ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

সাগরে তেল গ্যাসের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র, কী করতে চাইছে সরকার?

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১২:৪২:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪
  • ১১০৪ বার পড়া হয়েছে

প্রায় সাত বছর পর বাংলাদেশের সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে চব্বিশটি ব্লকের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করল বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন দ্রুততর সময়ের মধ্যে আহরণের কাজ শুরুর লক্ষ্য নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়েছে এবং প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে তারা বিদেশি পত্রিকাতেও বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।

যদিও এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিদেশী নানা কোম্পানি সমুদ্রে গ্যাস আহরণের কাজ পেলেও তাদের একটি ছাড়া বাকিরা খনন পর্যায় থেকেই বিদায় নিয়েছিল।

হামিদ বলছেন, এবার দরপত্র মূল্যায়ন শেষে কাজ দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো জরিপসহ নানা ধাপ অতিক্রম করে তেল গ্যাস পেলে তার পরিমাণ জানতে ও আহরণের কাজ শুরু করতে ৮-১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাগরে মোট ২৬টি ব্লক নির্ধারণ করেছে সরকার, যার মধ্যে পনেরটি গভীর সমুদ্রে আর এগারটি অগভীর সমুদ্রে। এর মধ্যে দুটি ব্লকে অনুসন্ধানের কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি।

পেট্রোবাংলা বলছে মূলত বাংলাদেশের সমুদ্রে একটি জরিপ পরিচালনা এবং ২০২৩ সালে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি – অফশোর মডেল প্রকাশের পর তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য পরিচিতি আছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি বা বাপেক্সের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন সাতটি গ্যাসক্ষেত্র উৎপাদনক্ষম আছে। এগুলোতে মোট গ্যাস মজুদ আছে ১ দশমিক ৭৭৭২ টিসিএফ। এছাড়া এ মুহূর্তে অনুসন্ধান কূপ আছে মোট আঠারটি।

তবে বঙ্গোপসাগরের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র বেশ আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ ব্যাপক জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে।

রান্নার গ্যাস ছাড়াও সিএনজি, শিল্পকারখানা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রায়শই। বিশেষজ্ঞদের মতে গ্যাস সংকটের প্রধান কারণ নিজস্ব জ্বালানির উৎপাদন কমছে বাংলাদেশে।

এমন প্রেক্ষাপটে সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ছয় মাসের সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করল সরকার।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষাগুলো থেকে প্রাপ্ত ধারণা অনুযায়ী বাংলাদেশের সাগর এলাকায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে পানিসীমা আন্তর্জাতিক আদালতে আগেই নিষ্পত্তি হলেও বাংলাদেশ সাগর এলাকায় এখনো ব্যাপকভাবে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করতে পারেনি।

দরপত্র আহ্বানের বিজ্ঞপ্তিতে কী আছে?
কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের দরপত্র অনুযায়ী যারাই যে ব্লকের কাজ পাবেন তাতে অংশীদার হবে বাংলাদেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। এ ক্ষেত্রে বাপেক্সের অংশীদারিত্বের পরিমাণ হবে দশ শতাংশ।

তবে এতদিন বড় কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের একটি বড় কারণ ছিল আগেই গ্যাসের দাম বেঁধে দেয়া। ২০২৩ সালের উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি বা পিএসসিতে সেটি রাখা হয়নি।

বরং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সাথে মিলিয়ে দাম নির্ধারণের কথা থাকায় কোম্পানিগুলোর আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ডঃ বদরুল ইমাম।

এখন গ্যাসের দাম হবে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের দশ শতাংশ।

তাছাড়া নতুন পিএসসি অনুযায়ী বিদেশী কোম্পানির অংশীদারিত্ব কমিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার রাজস্ব বাড়ানো হয়েছে। তবে গ্যাসের যে চাহিদা দেশে আছে তার ৩০ শতাংশ হারে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে।

ইমাম বলছেন, শুরুতে কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণের জন্য যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছে তা যৌক্তিক মনে করেন তিনি।

তার কথায়, তাদের অনুসন্ধানে গ্যাস বা তেল পাওয়া গেলে তখন আহরণের জন্য যে চুক্তি হবে সেখানে সরকারের কঠোর হওয়ার সুযোগ থাকবে। এখন জরুরি হলো অনুসন্ধান করে উত্তোলনের আয়োজন করা।

সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এবারের দরপত্রে অংশ নিতে হলে একটি কোম্পানির সাগর থেকে প্রতিদিন পনের ব্যারেল তেল বা ১৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এছাড়া কোম্পানিগুলোকে নিজ দেশের বাইরেও সমুদ্রে তেল গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

