ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

রংপুরে তিস্তা কৃষক সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৫:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
  • ১১০৬ বার পড়া হয়েছে

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিসাবসহ আট দফা দাবিতে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির পূর্ব নির্ধারিত তিস্তা কৃষক সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।

শনিবার দুপুরে পুলিশ বাধা দিয়ে তাদের সমাবেশ স্থল থেকে বের করে দেয় কৃষক সমিতির নেতাকর্মী ও কৃষকদের। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সমিতি।

আর পুলিশ জানিয়েছে, অনুমতি না থাকায় জনস্বার্থে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শনিবার বেলা ১১টা থেকে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির আগে থেকে নির্ধারিত তিস্তা কৃষক সমাবেশ রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে ছিলো। এজন্য পাবলিক লাইব্রেরির সাহিত্যমঞ্চে ব্যানার সাটানোসহ সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেন আয়োজকরা। সকাল ১০টা থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক সমিতির নেতাকর্মীরা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমবেত হতে থাকেন। কিন্তু সাড়ে ১১টায় সমাবেশের ব্যানার টাঙ্গাতে প্রথম বাধা দেয় পুলিশ। এ নিয়ে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। ধীরে ধীরে সেখানে বাড়তে থাকে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে কথা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। দুপুর পৌনে ১টায় সমাবেশ স্থলে আসেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কোতয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো: আরিফুজ্জামান। তিনি বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনসহ নেতৃবৃন্দকে ডেকে নিয়ে লিখিত কোনো অনুমতি না থাকায় সমাবেশ বন্ধ করে মাঠ খালি করার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে সেখানে আবারো উত্তেজনা তৈরি হলে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আরিফ কৃষক নেতা চন্দনকে আরপিএমপির ডিসি (সিটিএসবি) সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলেন। এ সময় কৃষক নেতা চন্দন ডিসি (সিটিএসবি)-র সাথে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এতো বছর ধরে সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। সমাবেশ করতে দিবেন না। আমরা তো রাস্তায় দাঁড়ায়নি। মাঠে সমেবত হয়েছি। আপনারা মিছিলও করতে দিবেন না, সমাবেশও করতে দিবেন না। তা হয় না। মিছিলে তো একটু যানজট হবেই।’ পরে তাদেরকে মাঠ থেকে বের করে দেয় পুলিশ।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ বলছে আমাদের লিখিত কোনো পারমিশন নেই। আমরা গতকাল (শুক্রবার) পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। আমরা ডিসি সাহেবকেও জানিয়েছি। গণতান্ত্রিক দেশে এটাই নিয়ম কোনো কর্মসূচি পালন করলে তা অবহিত করতে হয় পুলিশকে। সেটা আমরা করেছি। কিন্ত এখন তারা বলছেন এখানে সরকারি কর্মসূচি আছে এখানে করা যাবে না। আমরা এখানে তিস্তা পাড়ের কৃষকদের নিয়ে এসেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে একটা স্বাধীন দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তো আগেই ভুলণ্ঠিত হয়ে গেছে। তার একটা নমুনা দেখলাম এখানে। কৃষকরা এখানে কোনো সরকার পরিবর্তন করতে আসে নাই। কৃষকরা এখানে তাদের ন্যায্য দাবি ও অধিকারের কথা বলতে এসেছিল। এটা কোনো সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন না, বা অন্য কোনো বিষয় না। সেটাকেও আজকে পারমিশনের নামে বাধাগ্রস্ত করা হলো।’

সমাবেশ করতে না দেয়া প্রসঙ্গে রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতয়ালী জোন) মো: আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই আমি পরিস্কার করে কিছু বলবো না। এটা জনস্বার্থে করা হচ্ছে। নির্দেশনা যে রকম আসছে, সেরকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই প্রোগ্রাম না করার ব্যাপারে তাদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতিও নেই না। যার জন্য তাদের সংক্ষিপ্তভাবে যেভাবে করে দেয়া যায়, সেভাবে করে দিয়েছি।’

প্রসঙ্গত: সমাবেশ স্থলের সামনেই শহীদ মিনার চত্বরে চতুর্পাশ প্যান্ডেল করে বিভাগীয় পিঠা উৎসব করা হচ্ছে। প্রতিদিন বেলা ৩ টার পর মেলা উম্মুক্ত থাকার কথা বলা হলেও সেই মেলায় সন্ধ্যার পরেও তেমন একটা ভিড় দেখা যায় না। ৩০টি পিঠার স্টল বানানো হলেও মাঠে মাত্র ১০ থেকে ১২টা পিঠার স্টলে পিঠা দেখা যায়। এছাড়াও সমাবেশ স্থলের উত্তরপাশে দুই বাংলার লেখকদের সম্মেলন ও লিটল ম্যাগ মেলা হচ্ছে। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টের বাছাই কার্যক্রম চলছে।

এ দিকে, সমাবেশ করতে না পারায় কৃষক সমিতি সেখান থেকে বের হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক হয়ে শাপলা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। পরে শাপলা চত্বরে পথ সভায় বক্তব্য রাখেন কৃষক নেতারা। এ সময় তিস্তা নদীকে মেরে ফেলার হাত থেকে রক্ষায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিসাব আদায়, তিস্তাসহ অনান্য নদী খাল বিল জলাশয় পরিকল্পিতভাবে খনন করে নাব্যতা রক্ষা, তিস্তার পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, তিস্তার দুইপাশে সড়ক উন্নয়ন করা, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদী ভাঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ এবং বেড়ে উঠা জমি প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেয়া, বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি বিতরণে ও গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম, হয়রানি এবং দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানান।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

