ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩
  • ১১০৭ বার পড়া হয়েছে

আরবি হিজরি মাসগুলোর মধ্যে রবিউল আউয়াল মাস হচ্ছে তৃতীয় মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে এই মাসটি বিশেষভাবে উল্লেøখযোগ্য। এ মাসকে বলা হয় মানব ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের স্মারক। এ মাসেই সাইয়িদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়িন হজরত মুহাম্মদ সা: এই পৃথিবীতে আগমন করেন, আবার এ মাসেই তিনি তাঁর ওপর অর্পিত রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে নিজ প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে গমন করেন।

রবিউল আউয়ালের অর্থ : আরবিতে রবিউল আউয়ালের অর্থ প্রথম বসন্ত। বসন্তের আগমনে যেমন গাছের পুরনো পাতা ঝরে গিয়ে নতুন পাতার মাধ্যমে গাছ নতুন করে সজীবতা লাভ করে, অনুরূপ বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা:-এর আগমনে অতীতের পয়গম্বরদের শরিয়ত রহিত হয়ে মুহাম্মদ সা:-এর ‘ইসলাম’ নামক শরিয়ত সঞ্জীবিত ও পূর্ণতা লাভ করে।

রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত : এই মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বে। এই মাসটি বেশ কিছু কারণে অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। তার মধ্যে প্রথমত, এই মাসের মধ্যে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত নবী করিম সা: আগমন করেন। আগমনের দিনটি ছিল সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল। নবীজীর আগমনের কারণে এই মাসটি অনেক তাৎপর্য বহন করে এবং এই মাসটি সব মাসের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। আর এটিই সবচেয়ে বড় কারণ। দ্বিতীয়ত, এই মাসে আল্লাহর রাসূল সা:-এর প্রথম শাদি মোবারক হয়। অর্থাৎ তিনি আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা রা:-কে বিয়ের মাধ্যমে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করেন। তৃতীয়ত, এই মাসের মধ্যে মুসলমানদের জন্য সর্বপ্রথম মসজিদ তৈরি করা হয় কুবা নামক জায়গায়। মসজিদে কুবা মুসলমানদের প্রথম মসজিদ যা নির্মিত হয়েছে রবিউল আউয়াল মাসে। চতুর্থ, এই মাসে আল্লাহর রাসূল সা: প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরতের মাধ্যমে মদিনায় পৌঁছান এবং যে দিনটিতে তিনি মদিনায়ে পৌঁছেছেন তা ছিল সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল। পঞ্চম, এই মাসেই বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, উম্মত দরদি, নবীকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ সা:-এর উপর আরোপিত রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষ করে দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণতার মাধ্যমে নিজের প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করে রওজা মোবারকে শুয়ে আছেন। এ ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে।

মু’মিনের হৃদয়ে আনন্দ : এই পবিত্র মাসে রাসূল সা:-এর আগমনের ফলে প্রতিটি মু’মিনের হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় এবং রাসূলের প্রতি মহব্বতের দরিয়া প্রবাহিত হয়। মহব্বতের এ জোয়ার এ মাসে সর্বত্রই টের পাওয়া যায়। এই মাসে ‘মিলাদুন্নবী সা:’ ব্যানারে সিরাতুন্নবীর এত চর্চা হয় তা আর কোনো মাসে হয় না। বড় বড় সেমিনারে, মাহফিলে, মসজিদে, অফিসে, বাড়িতে, সর্বত্র এ মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন হয় এবং তাতে রাসূল সা:-এর জীবন থেকে অংশবিশেষ ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম আলোচনা করে থাকেন।

মাহে রবিউল আউয়াল জগৎবাসীর কাছে, বিশেষত মুসলিম উম্মাহর কাছে নববী আদর্শের তথা আত্মশুদ্ধি ও সমাজ সংস্কারের পয়গাম নিয়ে আসে। এ পয়গাম বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা ভূখণ্ডের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং সর্বজনীন।