কী করতে চায় সরকার
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন বিশ্বে জ্বালানি খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এক্সন মবিল কিছুদিন আগে বঙ্গোপসাগরের সব ব্লক ইজারা চেয়েছিল।

তার কথায়, আমরা তাদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়েছি। তবে এক্সন মবিলের মতো প্রতিষ্ঠানের এমন প্রস্তাব একটি ইঙ্গিত দেয় যে কেন আমাদের সাগর এলাকা গুরুত্বপূর্ণ।

সাগর থেকে গ্যাস আহরণের কাজ আমরা দ্রুততর সময়ে করতে চাই। এটিই আমাদের পরিকল্পনা এবং এটিই আমরা অর্জন করতে চাই। এ জন্যই প্রতিযোগিতামূলক দরে যেন কাজ দেয়া যায় সেজন্য খোলা দরপত্র আহবান করা হয়েছে।

দেশের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। দ্যা ইকনমিস্টেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নসরুল হামিদ।

জানা গেছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক্সন মবিলের সাথে একটি চুক্তির উদ্যোগ নিয়েও সরকার সরে আসে ও পরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সিদ্ধান্ত নেয়।

আবার মিয়ানমার ও ভারতের সাথে জলসীমা আন্তর্জাতিক আদালতে চূড়ান্ত হওয়াটাও বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করবে বলে মনে করছে সরকার।

বদরুল ইমাম বলছেন, এক্সন মবিল বিশ্বে এ খাতের অর্থাৎ অফশোর এক্সপ্লোরেশনে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এবং তারা সব ব্লক ইজারা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় এখন অন্য কোম্পানিগুলোও আগ্রহী হতে পারে।

‘আসলে এ ধরনের কোম্পানি নিজস্ব গবেষণা ছাড়া সাধারণত কোনও এলাকায় যেতে চায় না। বঙ্গোপসাগরের বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের কারণে এখন আন্তর্জাতিক দরপত্রে আরও অনেক কোম্পানির প্রস্তাব আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে,’ বলছিলেন ইমাম।

ঢাকায় কর্মকর্তারা বলছেন, পানিসীমা আলাদা হওয়ার পর মিয়ানমার অনেক বড় একটি গ্যাসক্ষেত্র যেখানে পেয়েছে সেটি আগে বাংলাদেশের অংশেই ছিল। ফলে তার পাশে এখনকার বাংলাদেশ অংশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো বলেই মনে করছেন তারা।

এছাড়া বাংলাদেশ নিজেও একটি মাল্টিক্লায়েন্ট টুডি সার্ভে পরিচালনা করেছে। ফলে ওই অঞ্চল সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা বা তথ্য উপাত্ত এখন সরকারের হাতে আছে।

‘যদিও তেল গ্যাসের প্রকৃত চিত্র জানতে ও আহরণ শুরু করতে ৮/১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দরপত্রের পর সাইট চূড়ান্ত, নানা ধরণের জরিপসহ বিভিন্ন ধাপের কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে পারবে এ সম্পর্কে। তারপর আহরণের বিষয় আসবে,’ বলছিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান নতুন কিছু?
ঢাকায় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে আগেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি কাজ করেছে।

তবে ড্রিল বা খনন করার পর্যায় পর্যন্ত গিয়েই সরে গেছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কোম্পানি হয়তো মনে করেছে যে লেভেলে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে সেখান থেকে উত্তোলন তাদের জন্য লাভজনক নাও হতে পারে।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা মামলায় জয়ের পর বাংলাদেশের যে এলাকা চূড়ান্ত হয়েছে তাতে ঠিক কতটা গ্যাস আছে তা নিয়ে জানার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণের কাজ কাজে সংযুক্ত করার জন্য অনেক দিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।

এর আগে ২০০৮ সালে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র ডেকেছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান কনোকো ফিলিপস দুটি ব্লকের কাজ পেয়েছিল। কিন্তু পরে সরকারের সঙ্গে দাম নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তারা সরে যায়।

এরপর ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চারটি বিদেশী কোম্পানি সাগরে কাজ শুরু করলেও এর তিনটিই পরে কাজ শেষ না করেই চলে যায়। এখন শুধু ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

আবার সে সময়কার প্রস্তাব বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় ছিল না বলেও সমালোচনা আছে।

এ অবস্থায় ২০১৯ সালে পিএসসি সংশোধন করে সরকার, যাতে গত বছরেও কিছু সংশোধনী আনা হয়।

শেষ পর্যন্ত এরপর এক্সন মবিলের প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের প্রস্তুতিতে গতি আসে।
সূত্র : বিবিসি

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

সাগরে তেল গ্যাসের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র, কী করতে চাইছে সরকার?

