ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

চসিকের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অচলাবস্থা

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:৫৪:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১১৩০ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানিকে নিজ কক্ষে মারধরের পর সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি ঠিকাদারদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) চট্টগ্রাম ত্যাগ করার পর আর ফেরেননি। আবার ২২০ কোটি টাকার ৩৭টি উন্নয়নকাজের নো অবজেকশন সনদও (নোআ) পাননি ঠিকাদারেরা। ফলে এই কাজের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর অন্তত দুই বড় ঠিকাদার দেশত্যাগ করেছেন বলেও জানা গেছে। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ।

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে চসিকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তীকালে চসিক নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে প্রায় দেড়বছর ধরে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প ছিল না। বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র হিসেবে ইতোমধ্যে দুই বছর পার করেছেন। তার আমলে সরকার চট্টগ্রাম শহরের সার্বিক উন্নয়নে ২৩৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

এই বরাদ্দ থেকে দ্বিতীয় ধাপে ৩৭টি উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রোকন উদ্দিন নামে এক ঠিকাদার ২২টি এবং আলাউদ্দিন মোল্লা নামে আরেকজন পান ৮টি কাজ। এভাবে বেশিরভাগ কাজ কয়েকজনের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাওয়ায় অন্য ঠিকাদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। চসিকের ঠিকাদাররা আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। গত ২৯ জানুয়ারি পিডিকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার সঞ্জয় ভৌমিক কংকন ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নগর ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক। এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা। গ্রেপ্তার সুভাষ দে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহযোগী হিসেবে ছিলেন। ফলে চসিকের প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলার ঘটনাটি কেবলই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক রূপও নিয়েছে। আর আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেশিরভাগ কাজ জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী ঠিকাদারেরা পেয়ে যাওয়ায় আওয়ামীপন্থি ঠিকাদারেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ঘটনার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারাও টাইগারপাসের নগর ভবন ঘুরে গেছেন। তারা চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের কক্ষে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন। তারা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। তবে তারা কোনো ফাইল দেখতে চাননি।

এর আগেও দুদক কর্মকর্তারা একাধিকবার চসিকে অভিযান চালান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনেক ফাইল জব্ধ করা হয়েছিল; গ্রেপ্তার করা হয়েছিল একাধিক প্রকৌশলীকে। তাদের মধ্যে মো. শহীদুল্লাহ নামে এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কারাগারে মারা যান। সেই সময় যৌথবাহিনী তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি ১৭ মাস কারাগারে ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

চট্টগ্রামের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, আমার মনে হয় ঠিকাদারি কাজ না পাওয়ার বেদনা থেকে ঠিকাদাররা এ ঘটনা ঘটাতে পারেন। তারা অসন্তোষের কথা বলতেই পারেন। তাই বলে কাউকে শারীরিকভাবে মারধর করা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।

এক ঠিকাদার অধিক সংখ্যক কাজ পাওয়া নিয়ে চিন্তিত জানিয়ে মেয়র বলেন, কাজগুলো সঠিক সময়ে তুলে আনতে পারবেন কিনা সেই সংশয় দেখা দিয়েছে। আমি জানি না এগুলো পুনঃদরপত্র করা যাবে কিনা।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২২টি কাজ পাওয়া ঠিকাদার রোকন উদ্দিনের মোবাইল ফোন গত ২৯ জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে। এক ঠিকাদার বলেন, রোকন এখন দুবাই আছেন।

প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানি স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। চসিকের জন্য ২৩৯২ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার অনুমোদন করার পর তাকে এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। চসিকে এর আগেও প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ ও সোহেল আহমেদ দায়িত্ব পালন করেছেন।

গোলাম ইয়াজদানি এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে আর দায়িত্ব পালন করবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি নিজ কক্ষে শারীরিকভাবে মারধরের শিকার হয়ে তিনি ঢাকা চলে যান। এর পর আর চট্টগ্রাম ফেরেননি। গতকাল মোবাইল ফোনে একাধিকবার তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গোলাম ইয়াজদানির সাঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি অসুস্থ বলে জানিয়েছেন। তবে কবে আসবেন তা নিয়ে কিছু বলেননি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