বিভিন্ন আমল : কুরআন-হাদিসে মধ্যে এই মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কোনো আমল বা ইবাদত পাওয়া যায় না। তবে এমন কতক আমল রয়েছে যা এই মাসের মধ্যেও করা হয়। যেমন- প্রতি সোমবারে রোজা রাখা। সোমবারে রোজা রাখার ব্যাপারে হাদিসের মধ্যে এসেছে- হজরত আবু কাতাদা রা: থেকে বর্ণিত- সোমবারের রোজা সম্পর্কে নবী করিম সা:-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, ‘এ দিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং এ দিনেই আমি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছি বা আমার ওপর (কুরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (মুসলিম-১১৬২)

অন্য হাদিসের মধ্যে এসেছে- আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলল্লাহ সা: বলেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহ তায়ালার দরবারে) আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলগুলো যেন রোজা পালনরত অবস্থায় পেশ করা হোক এটিই আমার পছন্দনীয়।’ (তিরমিজি-৭৪৭) উপরোক্ত দুই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, নবী করিম সা: শুকরিয়াস্বরূপ প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন। কারণ প্রথমত, সোমবারে তিনি দুনিয়ায় আগমন করেছেন। দ্বিতীয়ত, সোমবারে তাঁর ওপর সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়েছিল। তৃতীয়ত, সোমবারে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমল উপস্থাপন করা হয়। এ জন্যই আল্লাহর রাসূল প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি সোমবারে রোজা রাখতে চায় নবী করিম সা: যেভাবে রোজা রেখেছেন তাহলে সে রোজা রাখতে পারবে এবং এই দিনে সে যদি শুকরিয়া আদায় করে তার নিয়ামত পাওয়ার কারণে ও আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রত্যাশা করে তাহলে এটি হবে অতি উত্তম বিষয় এবং প্রতি সোমবারের রোজা রাখা এটি একটি মুস্তাহাব আমল।

লেখক :

  • জুনাইদ রাইসী

শিক্ষার্থী, দারুল হাদিস, আব্বাসি মন্জিল, জৌনপুর

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব

আপডেট সময় ১১:১৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩

আরবি হিজরি মাসগুলোর মধ্যে রবিউল আউয়াল মাস হচ্ছে তৃতীয় মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে এই মাসটি বিশেষভাবে উল্লেøখযোগ্য। এ মাসকে বলা হয় মানব ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের স্মারক। এ মাসেই সাইয়িদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়িন হজরত মুহাম্মদ সা: এই পৃথিবীতে আগমন করেন, আবার এ মাসেই তিনি তাঁর ওপর অর্পিত রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষে নিজ প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে গমন করেন।

রবিউল আউয়ালের অর্থ : আরবিতে রবিউল আউয়ালের অর্থ প্রথম বসন্ত। বসন্তের আগমনে যেমন গাছের পুরনো পাতা ঝরে গিয়ে নতুন পাতার মাধ্যমে গাছ নতুন করে সজীবতা লাভ করে, অনুরূপ বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা:-এর আগমনে অতীতের পয়গম্বরদের শরিয়ত রহিত হয়ে মুহাম্মদ সা:-এর ‘ইসলাম’ নামক শরিয়ত সঞ্জীবিত ও পূর্ণতা লাভ করে।

রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত : এই মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা অন্য মাসের তুলনায় অনেক ঊর্ধ্বে। এই মাসটি বেশ কিছু কারণে অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে। তার মধ্যে প্রথমত, এই মাসের মধ্যে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত নবী করিম সা: আগমন করেন। আগমনের দিনটি ছিল সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল। নবীজীর আগমনের কারণে এই মাসটি অনেক তাৎপর্য বহন করে এবং এই মাসটি সব মাসের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে। আর এটিই সবচেয়ে বড় কারণ। দ্বিতীয়ত, এই মাসে আল্লাহর রাসূল সা:-এর প্রথম শাদি মোবারক হয়। অর্থাৎ তিনি আম্মাজান খাদিজাতুল কুবরা রা:-কে বিয়ের মাধ্যমে জীবন সঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করেন। তৃতীয়ত, এই মাসের মধ্যে মুসলমানদের জন্য সর্বপ্রথম মসজিদ তৈরি করা হয় কুবা নামক জায়গায়। মসজিদে কুবা মুসলমানদের প্রথম মসজিদ যা নির্মিত হয়েছে রবিউল আউয়াল মাসে। চতুর্থ, এই মাসে আল্লাহর রাসূল সা: প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে হিজরতের মাধ্যমে মদিনায় পৌঁছান এবং যে দিনটিতে তিনি মদিনায়ে পৌঁছেছেন তা ছিল সোমবার ১২ রবিউল আউয়াল। পঞ্চম, এই মাসেই বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, উম্মত দরদি, নবীকুল শিরোমণি হজরত মুহাম্মদ সা:-এর উপর আরোপিত রিসালাতের দায়িত্ব পালন শেষ করে দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণতার মাধ্যমে নিজের প্রভুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করে রওজা মোবারকে শুয়ে আছেন। এ ছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে।

