গত বছরের শুরুতেই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন- সেটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বৃটেন থেকে নিয়ে আসা হয় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। আর নির্বাচনের পূর্বে সিলেটে পা দিয়েই কণ্টকাকীর্ণ পথে হাঁটা শুরু করেন তিনি। দলীয় সমর্থন প্রত্যাশীদের ভেতরে চাপা ক্ষোভ। তখন আনোয়ার কাছে পেলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও নগরের সহ-সভাপতি বিজিত চৌধুরী সহ হাতেগোনা কয়েকজন নেতাকে। মাঠ তার উল্টো। আওয়ামী লীগকে তার সঙ্গে আনাই ছিল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ উতরালেন আনোয়ার। হলেন মেয়র। নির্বাচনের আগে থেকেই সিলেট আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ছাত্রলীগের জেলা ও নগর কমিটি গঠন নিয়ে বিভক্তি ছিল।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের মাঠে নামেন। পরবর্তীতে সংসদ নির্বাচনেও একই ধারা বিদ্যমান ছিল। সংসদ নির্বাচনে জেলার সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, নগর সভাপতি মাসুকউদ্দিনের পক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় ছিলেন মেয়র আনোয়ার। সিলেট-২ ও সিলেট-৫ আসনে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। আর নিজের একান্তজন হিসেবে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, হাবিবুর রহমান হাবিব ও এডভোকেট রণজিত সরকারের পক্ষে ভোটের মাঠে প্রচারণা সহ সার্বিক বিষয় মনিটরিং করেন আনোয়ার। নির্বাচনে চমক দেখালেন নাদেল ও রণজিত। দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হলেন হাবিব। মনোনয়নপ্রাপ্তি সহ এই তিনজনের জয়ের নায়ক ধরা হচ্ছে মেয়র আনোয়ারকে। সিলেট-২ আসনে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ নির্বাচিত হয়ে আরও বেশি চমক দেখালেন জেলার সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। গত ২রা মার্চ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। আর এই সংবর্ধনা থেকে নতুন করে বিভক্তি দেখা দিয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগে।
সিলেটের নেতারা জানিয়েছেন- সংবর্ধনাস্থলে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান এমপি, রণজিত সরকার এমপি সম্মান পাননি। তাদেরকে বক্তব্য দিতে না দিয়ে তড়িঘড়ি করে সংবর্ধিত অতিথি ও প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মঞ্চেই জেলার সভাপতি ও প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি জানান মেয়র আনোয়ার। এতে কোনো সূরাহা না মেলায় মঞ্চেই তিনি উচ্চস্বরে জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানকে উদ্দেশ্যে করে কিছু কথা বলেন। তবে; ওই সময় নীরবতা পালন করেন নাসির উদ্দিন খান। এ ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের রণজিত বলয় পরিচিত নেতারা সমাবেশস্থলে চেয়ার ভাঙচুর করে চলে যান। নেতারা জানান- ঘটনার পর থেকে সিলেট আওয়ামী লীগে বিভক্তি বেড়েছে। এর প্রমাণ মিললো গত ৬ই জানুয়ারি সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। ওই সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি, এডভোকেট রণজিত সরকার এমপি উপস্থিত হওয়া ছাড়াও বক্তব্যও রাখেন।
তবে অনুষ্ঠানে নগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ছাড়া জেলা ও নগরের শীর্ষ নেতারা যাননি। পরে অবশ্য জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জেলার সভাপতি, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, নগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও জেলার সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান সহ সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- পরপর দু’টি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগে নতুন করে বিভক্তি বেড়েছে। এমনকি কেউ কারও অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। সিটির সংবর্ধনায় যাননি জেলা ও নগরের নেতারা। আর জেলা ও নগরের নেতাদের ওখানে যাননি নাদেল, আনোয়ার সহ অপর অংশের নেতারা। এর ছাপ এসে পড়ছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ অঙ্গ-সংগঠনে। সংবর্ধনার পর থেকে নতুন করে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সম্পর্ক দ্বান্দ্বিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন নেতারা। আর দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খানের বিরোধ অনেক পুরনো। এই দু’নেতা ছাত্রলীগ থেকে একে- অপরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন। এখন আওয়ামী লীগে এসেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে আগের মতোই। পুরনো বিরোধ নতুন করে তাদের দলীয় কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।