আপডেট সময় ১২:৪২:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪

প্রায় সাত বছর পর বাংলাদেশের সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে চব্বিশটি ব্লকের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করল বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা)।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন দ্রুততর সময়ের মধ্যে আহরণের কাজ শুরুর লক্ষ্য নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়েছে এবং প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে তারা বিদেশি পত্রিকাতেও বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।

যদিও এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিদেশী নানা কোম্পানি সমুদ্রে গ্যাস আহরণের কাজ পেলেও তাদের একটি ছাড়া বাকিরা খনন পর্যায় থেকেই বিদায় নিয়েছিল।

হামিদ বলছেন, এবার দরপত্র মূল্যায়ন শেষে কাজ দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো জরিপসহ নানা ধাপ অতিক্রম করে তেল গ্যাস পেলে তার পরিমাণ জানতে ও আহরণের কাজ শুরু করতে ৮-১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাগরে মোট ২৬টি ব্লক নির্ধারণ করেছে সরকার, যার মধ্যে পনেরটি গভীর সমুদ্রে আর এগারটি অগভীর সমুদ্রে। এর মধ্যে দুটি ব্লকে অনুসন্ধানের কাজ করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি।

পেট্রোবাংলা বলছে মূলত বাংলাদেশের সমুদ্রে একটি জরিপ পরিচালনা এবং ২০২৩ সালে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি – অফশোর মডেল প্রকাশের পর তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য পরিচিতি আছে এমন কোম্পানিগুলোর মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি বা বাপেক্সের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন সাতটি গ্যাসক্ষেত্র উৎপাদনক্ষম আছে। এগুলোতে মোট গ্যাস মজুদ আছে ১ দশমিক ৭৭৭২ টিসিএফ। এছাড়া এ মুহূর্তে অনুসন্ধান কূপ আছে মোট আঠারটি।

তবে বঙ্গোপসাগরের সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র বেশ আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ ব্যাপক জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে।

রান্নার গ্যাস ছাড়াও সিএনজি, শিল্পকারখানা এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রায়শই। বিশেষজ্ঞদের মতে গ্যাস সংকটের প্রধান কারণ নিজস্ব জ্বালানির উৎপাদন কমছে বাংলাদেশে।

এমন প্রেক্ষাপটে সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ছয় মাসের সময় দিয়ে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করল সরকার।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষাগুলো থেকে প্রাপ্ত ধারণা অনুযায়ী বাংলাদেশের সাগর এলাকায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাসের মজুদ থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে পানিসীমা আন্তর্জাতিক আদালতে আগেই নিষ্পত্তি হলেও বাংলাদেশ সাগর এলাকায় এখনো ব্যাপকভাবে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করতে পারেনি।

দরপত্র আহ্বানের বিজ্ঞপ্তিতে কী আছে?
কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের দরপত্র অনুযায়ী যারাই যে ব্লকের কাজ পাবেন তাতে অংশীদার হবে বাংলাদেশের তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। এ ক্ষেত্রে বাপেক্সের অংশীদারিত্বের পরিমাণ হবে দশ শতাংশ।

তবে এতদিন বড় কোম্পানিগুলোর অনাগ্রহের একটি বড় কারণ ছিল আগেই গ্যাসের দাম বেঁধে দেয়া। ২০২৩ সালের উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি বা পিএসসিতে সেটি রাখা হয়নি।

বরং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের সাথে মিলিয়ে দাম নির্ধারণের কথা থাকায় কোম্পানিগুলোর আগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ডঃ বদরুল ইমাম।

এখন গ্যাসের দাম হবে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের দশ শতাংশ।

তাছাড়া নতুন পিএসসি অনুযায়ী বিদেশী কোম্পানির অংশীদারিত্ব কমিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার রাজস্ব বাড়ানো হয়েছে। তবে গ্যাসের যে চাহিদা দেশে আছে তার ৩০ শতাংশ হারে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়েছে।

ইমাম বলছেন, শুরুতে কোম্পানিগুলোকে আকর্ষণের জন্য যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছে তা যৌক্তিক মনে করেন তিনি।

তার কথায়, তাদের অনুসন্ধানে গ্যাস বা তেল পাওয়া গেলে তখন আহরণের জন্য যে চুক্তি হবে সেখানে সরকারের কঠোর হওয়ার সুযোগ থাকবে। এখন জরুরি হলো অনুসন্ধান করে উত্তোলনের আয়োজন করা।

সরকারের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এবারের দরপত্রে অংশ নিতে হলে একটি কোম্পানির সাগর থেকে প্রতিদিন পনের ব্যারেল তেল বা ১৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এছাড়া কোম্পানিগুলোকে নিজ দেশের বাইরেও সমুদ্রে তেল গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

কী করতে চায় সরকার
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন বিশ্বে জ্বালানি খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এক্সন মবিল কিছুদিন আগে বঙ্গোপসাগরের সব ব্লক ইজারা চেয়েছিল।