মু’মিনের হৃদয়ে আনন্দ : এই পবিত্র মাসে রাসূল সা:-এর আগমনের ফলে প্রতিটি মু’মিনের হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায় এবং রাসূলের প্রতি মহব্বতের দরিয়া প্রবাহিত হয়। মহব্বতের এ জোয়ার এ মাসে সর্বত্রই টের পাওয়া যায়। এই মাসে ‘মিলাদুন্নবী সা:’ ব্যানারে সিরাতুন্নবীর এত চর্চা হয় তা আর কোনো মাসে হয় না। বড় বড় সেমিনারে, মাহফিলে, মসজিদে, অফিসে, বাড়িতে, সর্বত্র এ মাসে অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন হয় এবং তাতে রাসূল সা:-এর জীবন থেকে অংশবিশেষ ইসলামী চিন্তাবিদ ও ওলামায়ে কেরাম আলোচনা করে থাকেন।

মাহে রবিউল আউয়াল জগৎবাসীর কাছে, বিশেষত মুসলিম উম্মাহর কাছে নববী আদর্শের তথা আত্মশুদ্ধি ও সমাজ সংস্কারের পয়গাম নিয়ে আসে। এ পয়গাম বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা ভূখণ্ডের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং সর্বজনীন।

বিভিন্ন আমল : কুরআন-হাদিসে মধ্যে এই মাসের সাথে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কোনো আমল বা ইবাদত পাওয়া যায় না। তবে এমন কতক আমল রয়েছে যা এই মাসের মধ্যেও করা হয়। যেমন- প্রতি সোমবারে রোজা রাখা। সোমবারে রোজা রাখার ব্যাপারে হাদিসের মধ্যে এসেছে- হজরত আবু কাতাদা রা: থেকে বর্ণিত- সোমবারের রোজা সম্পর্কে নবী করিম সা:-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, ‘এ দিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং এ দিনেই আমি নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছি বা আমার ওপর (কুরআন) নাজিল করা হয়েছে।’ (মুসলিম-১১৬২)

অন্য হাদিসের মধ্যে এসেছে- আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলল্লাহ সা: বলেন, প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহ তায়ালার দরবারে) আমল পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলগুলো যেন রোজা পালনরত অবস্থায় পেশ করা হোক এটিই আমার পছন্দনীয়।’ (তিরমিজি-৭৪৭) উপরোক্ত দুই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, নবী করিম সা: শুকরিয়াস্বরূপ প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন। কারণ প্রথমত, সোমবারে তিনি দুনিয়ায় আগমন করেছেন। দ্বিতীয়ত, সোমবারে তাঁর ওপর সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়েছিল। তৃতীয়ত, সোমবারে আল্লাহ তায়ালার কাছে আমল উপস্থাপন করা হয়। এ জন্যই আল্লাহর রাসূল প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি সোমবারে রোজা রাখতে চায় নবী করিম সা: যেভাবে রোজা রেখেছেন তাহলে সে রোজা রাখতে পারবে এবং এই দিনে সে যদি শুকরিয়া আদায় করে তার নিয়ামত পাওয়ার কারণে ও আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রত্যাশা করে তাহলে এটি হবে অতি উত্তম বিষয় এবং প্রতি সোমবারের রোজা রাখা এটি একটি মুস্তাহাব আমল।

লেখক :

  • জুনাইদ রাইসী

শিক্ষার্থী, দারুল হাদিস, আব্বাসি মন্জিল, জৌনপুর