বগুড়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে মাঠে রাত কাটাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। অবরোধ কর্মসূচির সমাবেশের ভিডিও ফুটেজ দেখে বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদুল ইসলাম গফুর।
মাহিদুল ইসলাম গফুর বলেন, ‘গ্রেপ্তার এড়াতে গত ৮ দিন ধরে আমি বাড়ি ছাড়া। বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বগুড়া সদরের লাহিড়ীপাড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত মুরগির ফার্মকে রাত্রীযাপনের স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছি। মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধের মধ্যেই আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী রাত কাটাচ্ছেন।’
গত বৃহস্পতিবার লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের আরও কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গ্রেপ্তার এড়াতে ধান কেটে নেওয়ার পর ফাঁকা মাঠে শামিয়ানা টাঙ্গিয়ে অনেক নেতা-কর্মী রাত্রীযাপন করছেন। আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছেন মাঠের শ্যালো মেশিন ঘরে। আবার কেউ রাত কাটাচ্ছেন কলা বাগানে বাঁশের তৈরি মাচাংয়ে।
বগুড়া শহর যুবদলের আহ্বায়ক আহসান হাবিব মমি বলেন, তিনি কয়েকজন কর্মী নিয়ে কখনো কলা বাগানে আবার কখনো জঙ্গলে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। আদমদীঘি সদর ইউনিয়নের কদমা গ্রাম, সান্তাহার রক্তদহ বিলের আশপাশের মাঠগুলোতেও গ্রেপ্তার এড়াতে অসংখ্য নেতা-কর্মী দিন-রাত কাটাচ্ছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, নাশকতার পরিকল্পনা করতেই তাঁরা রাতে মহাসড়ক সংলগ্ন পরিত্যক্ত মুরগির ফার্ম, কলা বাগান কিংবা ধান খেত বেছে নিয়েছেন। বগুড়া বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলার ১২টি উপজেলা, একটি পৌরসভা, ১০৮ টি ইউনিয়ন ছাড়াও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি দিন রাত সমান তালে তল্লাশি করছে পুলিশ। পুলিশের তল্লাশির মুখে নেতা-কর্মীদের কেউ বাড়িতে থাকতে পারছেন না।
কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে পুলিশ সেখানেও হানা দিচ্ছে। আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস গুলোতেও নিয়মিত তল্লাশি করা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে নেতা-কর্মীরা গ্রামের কলা বাগান, ধান কাটার পর ফাঁকা মাঠ, মাঠের শ্যালো মেশিন ঘর ও পরিত্যক্ত মুরগির ফার্মগুলোতে রাত যাপন করছেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ বলেন, ‘যুবক ছেলেদের বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে না পুলিশ। বাবা বিএনপি করে তাঁকে বাড়িতে না পেয়ে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ভাইকে না পেয়ে আরেক ভাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে নেতা-কর্মীদের ছেলেরাও ভয়ে বাড়ি ঘর ছাড়া।’ তিনি বলেন, বগুড়া সদর, গাবতলী, শিবগঞ্জ, ধুনট, আদমদীঘি উপজেলার নেতা-কর্মীরা ধানখেত, শ্যালো মেশিন ঘর, মুরগির পরিত্যক্ত ফার্মসহ আড়া-জঙ্গলে রাত কাটাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বগুড়া জেলায় ২২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ২৬টি মামলার আসামি বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এজাহারে নাম না থাকলেও আটকের পর ২৬টি মামলার যেকোনো একটিতে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। যার কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতা-কর্মী এবং তাদের যুবক ছেলেরা বাড়ি ছাড়া।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) স্নিগ্ধ আকতার বলেন, পুলিশ অযথা কাউকে হয়রানি করছে না। কেউ বাড়িতে না থাকলে পুলিশ কী করবে? তিনি আরও বলেন, যারা কলাবাগান কিংবা শ্যালো মেশিন ঘরে রাত কাটায় তারা সেখান থেকে নাশকতার পরিকল্পনা করে এবং মহাসড়কে বাস্তবায়ন করে।