তার কথায়, আমরা তাদের দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহবান জানিয়েছি। তবে এক্সন মবিলের মতো প্রতিষ্ঠানের এমন প্রস্তাব একটি ইঙ্গিত দেয় যে কেন আমাদের সাগর এলাকা গুরুত্বপূর্ণ।

সাগর থেকে গ্যাস আহরণের কাজ আমরা দ্রুততর সময়ে করতে চাই। এটিই আমাদের পরিকল্পনা এবং এটিই আমরা অর্জন করতে চাই। এ জন্যই প্রতিযোগিতামূলক দরে যেন কাজ দেয়া যায় সেজন্য খোলা দরপত্র আহবান করা হয়েছে।

দেশের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। দ্যা ইকনমিস্টেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন নসরুল হামিদ।

জানা গেছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এক্সন মবিলের সাথে একটি চুক্তির উদ্যোগ নিয়েও সরকার সরে আসে ও পরে আন্তর্জাতিক দরপত্রের সিদ্ধান্ত নেয়।

আবার মিয়ানমার ও ভারতের সাথে জলসীমা আন্তর্জাতিক আদালতে চূড়ান্ত হওয়াটাও বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য স্বস্তিদায়ক কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করবে বলে মনে করছে সরকার।

বদরুল ইমাম বলছেন, এক্সন মবিল বিশ্বে এ খাতের অর্থাৎ অফশোর এক্সপ্লোরেশনে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এবং তারা সব ব্লক ইজারা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় এখন অন্য কোম্পানিগুলোও আগ্রহী হতে পারে।

‘আসলে এ ধরনের কোম্পানি নিজস্ব গবেষণা ছাড়া সাধারণত কোনও এলাকায় যেতে চায় না। বঙ্গোপসাগরের বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবের কারণে এখন আন্তর্জাতিক দরপত্রে আরও অনেক কোম্পানির প্রস্তাব আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে,’ বলছিলেন ইমাম।

ঢাকায় কর্মকর্তারা বলছেন, পানিসীমা আলাদা হওয়ার পর মিয়ানমার অনেক বড় একটি গ্যাসক্ষেত্র যেখানে পেয়েছে সেটি আগে বাংলাদেশের অংশেই ছিল। ফলে তার পাশে এখনকার বাংলাদেশ অংশে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো বলেই মনে করছেন তারা।

এছাড়া বাংলাদেশ নিজেও একটি মাল্টিক্লায়েন্ট টুডি সার্ভে পরিচালনা করেছে। ফলে ওই অঞ্চল সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা বা তথ্য উপাত্ত এখন সরকারের হাতে আছে।

‘যদিও তেল গ্যাসের প্রকৃত চিত্র জানতে ও আহরণ শুরু করতে ৮/১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দরপত্রের পর সাইট চূড়ান্ত, নানা ধরণের জরিপসহ বিভিন্ন ধাপের কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে পারবে এ সম্পর্কে। তারপর আহরণের বিষয় আসবে,’ বলছিলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

বঙ্গোপসাগরে অনুসন্ধান নতুন কিছু?
ঢাকায় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে আগেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি কাজ করেছে।

তবে ড্রিল বা খনন করার পর্যায় পর্যন্ত গিয়েই সরে গেছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কোম্পানি হয়তো মনে করেছে যে লেভেলে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে সেখান থেকে উত্তোলন তাদের জন্য লাভজনক নাও হতে পারে।

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা মামলায় জয়ের পর বাংলাদেশের যে এলাকা চূড়ান্ত হয়েছে তাতে ঠিক কতটা গ্যাস আছে তা নিয়ে জানার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণের কাজ কাজে সংযুক্ত করার জন্য অনেক দিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা তাগিদ দিয়ে আসছিলেন।

এর আগে ২০০৮ সালে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি আন্তর্জাতিক দরপত্র ডেকেছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান কনোকো ফিলিপস দুটি ব্লকের কাজ পেয়েছিল। কিন্তু পরে সরকারের সঙ্গে দাম নিয়ে সমঝোতা না হওয়ায় তারা সরে যায়।

এরপর ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে চারটি বিদেশী কোম্পানি সাগরে কাজ শুরু করলেও এর তিনটিই পরে কাজ শেষ না করেই চলে যায়। এখন শুধু ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

আবার সে সময়কার প্রস্তাব বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় ছিল না বলেও সমালোচনা আছে।

এ অবস্থায় ২০১৯ সালে পিএসসি সংশোধন করে সরকার, যাতে গত বছরেও কিছু সংশোধনী আনা হয়।

শেষ পর্যন্ত এরপর এক্সন মবিলের প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের প্রস্তুতিতে গতি আসে।
সূত্র : বিবিসি