আবহাওয়ার বিশেষ ধরন এল নিনোর প্রভাবে নতুন বছরের জানুয়ারি মাসেও শীত স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকতে পারে। তবে জানুয়ারি দেশের শীতলতম মাস হওয়ায় শীতকালের চরিত্র মেনেই ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি মাসে শীতের অনুভূতি বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
গতকাল রবিবার বিদায়ি বছরের শেষ দিনে দেশজুড়ে শীতের অনুভূতি কিছুটা বেড়েছে। ঢাকাসহ দেশের অনেক অঞ্চলেই বেড়েছে কুয়াশার ঘনত্ব।
এ রকম অবস্থা থাকতে পারে আরো দুই-তিন দিন। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সোমবারও মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে এই ঘন কুয়াশা। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস বলছে, সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগামীকাল মঙ্গলবারও রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে দিনের তাপমাত্রা কমেছে। এতে ঢাকাসহ সারা দেশেই শীতের অনুভূতি কিছুটা বেড়েছে। সোম ও মঙ্গলবার একই অবস্থা থাকতে পারে দেশজুড়ে। রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক অঞ্চলে এবং ঢাকা বিভাগের কোনো কোনো অঞ্চলে দুপুর পর্যন্তও কুয়াশা থাকতে পারে।
তবে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তাঁরা বলছেন, কুয়াশা বেশি থাকলে দিনের তাপমাত্রা কমলেও রাতের তাপমাত্রা সে তুলনায় তেমন কমে না। এই কুয়াশাভাব কাটতে আরো দুই-তিন দিন লাগতে পারে। আবওয়াবিদরা বলছেন, জানুয়ারি মাস দেশের শীতলতম মাস। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই মাসে শৈত্যপ্রবাহ হবে। তবে এল নিনোর প্রভাবে এবার তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা কম।
জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনোর প্রভাবে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও তাপমাত্রা ও উষ্ণতার নতুন রেকর্ড গড়েছে বিদায়ি বছর। অন্যান্য বছরের তুলনায় গত বছর দেশে তাপপ্রবাহের দিনসংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও) বলছে, জলবায়ুগতভাবে ২০২৩ একটি ঐতিহাসিক ও অস্বাভাবিক বছর ছিল।
আবহাওয়াবিদরা জানান, গত বছরের (২০২৩) মতো নতুন বছরের প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত তাপপ্রবাহ বেশি থাকতে পারে। এল নিনো সক্রিয় থাকতে পারে চলতি বছরের এপ্রিল-মে পর্যন্ত। এরপর আবহাওয়া আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।
২০২৩ সালে বঙ্গোপসাগরে চারটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে তিনটিই আঘাত হেনেছে দেশের উপকূলে। যেকোনো বিবেচনায় এই অবস্থাকে অস্বাভাবিক বলছেন আবহাওয়াবিদরা।
তাঁরা বলছেন, উষ্ণ অবস্থা থাকলে ঘূর্ণিঝড় বেশি হয়। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের মূল্যায়নে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০২৩ সালের ১২ মাসের মধ্যে ১০ মাসই কোনো না কোনোভাবে আবহাওয়া অস্বাভাবিক ছিল। আর দুই মাস ছিল স্বাভাবিক, যখন কি না তেমন কোনো বিরূপ বা চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা যায়নি। তাই বলা যায়, আবহাওয়া বিবেচনায় একটা অস্বাভাবিক বছর পার করলাম আমরা।’