তখন হজরত আবু দারদা রা: নফল নামাজ পড়ার জন্য নিদ্রা থেকে উঠে যান। হজরত সালমান রা: বলেন, শুয়ে পড়–ন। হজরত আবু দারদা রা: শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর আবার উঠলে সালমান রা: বলেন, নিদ্রা যান। রাতের শেষ ভাগে সালমান রা: বলেন, এখন উঠুন। অতঃপর উভয়ে একত্রে নামাজ পড়েন।

হজরত সালমান রা: বলেন, আপনার ওপর আপনার প্রভুর হক আছে, নিজের হক আছে, স্ত্রীর হক আছে। প্রত্যেকের হক পরিশোধ করুন। সকালে হজরত আবু দারদা রা: মহানবী সা:-এর কাছে সম্পূণর্ ঘটনা বর্ণনা করেন। মহানবী সা: বলেন, সালমান সঠিক কথাই বলেছে। (সহিহ বুখারি) হজরত মুজিবা বাহেলিয়া বলেন, তাঁর পিতা বা চাচা মহানবী সা:-এর কাছে দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসেন। অতঃপর এক বছর পর আবার রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে আসেন, তখন তার স্বাস্থ্য খুবই দুর্বল ছিল। মহানবী সা: শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আপনার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি দিনে আহার করিনি। সদা রোজা রেখেছি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তুমি নিজের প্রতি অবিচার করেছ (আবু দাউদ )।

এক দিন মহানবী সা:-এর আমল জানার জন্য তার গৃহে তিনজন সাহাবি আসেন। তাঁরা তার আমল সম্পর্কে হজরত আয়েশা রা:-কে জিজ্ঞেস করেন। মহানবী সা:-এর আমলের কথা শুনে তাদের কম মনে হলো। পরে মন্তব্য করল তাঁর আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। কাজেই আমাদের এরূপ আমল করলে চলবে না। একজন বলল, আমি সারা রাত নামাজ পড়ব, রাতে ঘুমাব না। আরেকজন বলল আমি সদা রোজা রাখব। আরেকজন বলল আমি বিয়ে করব না। মহানবী সা: আড়াল থেকে তাদের সব কথা শুনে বললেন, আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভয় করি এবং বেশি চিনি। আমি নিদ্রা যাই আবার নামাজও পড়ি, রোজা রাখি আবার ভঙ্গও করি, বিয়ে করেছি। (বুখারি ও মিশকাত) মহানবী সা:-এর বাণী থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন এবং অতি শৈথিল্য কোনোটাই সুন্নাত নয়; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই উত্তম ও সুন্নাত।

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

দ্বীনি কাজে মধ্যমপন্থা অবলম্বন

আপডেট সময় ১১:০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৩

দ্বীনি কাজে অতিরঞ্চন ও অতি শৈথিল্য প্রদর্শন কোনোটাই ভালো নয়, বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই সুন্নাত ও উত্তম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দ্বারা তাই প্রতীয়মান হয়। মহানবী সা: একদা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা:-কে বলেন, হে আবদুল্লাহ! আমি কি খবর পাইনি যে, তুমি দিনে রোজা রাখো ও সারারাত সালাত আদায় করো। আবদুল্লাহ বলেন, হ্যাঁ! হে আল্লাহর রাসূল, আমি তাই করি। তখন মহানবী সা: বলেন, এরূপ করো না। কখনো রোজা রাখবে, কখনো ভঙ্গ করবে। রাতে নামাজ পড়বে আবার নিদ্রাও যাবে। কেননা তোমার ওপর তোমার দেহের হক রয়েছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার স্ত্রীর হক রয়েছে। যে ব্যক্তি সারাজীবন রোজা রাখল সে মূলত রোজাই রাখেনি। প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা সারা বছরের রোজার সমতুল্য।

অতএব প্রতি চন্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো এ তিন দিন রোজা রাখবে এবং প্রতি মাসে একবার কুরআন মাজিদ খতম করবে। হজরত আবদুল্লাহ রা: বলেন, আমি এর থেকেও অধিক করার সামর্থ্য রাখি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তবে তুমি হজরত দাউদ আ:-এর মতো রোজা রাখো, তা উত্তম রোজা। তা হলো এক দিন রোজা রাখা এবং এক দিন ভঙ্গ করা। আর সপ্তাহে একবার কুরআন খতম করো, এর অতিরিক্ত কিছু করতে যেও না। (সহিহ বুখারি, ইবনে মাজাহ)। হজরত সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস রা: বলেন, আমি বিদায় হজের বছর মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন প্রিয় নবী সা: আমাকে দেখতে আসেন, আমি তখন আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার রোগের অবস্থা যে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনিই দেখতে পাচ্ছেন। আমার অনেক সম্পদ আছে, অথচ একমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কোনো উত্তরাধিকারী নেই। আমি কি আমার সম্পদের দু-তৃতীয়াংশ দান করতে পারব? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, তা হলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি আরজ করলাম, তবে এক-তৃতীয়াংশ? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, হ্যাঁ! এক-তৃতীয়াংশ দান করতে পারো, তবে তাও অনেক। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়াই উত্তম। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) রাসূলুল্লাহ সা: আরো বলেছেন, তোমরা স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করো। তোমরা আমলে বিরক্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ বিরক্ত হন না। (সহিহ বুখারি, মিশকাত)

