টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার পশ্চিম কালীদাস পানাউল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে ২০২৩-এর ২৪ জানুয়ারি যোগদান করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার। গত এক বছরে তিনি ক্লাস নিয়েছেন মাত্র ৫৪ দিন।
স্কুলশিক্ষিকার নাম জেবুন নাহার শিলা। শিলার বর্তমান পরিচয় তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই শিক্ষক নিয়মানুযায়ী ক্লাসে না আসায় ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের লেখাপড়া।তারা বলছেন, এই শিক্ষক স্কুলে যোগদানের পর থেকেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকছেন।
এমনকি ছাত্রত্ব শেষ হলেও থাকছেন ইডেন কলেজের আয়েশা সিদ্দিকা হলের ৩০১ নম্বর কক্ষে। ছাত্রলীগের কলেজ ও কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে প্রায়ই দেখা যায়। সরকারি চাকরি করার পরও সব নিয়মের তোয়াক্কা না করে রাজনীতির মাঠেই ব্যস্ত তিনি। মিটিং-মিছিল বাদ দিচ্ছেন না কিছুই।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা উপলক্ষ্যে ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টাঙ্গাইল জেলা শাখার আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেকে তিনি ইডেন কলেজের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও প্রথম ভোটার দাবি করেন। অথচ তিনি ইডেন কলেজ থেকে ২০১৪ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি ২০১৩ সালে জাতীয় ভোটারের তালিকাভুক্ত হন। ভোটার আইডি কার্ডে শিলার জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৯২ সাল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন শিক্ষক জানান, শিলা ম্যাডাম না থাকায় আমাদের ওপর চাপ পড়েছে, অনেক কষ্ট করে ক্লাশ নিচ্ছি, ৬ জন শিক্ষকের ক্লাশ ৫ জনে নিচ্ছি। অভিযুক্ত শিক্ষক জেবুন নাহার শিলা বলেন, নিয়ম মেনেই চলছি আমি, মেডিকেল ছুটিতে রয়েছি।
জেবুন নাহার শিলার যোগদানের পর থেকে এক বছরে মাত্র ৫৪ দিন ক্লাশ নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধীরেন চন্দ্র সরকার। তিনি জানান, ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষক শিলা আর স্কুলে আসেননি। এ ছাড়া তিনি স্কুলের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও রাখেননি। রাজনৈতিক কোনো চাপ আছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দুই মাস পর পর শুধু চিকিৎসার জন্য ছুটির আবেদনে স্বাক্ষর করেছি। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
তার ছাত্রত্ব নিয়ে প্রশ্নে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা বলেন, কমিটি গঠনের সময় হয়তো শিলার ছাত্রত্ব সঠিক ছিল। পরবর্তী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিষয়টি বিবেচনা করবে। তবে শিলার আবাসিক হলে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বৈধতার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, মেডিকেল ছুটি কাটাচ্ছেন শিলা। তবে ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী জানান, ইতোমধ্যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নানা অজুহাতে অনুপস্থিত থাকা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।