ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) চিকিৎসাকেন্দ্রে ভাঙচুরের দায়ে এক শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া র্যাগিংয়ের দায়ে দু’জনকে স্থায়ী ও তিনজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা। এদিকে র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিকেলে প্রধান ফটক অবরোধ করেন তাদের বন্ধুরা।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রকাশনা ও জনসংযোগ দফতরের ফেসবুক পেইজে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে দুই ঘটনায় অভিযুক্ত ছয়জনকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সে মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টা কর্তৃক ঘোষণাকৃত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন ঘোষণার বিষয়ে জনসংযোগ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. আমানুর আমান বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। মিটিংয়ে কি হয়েছে তা আমি জানি না। ভিসি স্যারের মাধ্যমে যা এসেছে আমি তা প্রচার করেছি।’
ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মিটিং শেষে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘র্যাগিংয়ের দায়ে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হিশাম নাজির শুভ ও মিজানুর রহমান ইমন স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় একই বিভাগের শাহরিয়ার পুলক, শেখ সালাউদ্দীন সাকিব ও সাদমান সাকিব আকিবকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে মধ্যরাতে চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের ঘটনায় আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্যকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।’
এদিকে এ সিদ্ধান্তের পর র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কার বিষয়টিকে অন্যায্য দাবি করে বিকেল ৪টায় প্রধান ফটক অবরোধ করে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দাবি করেন, র্যাগিংয়ের মতো কোনো ঘটনাই সেদিন ঘটেনি। এছাড়া অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ মুঠোফোনে লাউড স্পীকারে শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘এটি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হবে এরপর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ প্রক্টরের এ বক্তব্যে দুই ঘণ্টা পর আবরোধ ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় দুই ঘটনায় ছয় অভিযুক্তকে সাময়িক বহিষ্কার করে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদানের ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সাথে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আতিক আরমান এবং সালমান আজিজের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির তদন্তে ঘটনার সাথে কাব্যের সংশ্লিষ্টতা পেলেও আরমান আতিক এবং সালমান আজিজের সংশ্লিষ্টতা পায়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শুভ, ইমন পুলক, সাকিব ও আকিবের বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেন একই বিভাগের এক নবীন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানা গেছে।