হজরত হুযায়ফা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মানুষের জন্য সুসময়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা কতই না উত্তম, দুঃসময়ে ভারসাম্য বজায় রাখা কতই না উত্তম। আর ইবাদত-বন্দেগিতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা কতই না সৌন্দর্যময় (মুসনাদ বাযযার, কানযুল উম্মাল) মহানবী সা: অন্যত্র বলেন, নিশ্চয়ই দ্বীনি বিধিবিধান সহজ-সাবলীল। যে ব্যক্তি দ্বীনের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করবে দ্বীন তাকে পরাজিত করবে। সুতরাং তোমরা সহজ ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো, উত্তম প্রতিদানের সুসংবাদ গ্রহণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতের কিছ অংশে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো (সহিহ বুখারি ও নাসাঈ)
মহানবী সা: এক বৃদ্ধকে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে পা হেঁচড়ে যেতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, এই ব্যক্তির কী হয়েছে? লোকেরা বলল, সে পায়ে হেঁটে আল্লাহর ঘর জিয়ারত করতে মনস্থ করেছে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, এই ব্যক্তিকে কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করা থেকে আল্লাহ মুক্ত। মহানবী সা: তখন তাকে বাহনে আরোহণ করার নির্দেশ দেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

মহানবী সা: হিজরতের পর আনসারী সাহাবি সালমান ও মুহাজির সাহাবি আবু দারদা রা:-এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। এক দিন সালমান রা: আবু দারদা রা:-এর গৃহে যান। অতঃপর উম্মে দারদাকে (আবু দারদা রা:-এর স্ত্রীকে) নিম্নমানের পোশাকে দেখে বলেন, আপনার এ অবস্থা কেন? উম্মে দারদা বলেন, আপনার ভ্রাতার পৃথিবীর প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। অতঃপর আবু দারদা বাড়ি আসেন। হযরত সালমান রা: এর জন্য খাদ্য আনা হলে, তিনি হজরত আবু দারদা রা:-কেও খেতে বলেন। হজরত আবু দারদা বলেন, আমি রোজাদার। হজরত সালমান রা: বলেন, আপনি না খেলে আমি খাব না। হজরত আবু দারদা রা: অগত্যা রোজা ভঙ্গ করে খানা খান। যখন রাত হয়, তখন হজরত আবু দারদা রা: নফল নামাজ পড়ার জন্য নিদ্রা থেকে উঠে যান। হজরত সালমান রা: বলেন, শুয়ে পড়–ন। হজরত আবু দারদা রা: শুয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর আবার উঠলে সালমান রা: বলেন, নিদ্রা যান। রাতের শেষ ভাগে সালমান রা: বলেন, এখন উঠুন। অতঃপর উভয়ে একত্রে নামাজ পড়েন।

হজরত সালমান রা: বলেন, আপনার ওপর আপনার প্রভুর হক আছে, নিজের হক আছে, স্ত্রীর হক আছে। প্রত্যেকের হক পরিশোধ করুন। সকালে হজরত আবু দারদা রা: মহানবী সা:-এর কাছে সম্পূণর্ ঘটনা বর্ণনা করেন। মহানবী সা: বলেন, সালমান সঠিক কথাই বলেছে। (সহিহ বুখারি) হজরত মুজিবা বাহেলিয়া বলেন, তাঁর পিতা বা চাচা মহানবী সা:-এর কাছে দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসেন। অতঃপর এক বছর পর আবার রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে আসেন, তখন তার স্বাস্থ্য খুবই দুর্বল ছিল। মহানবী সা: শারীরিক অবস্থা পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আপনার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি দিনে আহার করিনি। সদা রোজা রেখেছি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, তুমি নিজের প্রতি অবিচার করেছ (আবু দাউদ )।

এক দিন মহানবী সা:-এর আমল জানার জন্য তার গৃহে তিনজন সাহাবি আসেন। তাঁরা তার আমল সম্পর্কে হজরত আয়েশা রা:-কে জিজ্ঞেস করেন। মহানবী সা:-এর আমলের কথা শুনে তাদের কম মনে হলো। পরে মন্তব্য করল তাঁর আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। কাজেই আমাদের এরূপ আমল করলে চলবে না। একজন বলল, আমি সারা রাত নামাজ পড়ব, রাতে ঘুমাব না। আরেকজন বলল আমি সদা রোজা রাখব। আরেকজন বলল আমি বিয়ে করব না। মহানবী সা: আড়াল থেকে তাদের সব কথা শুনে বললেন, আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভয় করি এবং বেশি চিনি। আমি নিদ্রা যাই আবার নামাজও পড়ি, রোজা রাখি আবার ভঙ্গও করি, বিয়ে করেছি। (বুখারি ও মিশকাত) মহানবী সা:-এর বাণী থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয় যে, ইবাদতের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন এবং অতি শৈথিল্য কোনোটাই সুন্নাত নয়; বরং মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাই উত্তম ও সুন্নাত।

লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী