ইসলাম এমন একটি বিধান যা আল্লাহ তায়ালা পূর্ণাঙ্গরূপে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর মাধ্যমে স্থায়ী করে দিলেন। যাতে কোনোরূপ যোগ-বিয়োগ করার সুযোগ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে।’ (সূরা মায়িদাহ-৩) ইসলাম একটি প্রতিষ্ঠিত পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। হজরত মুহাম্মাদ সা: এবং সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক অপ্রকাশিত এমন কোনো আমলের গ্রহণযোগ্যতা ইসলামে নেই। সুতরাং প্রত্যেকের আমল অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক হতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, কিছু দ্বীনের সঠিক জ্ঞানশূন্য মুসলিম ভাই রয়েছে যারা ইসলামে এমন কিছু আমল চালু করেছে কিংবা আমল করছে যা ইসলাম অনুমোদন করে না। আসুন জানার চেষ্টা করি সেই অপছন্দনীয় কাজগুলো সম্পর্কে-
১. কবর উঁচু ও সজ্জিতকরণ : বর্তমান এই নিন্দনীয় কাজটি এতটাই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যেন মনে হচ্ছে ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। নাজুবিল্লাহ! কবরকে উঁচু ও সজ্জিত করে তৈরি করা হচ্ছে শিরকের আড্ডাখানা। কবর জিয়ারতের নামে মাজারের চর পাশে ঘুরে ঘুরে সালাম, মাজারের ভেতর থেকে পেছন দিক হয়ে বের হওয়া, মাজারকে সামনে রেখে সালাত আদায় করা, মাজারে শায়িত ব্যক্তির কাছে চাওয়া, মাজারের নামে মান্নত করা, মাজারে চুনকাম, লাইলাতুল কদর ও লাইলাতুন-নিসফু মিন শাবান রজনীকে কেন্দ্র করে লাইটিং ও সজ্জিতকরণ ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। হজরত জাবির রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: কবরে চুনকাম করতে, কবরের ওপর গৃহ নির্মাণ করতে ও কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম-৯৭০)
অন্য হাদিসে আবুল হাইয়াজ আসাদি থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘একবার হজরত আলী রা: আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাব না, যে কাজে রাসূল সা: আমাকে পাঠিয়েছিলেন? ওই কাজ এই যে, কোনো মূর্তি দেখলে তা নষ্ট করে ফেলবে, আর কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দেবে।’ (মুসলিম-৯৬৯)
২. দ্বীনকে দরিদ্র হিসেবে উপস্থাপন করা : অর্থাৎ বর্তমান সমাজে দেখা যায় যে, মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণ ও মাহফিল পরিচালনার উদ্যোগে মানুষের কাছে ভিক্ষাবৃত্তির মতো টাকা তোলা হয়। এটি দ্বীনকে ছোট করার নামান্তর। ইসলাম কখনো তা সমর্থন করে না। আর্থিকভাবে সমাজের মানুষ সবল না হলে মসজিদ, মাদরাসা পাকা করার কোনো দরকার নেই। কারণ এটি মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা এখনো যে উন্নত প্রযুক্তির যুগে অবস্থান করছি তা রাসূল সা:-এর সময় এমনটি জাঁকজমক কোনো মসজিদ কিংবা মক্তব প্রতিষ্ঠিত ছিল না; বরং কিয়ামতের একটি পূর্বাভাস হলো মানুষ মসজিদগুলোকে জাঁকজমক করবে কিন্তু মুসল্লি থাকবে না। অতএব, এতে ফোকাস না করে নিজেদের আমলে ফোকাস করা অত্যন্ত জরুরি।
৩. রাসূল সা:-এর জন্ম মোবারক উদযাপন : অর্থাৎ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ করা, বিরিয়ানির আয়োজন ও রাস্তায় মিছিল নিয়ে বের হওয়াতে কোনো উপকার নেই; বরং ক্ষতির দিক আরো বেশি পরিলক্ষিত। কারণ র্যালিতে যোগ দেয়া বেশির ভাগই উদযাপনের সময় জোহর ও আসরের সালাত তরক করা হয়। এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি উম্মাহর জন্য। তা ছাড়া রাসূল সা: ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে এমন কোনো আমল প্রমাণিত নয়। সুতরাং তা পরিহারযোগ্য। রাসূল সা: জন্মের শুকরিয়াস্বরূপ প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। উত্তম আমল হলো রোজা রাখা এবং তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করা।
৪. সামাজিক প্রচলিত কুসংস্কার : অর্থাৎ সমাজে প্রচলিত অনেক কর্মকাণ্ড দৃষ্টিলব্ধ যা ইসলাম কখনো অনুমোদন করে না। যেমন- নজর না লাগার জন্য ছোট শিশুর কপালের এক পাশে কালো চিহ্ন দেয়া, ফসলে নজরের নিরাপত্তায় ছেঁড়া জুতো, ঝাড়ু ইত্যাদি টাঙিয়ে দেয়া, প্রথম কাস্টমারকে বাকি দিলে ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া মনে করা, রাতে সুঁই ও চুনা বিক্রি করা যাবে না, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণে গর্ভবতী নারীদের সারাক্ষণ হাত, পা সোজা করে হাঁটতে দেয়া ও কোনো কিছু কাটাছেঁড়া থেকে বিরত রাখার মতো হাজারো কুসংস্কার সমাজের মধ্যে বিদ্যমান, যা কখনো ইসলাম সমর্থিত নয়। হাদিসে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণকে আল্লাহর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সে সময় সালাতের কথা উল্লেখ রয়েছে।
৫. অমুসলিমের কাছে ঝাড়ফুঁক নেয়া : ইসলামে ঝাড়ফুঁক তথা রুকাইয়া করার অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু অমুসলিমের কাছে শিরকি মন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করে ঝাড়ফুঁক নেয়া ও বান কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান প্রায় অনেক মুসলিম ভাইবোন অমুসলিমের কাছে ঝাড়ফুঁক গ্রহণ করে থাকে। তা ছাড়া অপরের ক্ষতি সাধনেও অমুসলিমের কাছে গিয়ে শয়তানি মন্ত্রের দ্বারা ব্ল্যাক ম্যাজিক করে থাকে। আর যারা ওই কাজে জড়িয়ে পড়ে তারা শিরকে লিপ্ত হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা শিরক সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহি পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শিরক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা জুুমার-৬৫)
এভাবে হাজারো অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে অনেক মুসলিম ভাইবোন জড়িয়ে আছে এবং নিজেদের অজান্তেই ঈমানকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান রেখে নিজেদের আমলকে পবিত্র রাখতে অবশ্যই সচেষ্ট থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন!
লেখক :
- আবদুর রশীদ
তরুণ লেখক ও প্রাবন্ধিক