ইউক্রেনের সরকার বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার পর এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে। রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনজুড়ে বিভিন্ন শহরে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে। এসব হামলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে এবং অন্তত তিনজন আহত হয়েছে। পশ্চিমের লভিভ শহরের মেয়র জানিয়েছেন, সেখানে বোমার আঘাতে ৯০ ভাগ এলাকাতেই কোনো বিদ্যুৎ নেই।
দক্ষিণের ওডেসা এবং উত্তর-পূর্বের শহর খারকিভেও বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী দাবি করছে বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র তারা মাঝপথে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে, সর্বশেষ দফায় রাশিয়া অন্তত ৬৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। এর মধ্যে তারা ৫৪টি ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এর আগে প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক বলেন, বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছিল ১২০টির বেশি।
রুশ হামলা শুরুর পর বিমান হামলার সতর্ক সংকেত বাজতে থাকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা করে।
দক্ষিণের ওডেসা অঞ্চলের নেতা ম্যাক্সিম মারচেংকো বলেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে এক বিরাট হামলা শুরু হয়েছে। সেখানে তারা ২১টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছেন।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী বলেছে, রুশরা আকাশ এবং সাগর থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে এবং এই হামলা চলছে বিভিন্ন দিক থেকে। বেশ কিছু কামাকাজে ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেশজুড়ে এই হামলার সময় সাইরেন দিয়ে লোকজনকে সতর্ক করে দেয়া হয়। প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কাজ করছে।
কিয়েভে এই হামলার সময় আকাশেই ধ্বংস করা দুটি ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে দুটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শহরের মেয়র দাবি করছেন, কিয়েভের আকাশে ১৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় মাইকোলাইভ অঞ্চলের গভর্নর ভিটালি কিম লিখেছেন, সেখানে ৫টি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
ইউক্রেনের সাম্প্রতিক কয়েকদিন ধরে রাশিয়া অনেক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে এবং এর ফলে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। রুশ বাহিনী ইচ্ছে করেই বার বার বেসামরিক স্থাপনায় হামলা করছে বলে কিয়েভ যে অভিযোগ করছে, তা মস্কো অস্বীকার করছে।
ইউক্রেনের সরকার পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে বার বার এমন ধরনের সামরিক অস্ত্রশস্ত্র দেয়ার অনুরোধ করছে, যেগুলো দিয়ে তারা রাশিয়ার এরকম ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মোকাবেলা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে।
ইউক্রেনের নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কিরিলো বুডানোভ বিবিসিকে বলেন, রাশিয়া যতদিন পারবে ততদিন হয়তো ইউক্রেনের বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যাবে। তবে এটি রাশিয়া কতদিন চালিয়ে যেতে পারবে সেটি নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন। তার মতে, রাশিয়ার হাতে আর খুব বেশি ক্ষেপণাস্ত্র অবশিষ্ট নেই।
এ মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছিলেন, রাশিয়া এখন কয়েক দশকের পুরোনো অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যেগুলোর বিফলতার হার অনেক বেশি।
এদিকে জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাজ্যের দূত বলছেন, রাশিয়া এখন ইরানের কাছ থেকে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ অনেক অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে।
ডেইম বারবারা উডওয়ার্ড আরো বলেছিলেন, তারা নিশ্চিত, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকেও অস্ত্র পাওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ রাশিয়ার অস্ত্রের মওজুদ ফুরিয়ে আসছে।
সূত্র : বিবিসি