রংপুরে তিস্তা কৃষক সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ

আপডেট সময় ০৫:৫৮:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিসাবসহ আট দফা দাবিতে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির পূর্ব নির্ধারিত তিস্তা কৃষক সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ।

শনিবার দুপুরে পুলিশ বাধা দিয়ে তাদের সমাবেশ স্থল থেকে বের করে দেয় কৃষক সমিতির নেতাকর্মী ও কৃষকদের। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সমিতি।

আর পুলিশ জানিয়েছে, অনুমতি না থাকায় জনস্বার্থে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শনিবার বেলা ১১টা থেকে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির আগে থেকে নির্ধারিত তিস্তা কৃষক সমাবেশ রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে ছিলো। এজন্য পাবলিক লাইব্রেরির সাহিত্যমঞ্চে ব্যানার সাটানোসহ সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেন আয়োজকরা। সকাল ১০টা থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক সমিতির নেতাকর্মীরা পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সমবেত হতে থাকেন। কিন্তু সাড়ে ১১টায় সমাবেশের ব্যানার টাঙ্গাতে প্রথম বাধা দেয় পুলিশ। এ নিয়ে শুরু হয় তর্ক-বিতর্ক। ধীরে ধীরে সেখানে বাড়তে থাকে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে কথা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। দুপুর পৌনে ১টায় সমাবেশ স্থলে আসেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) কোতয়ালী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো: আরিফুজ্জামান। তিনি বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনসহ নেতৃবৃন্দকে ডেকে নিয়ে লিখিত কোনো অনুমতি না থাকায় সমাবেশ বন্ধ করে মাঠ খালি করার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে সেখানে আবারো উত্তেজনা তৈরি হলে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আরিফ কৃষক নেতা চন্দনকে আরপিএমপির ডিসি (সিটিএসবি) সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলেন। এ সময় কৃষক নেতা চন্দন ডিসি (সিটিএসবি)-র সাথে মোবাইলে কথা বলেন। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা এতো বছর ধরে সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। সমাবেশ করতে দিবেন না। আমরা তো রাস্তায় দাঁড়ায়নি। মাঠে সমেবত হয়েছি। আপনারা মিছিলও করতে দিবেন না, সমাবেশও করতে দিবেন না। তা হয় না। মিছিলে তো একটু যানজট হবেই।’ পরে তাদেরকে মাঠ থেকে বের করে দেয় পুলিশ।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশ বলছে আমাদের লিখিত কোনো পারমিশন নেই। আমরা গতকাল (শুক্রবার) পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। আমরা ডিসি সাহেবকেও জানিয়েছি। গণতান্ত্রিক দেশে এটাই নিয়ম কোনো কর্মসূচি পালন করলে তা অবহিত করতে হয় পুলিশকে। সেটা আমরা করেছি। কিন্ত এখন তারা বলছেন এখানে সরকারি কর্মসূচি আছে এখানে করা যাবে না। আমরা এখানে তিস্তা পাড়ের কৃষকদের নিয়ে এসেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে একটা স্বাধীন দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তো আগেই ভুলণ্ঠিত হয়ে গেছে। তার একটা নমুনা দেখলাম এখানে। কৃষকরা এখানে কোনো সরকার পরিবর্তন করতে আসে নাই। কৃষকরা এখানে তাদের ন্যায্য দাবি ও অধিকারের কথা বলতে এসেছিল। এটা কোনো সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন না, বা অন্য কোনো বিষয় না। সেটাকেও আজকে পারমিশনের নামে বাধাগ্রস্ত করা হলো।’

সমাবেশ করতে না দেয়া প্রসঙ্গে রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতয়ালী জোন) মো: আরিফুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই আমি পরিস্কার করে কিছু বলবো না। এটা জনস্বার্থে করা হচ্ছে। নির্দেশনা যে রকম আসছে, সেরকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এই প্রোগ্রাম না করার ব্যাপারে তাদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছে। অনুমতিও নেই না। যার জন্য তাদের সংক্ষিপ্তভাবে যেভাবে করে দেয়া যায়, সেভাবে করে দিয়েছি।’

প্রসঙ্গত: সমাবেশ স্থলের সামনেই শহীদ মিনার চত্বরে চতুর্পাশ প্যান্ডেল করে বিভাগীয় পিঠা উৎসব করা হচ্ছে। প্রতিদিন বেলা ৩ টার পর মেলা উম্মুক্ত থাকার কথা বলা হলেও সেই মেলায় সন্ধ্যার পরেও তেমন একটা ভিড় দেখা যায় না। ৩০টি পিঠার স্টল বানানো হলেও মাঠে মাত্র ১০ থেকে ১২টা পিঠার স্টলে পিঠা দেখা যায়। এছাড়াও সমাবেশ স্থলের উত্তরপাশে দুই বাংলার লেখকদের সম্মেলন ও লিটল ম্যাগ মেলা হচ্ছে। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্টের বাছাই কার্যক্রম চলছে।

এ দিকে, সমাবেশ করতে না পারায় কৃষক সমিতি সেখান থেকে বের হয়ে নগরীর প্রধান সড়ক হয়ে শাপলা পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। পরে শাপলা চত্বরে পথ সভায় বক্তব্য রাখেন কৃষক নেতারা। এ সময় তিস্তা নদীকে মেরে ফেলার হাত থেকে রক্ষায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিসাব আদায়, তিস্তাসহ অনান্য নদী খাল বিল জলাশয় পরিকল্পিতভাবে খনন করে নাব্যতা রক্ষা, তিস্তার পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, তিস্তার দুইপাশে সড়ক উন্নয়ন করা, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদী ভাঙ্গাদের ক্ষতিপূরণ এবং বেড়ে উঠা জমি প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেয়া, বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি বিতরণে ও গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম, হয়রানি এবং দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানান।