ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

কী ঘটবে কাল

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৫:৫৪:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩
  • ১১১৩ বার পড়া হয়েছে

২৮ অক্টোবর ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। একই দিনে রাজধানীতে স্বল্প দূরত্বে আবারো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দেয়ায় রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর পাশাপাশি বিএনপির জোটসঙ্গী মিত্র দলগুলোও প্রেস ক্লাব, পল্টন, বিজয় নগরসহ কয়েকটি পয়েন্টে সমাবেশ করবে। এখানেই শেষ নয়, এবার জামায়াতে ইসলামীও ব্যাংকপাড়া মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়ায় উত্তপ্ত রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এ দিকে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। আর বিএনপি সমাবেশ করবে নয়াপল্টনে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রত্যেকের জায়গা থেকে পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে। ডিএমপির এক চিঠির জবাবেও গতকাল অনড় অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে দলগুলো। একেবারে কাছাকাছি স্পটগুলোতে লাখ লাখ লোকের সমাগম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। ফলে দেশের সব শ্রেণী-পেশার নানা বয়সী রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে একটাই প্রশ্ন- কী ঘটতে যাচ্ছে আগামীকাল।

পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে অনেকেই বলছেন, দেশের ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর এমনিতেই একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দেশের রাজনীতিতে কি আরেকটি ২৮ অক্টোবর ঘটবে নাকি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমাবেশ শেষ করবে? তবে আশঙ্কা রয়েছে, যেকোনো পক্ষ থেকে কোনো হটকারি কিছু করা হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক প্রকার ভীতি সঞ্চার করছে। গতকাল বিকেল থেকেই সাধারণ মানুষ এক প্রকার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে যাতায়াত করছে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক মাঠ গরম করা বক্তব্যে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অনেকটা থমথমে হয়ে পড়েছে। এর আগেও গত ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাল্টাপাল্টি এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। চলতি পথেও মানুষের মধ্যে এর প্রভাব পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে যেকোনো সময় বড় ধরনের সঙ্ঘাতে রূপ নিতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই সরকার বা সরকারি দল এই সঙ্ঘাতময় বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারে। বিরোধী দল যে দিন সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ একই দিনে সমাবেশ না দিয়ে অন্য দিন পালন করতে পারতো।

সাম্প্রতিক সময়ে বিবদমান বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে। আগামীকাল শনিবারও আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে। ওই দিন বিএনপির যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও ঢাকায় পৃথকভাবে মহাসমাবেশ পালন করবে। গত এক দশকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বড় দুই দলসহ সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর একই দিনে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বড় সমাবেশ ঘোষণা নজিরবিহীন হলেও গত ২৭ জুলাই বড় ধরনের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছিল। তবে ২৮ অক্টোবরের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মহলের মধ্যে একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। রাস্তার পাশে ফুটপাথের চায়ের দোকানে এখন নতুন করে আলোচনার ঝড় বইছে- একই দিনে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর লাখ লাখ লোকের জমায়েত হলে সে দিন কী ঘটতে পারে? রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যেও একটা কৌতূহল কাজ করছে। ওই দিন কি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে নাকি রাজনীতি সঙ্ঘাতময় হয়ে উঠবে? পুলিশ কি বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেবে নাকি গত ১০ ডিসেম্বরের মতো গোলাপবাগের গরুর হাটে নিয়ে যাবে? এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে।

২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই আওয়ামী লীগ সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানের কথা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে পুলিশের অনুমতি প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেনু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই। একই দিন নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথা একটাই- দ্যা আনসার অব ভায়োলেন্স ইজ ভায়োলেন্স, নট সাইলেন্স। আর কিছু না। আমি নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি অবরোধ করলে জনগণকে সাথে নিয়ে পাল্টা অবরোধ করা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না, বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যদি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায় যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর থেকেই বিএনপি ও তার মিত্ররা রাজপথে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। কিছুতেই তারা রাজপথে সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বরও রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশের ডাক দিয়েও সফল হয়নি। এ বছরের শুরু থেকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। এ দেশে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক- তারা এটা চায়। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ প্রতিনিধিদল দফায় দফায় সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। যেটা সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের চাপ হিসেবে দেখছে সরকারবিরোধীরা। এ মাসেও কয়েক দফায় মার্কিন প্রতিনিধিরা সফর করে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চাপ দিয়ে গেছে।