চসিকের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে অচলাবস্থা

আপডেট সময় ১১:৫৪:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানিকে নিজ কক্ষে মারধরের পর সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি ঠিকাদারদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) চট্টগ্রাম ত্যাগ করার পর আর ফেরেননি। আবার ২২০ কোটি টাকার ৩৭টি উন্নয়নকাজের নো অবজেকশন সনদও (নোআ) পাননি ঠিকাদারেরা। ফলে এই কাজের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর অন্তত দুই বড় ঠিকাদার দেশত্যাগ করেছেন বলেও জানা গেছে। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ।

সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মেয়াদে চসিকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তীকালে চসিক নির্বাচনের পূর্বাপর সময়ে প্রায় দেড়বছর ধরে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প ছিল না। বর্তমান মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র হিসেবে ইতোমধ্যে দুই বছর পার করেছেন। তার আমলে সরকার চট্টগ্রাম শহরের সার্বিক উন্নয়নে ২৩৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

এই বরাদ্দ থেকে দ্বিতীয় ধাপে ৩৭টি উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে রোকন উদ্দিন নামে এক ঠিকাদার ২২টি এবং আলাউদ্দিন মোল্লা নামে আরেকজন পান ৮টি কাজ। এভাবে বেশিরভাগ কাজ কয়েকজনের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাওয়ায় অন্য ঠিকাদাররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। চসিকের ঠিকাদাররা আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। গত ২৯ জানুয়ারি পিডিকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার সঞ্জয় ভৌমিক কংকন ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নগর ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক। এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা। গ্রেপ্তার সুভাষ দে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সহযোগী হিসেবে ছিলেন। ফলে চসিকের প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলার ঘটনাটি কেবলই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক রূপও নিয়েছে। আর আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেশিরভাগ কাজ জামায়াতে ইসলামীর অনুসারী ঠিকাদারেরা পেয়ে যাওয়ায় আওয়ামীপন্থি ঠিকাদারেরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ঘটনার পর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারাও টাইগারপাসের নগর ভবন ঘুরে গেছেন। তারা চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের কক্ষে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন। তারা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। হুমায়ুন কবির আমাদের সময়কে বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। তবে তারা কোনো ফাইল দেখতে চাননি।

এর আগেও দুদক কর্মকর্তারা একাধিকবার চসিকে অভিযান চালান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনেক ফাইল জব্ধ করা হয়েছিল; গ্রেপ্তার করা হয়েছিল একাধিক প্রকৌশলীকে। তাদের মধ্যে মো. শহীদুল্লাহ নামে এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কারাগারে মারা যান। সেই সময় যৌথবাহিনী তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি ১৭ মাস কারাগারে ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

চট্টগ্রামের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, আমার মনে হয় ঠিকাদারি কাজ না পাওয়ার বেদনা থেকে ঠিকাদাররা এ ঘটনা ঘটাতে পারেন। তারা অসন্তোষের কথা বলতেই পারেন। তাই বলে কাউকে শারীরিকভাবে মারধর করা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।

এক ঠিকাদার অধিক সংখ্যক কাজ পাওয়া নিয়ে চিন্তিত জানিয়ে মেয়র বলেন, কাজগুলো সঠিক সময়ে তুলে আনতে পারবেন কিনা সেই সংশয় দেখা দিয়েছে। আমি জানি না এগুলো পুনঃদরপত্র করা যাবে কিনা।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২২টি কাজ পাওয়া ঠিকাদার রোকন উদ্দিনের মোবাইল ফোন গত ২৯ জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে। এক ঠিকাদার বলেন, রোকন এখন দুবাই আছেন।

প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানি স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। চসিকের জন্য ২৩৯২ কোটি টাকার প্রকল্প সরকার অনুমোদন করার পর তাকে এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। চসিকে এর আগেও প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ ও সোহেল আহমেদ দায়িত্ব পালন করেছেন।

গোলাম ইয়াজদানি এ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে আর দায়িত্ব পালন করবেন কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি নিজ কক্ষে শারীরিকভাবে মারধরের শিকার হয়ে তিনি ঢাকা চলে যান। এর পর আর চট্টগ্রাম ফেরেননি। গতকাল মোবাইল ফোনে একাধিকবার তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গোলাম ইয়াজদানির সাঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি অসুস্থ বলে জানিয়েছেন। তবে কবে আসবেন তা নিয়ে কিছু বলেননি।