টাঙ্গাইলের সখীপুরের দাড়িয়াপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া (৯) গত ৬ সেপ্টেম্বর বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। এরপরে এক ঘণ্টার ভেতরেই বাবা রঞ্জু মিয়ার মোবাইলে দুর্বৃত্তরা অডিও বার্তা পাঠায়– মেয়েকে পেতে হলে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। টাকা না দিলে, পুলিশ বা এলাকার কাউকে জানালে মেয়ের ক্ষতি হবে। পুলিশকে জানালেও কোনোকিছু করতে পারবেন না বলেও ওই মেসেজে উল্লেখ করা হয়। সামিয়ার বাবা সখীপুর থানায় অভিযোগ করলে ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পাশে এক ড্রেনে মাটি চাপা দেয়া শিশু সামিয়ার গলাকাটা ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
শিশু সামিয়া হত্যার ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নিহতের পরিবার ও এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
সামিয়ার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাচাতো ভাই নজরুলের সাথে রঞ্জু মিয়ার মনোমালিন্য চলছিল। সেই সাথে শাহাবুদ্দিন ওরফে জয়, মানিক এবং টিটন রঞ্জু মিয়ার বাড়ির পাশেই এক ঝুপড়িতে বসে নিয়মিত মাদক সেবন করত। এ নিয়ে রঞ্জু মিয়ার সাথে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তিনি পুলিশে অভিযোগ করার ভয় দেখানোর আনুমানিক ২০ দিনের মাথায় সামিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।
রঞ্জু মিয়া বলেন, এ কারণেই ওই চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছি। তারা চারজন নিজেরা মাদক গ্রহণের পাশাপাশি মাদকের ব্যবসার সাথেও জড়িত। শুনেছি তাদের দুই-একজন গ্রেফতার হয়ে আবার জামিনে মুক্তও হয়েছে। এখন সবাই পলাতক। যারা জামিনে এসেছে তাদেরকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা যদি অপরাধী না হয়ে থাকে, তাহলে পলাতক কেন? আদালতে নির্দোষ প্রমাণ হলে তো ছাড়া পেয়েই যেত।
রঞ্জু মিয়া আবেগ তাড়িত হয়ে বলেন, আমরা না স্বাধীন দেশে বাস করি? তাহলে আমাদের সাথে এমন হলো কেন? দেশে কি বিচার নেই? আমার ছোট্ট মেয়েটা মারা গেছে ১৬ দিন হয়ে গেল। অথচ হত্যাকারীরা নিজেদের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি কি তাহলে দেশ থেকে চলে যাব? আমরা কি বিচার পাবো না?
তিনি বলেন, এমপি জোয়াহের, বঙ্গবীরসহ আরো অনেকেই বিচার পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে গেলেন। তারা আজ কোথায়? আমার মেয়ের হত্যাকারীদের তো বিচার হচ্ছে না?
রঞ্জু মিয়া দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার মেয়ের সাথে অত্যন্ত নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। গলা কাটা হয়েছে। চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। পেট কাটা হয়েছে। আমার মেয়ের সাথে এমন কাজও করা হয়েছে যা আমি বাবা হয়ে মুখে আনতে পারবো না। আমার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে দ্রুত আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।
সখীপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর (এস আই) মাসুদ সামিয়ার হত্যা মামলার অগ্রগতির বিষয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি। আমাদের সন্দেহেও কেউ নেই। তিনি বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এখনো আমাদের হাতে আসেনি। তাই সামিয়াকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে ডাক্তার বলতে পারবে। আমাদের জানা নেই।’