সূত্র আরো বলছে, সরকারের ওপর বিদেশীদের নানামুখী চাপ ও শেষমেশ মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা ও বাস্তবায়নের পরই আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজপথে অনেকটা সহনশীল আচরণ করছে। এ অবস্থায় রাজপথে বিএনপি ও তার মিত্রদের চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে। তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বড় ধরনের সভা-সমাবেশ করে শক্তির জানান দিচ্ছে। গত ১২ জুলাই ঢাকায় বড় সমাবেশ করে বিএনপি সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করে। এর পরই সরকার পতনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের এক দফা দাবি আদায়ে গত ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পর দিন বিএনপি রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। যদিও ওই দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর মারমুখী অবস্থানের ফলে মাঠে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি ও তার মিত্ররা। এরই মধ্যে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ডিএমপি অনুমতি না দিলেও সেখানে সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে মাঠের এই প্রধান বিরোধী দল। গতকাল ডিএমপি তাদের কাছে বিকল্প ভেনুর প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিলে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই বিএনপির মহাসমাবেশ হবে বলে জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শনিবার ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এটাই উপযুক্ত জায়গা। এখানে আমরা একাধিকবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। সারা দেশের গণতন্ত্রহারা বঞ্চিত মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসার দৃঢ প্রত্যয় নিয়েছে। অব্যাহত গণগ্রেফতারের মধ্যেও দীপ্ত অঙ্গীকারে তারা ঢাকার দিকে ছুটে আসছে। এই মহাসমাবেশ হবে নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক।

এ দিকে জামায়াতে ইসলামী শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু শাপলা চত্বরই নয়, ২৮ অক্টোবর ঢাকার কোথাও জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জামায়াতে ইসলাম এখন পর্যন্ত কোনো নিবন্ধিত দল না, কাজেই তারা যদি জামায়াতে ইসলামের ব্যানারে আসে, তাহলে অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীকে কোনোভাবেই কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার। তিনি বলেন, জামায়াতের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। জামায়াতকে কোনোভাবেই সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

কী ঘটবে কাল

আপডেট সময় ০৫:৫৪:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৩

২৮ অক্টোবর ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। একই দিনে রাজধানীতে স্বল্প দূরত্বে আবারো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পাল্টাপাল্টি সমাবেশের ডাক দেয়ায় রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর পাশাপাশি বিএনপির জোটসঙ্গী মিত্র দলগুলোও প্রেস ক্লাব, পল্টন, বিজয় নগরসহ কয়েকটি পয়েন্টে সমাবেশ করবে। এখানেই শেষ নয়, এবার জামায়াতে ইসলামীও ব্যাংকপাড়া মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয়ায় উত্তপ্ত রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এ দিকে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করবে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে। আর বিএনপি সমাবেশ করবে নয়াপল্টনে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রত্যেকের জায়গা থেকে পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে। ডিএমপির এক চিঠির জবাবেও গতকাল অনড় অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে দলগুলো। একেবারে কাছাকাছি স্পটগুলোতে লাখ লাখ লোকের সমাগম নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। ফলে দেশের সব শ্রেণী-পেশার নানা বয়সী রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে একটাই প্রশ্ন- কী ঘটতে যাচ্ছে আগামীকাল।

পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে অনেকেই বলছেন, দেশের ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর এমনিতেই একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দেশের রাজনীতিতে কি আরেকটি ২৮ অক্টোবর ঘটবে নাকি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমাবেশ শেষ করবে? তবে আশঙ্কা রয়েছে, যেকোনো পক্ষ থেকে কোনো হটকারি কিছু করা হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক প্রকার ভীতি সঞ্চার করছে। গতকাল বিকেল থেকেই সাধারণ মানুষ এক প্রকার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে যাতায়াত করছে। সরকার ও বিরোধী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক মাঠ গরম করা বক্তব্যে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অনেকটা থমথমে হয়ে পড়েছে। এর আগেও গত ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে এখন রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাল্টাপাল্টি এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। চলতি পথেও মানুষের মধ্যে এর প্রভাব পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে যেকোনো সময় বড় ধরনের সঙ্ঘাতে রূপ নিতে পারে- এমন আশঙ্কাও রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই সরকার বা সরকারি দল এই সঙ্ঘাতময় বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারে। বিরোধী দল যে দিন সমাবেশ ডেকেছে আওয়ামী লীগ একই দিনে সমাবেশ না দিয়ে অন্য দিন পালন করতে পারতো।

সাম্প্রতিক সময়ে বিবদমান বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে। আগামীকাল শনিবারও আওয়ামী লীগ-বিএনপি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে। ওই দিন বিএনপির যুগপতের শরিক দল ও জোটগুলোও ঢাকায় পৃথকভাবে মহাসমাবেশ পালন করবে। গত এক দশকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বড় দুই দলসহ সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর একই দিনে এ ধরনের পাল্টাপাল্টি বড় সমাবেশ ঘোষণা নজিরবিহীন হলেও গত ২৭ জুলাই বড় ধরনের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছিল। তবে ২৮ অক্টোবরের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সচেতন মহলের মধ্যে একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। রাস্তার পাশে ফুটপাথের চায়ের দোকানে এখন নতুন করে আলোচনার ঝড় বইছে- একই দিনে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর লাখ লাখ লোকের জমায়েত হলে সে দিন কী ঘটতে পারে? রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যেও একটা কৌতূহল কাজ করছে। ওই দিন কি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে নাকি রাজনীতি সঙ্ঘাতময় হয়ে উঠবে? পুলিশ কি বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেবে নাকি গত ১০ ডিসেম্বরের মতো গোলাপবাগের গরুর হাটে নিয়ে যাবে? এরকম হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে।

২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই আওয়ামী লীগ সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানের কথা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমাবেশে পুলিশের অনুমতি প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেনু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই। একই দিন নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ করার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথা একটাই- দ্যা আনসার অব ভায়োলেন্স ইজ ভায়োলেন্স, নট সাইলেন্স। আর কিছু না। আমি নেগেটিভ কিছু বলতে চাই না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি অবরোধ করলে জনগণকে সাথে নিয়ে পাল্টা অবরোধ করা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না, বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত যদি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায় যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর থেকেই বিএনপি ও তার মিত্ররা রাজপথে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। কিছুতেই তারা রাজপথে সরকারবিরোধী বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বরও রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশের ডাক দিয়েও সফল হয়নি। এ বছরের শুরু থেকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাঁপ চোখে পড়ার মতো। এ দেশে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক- তারা এটা চায়। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ প্রতিনিধিদল দফায় দফায় সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাথে বৈঠক করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে। যেটা সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের চাপ হিসেবে দেখছে সরকারবিরোধীরা। এ মাসেও কয়েক দফায় মার্কিন প্রতিনিধিরা সফর করে সরকারকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চাপ দিয়ে গেছে।

সূত্র আরো বলছে, সরকারের ওপর বিদেশীদের নানামুখী চাপ ও শেষমেশ মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা ও বাস্তবায়নের পরই আওয়ামী লীগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজপথে অনেকটা সহনশীল আচরণ করছে। এ অবস্থায় রাজপথে বিএনপি ও তার মিত্রদের চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে। তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বড় ধরনের সভা-সমাবেশ করে শক্তির জানান দিচ্ছে। গত ১২ জুলাই ঢাকায় বড় সমাবেশ করে বিএনপি সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করে। এর পরই সরকার পতনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের এক দফা দাবি আদায়ে গত ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পর দিন বিএনপি রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। যদিও ওই দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর মারমুখী অবস্থানের ফলে মাঠে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি ও তার মিত্ররা। এরই মধ্যে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ডিএমপি অনুমতি না দিলেও সেখানে সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে মাঠের এই প্রধান বিরোধী দল। গতকাল ডিএমপি তাদের কাছে বিকল্প ভেনুর প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিলে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই বিএনপির মহাসমাবেশ হবে বলে জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শনিবার ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এটাই উপযুক্ত জায়গা। এখানে আমরা একাধিকবার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। সারা দেশের গণতন্ত্রহারা বঞ্চিত মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসার দৃঢ প্রত্যয় নিয়েছে। অব্যাহত গণগ্রেফতারের মধ্যেও দীপ্ত অঙ্গীকারে তারা ঢাকার দিকে ছুটে আসছে। এই মহাসমাবেশ হবে নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক।

এ দিকে জামায়াতে ইসলামী শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু শাপলা চত্বরই নয়, ২৮ অক্টোবর ঢাকার কোথাও জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। গত বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, জামায়াতে ইসলাম এখন পর্যন্ত কোনো নিবন্ধিত দল না, কাজেই তারা যদি জামায়াতে ইসলামের ব্যানারে আসে, তাহলে অনুমতি দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীকে কোনোভাবেই কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে জানান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার। তিনি বলেন, জামায়াতের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে। জামায়াতকে কোনোভাবেই সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।