সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইএলওর চলতি ৩৫০তম অধিবেশনে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে এক পর্যালোচনা হয়। সেখানে বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে জোরালো রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। জেনেভায় সংস্থার চলমান অধিবেশনে গতকাল মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে শ্রম অধিকার চর্চা, শ্রমিকদের ওপর হামলা নির্যাতন বন্ধসহ শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে পশ্চিমাদের তরফে সমালোচনার মুখে আছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য কানাডা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আর্জেন্টিনা বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বেশ সমালোচনামুখর ছিলেন।
গতকাল আলোচনার শুরুতে আইনমন্ত্রী আইএলওর পথনকশা অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি উপস্থাপন করেন। পরে বিভিন্ন দেশ, জোট, সংগঠন ও আইএলওর পরিচালনা পরিষদের সদস্যসহ ২৪ জন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। সবশেষে আইনমন্ত্রী ওই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে পাল্টা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আইএলওর পরিচালনা পরিষদে মালিকদের প্রতিনিধি বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতির তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি এখন পর্যন্ত নেওয়া উদ্যোগের প্রশংসা করেন। আর ভারত, চীন, সৌদি আরব, ইনারসহ অনেক দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা আইএলওর ২৬ ধারা অনুযায়ী ৮১, ৮৭ ও ৯৮ সনদ অনুসরণ না করায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রশ্নোত্তর পর্বে পশ্চিমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর বাংলাদেশ উল্লিখিত সনদ মানছে না বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ নিয়ে গতকালের অধিবেশনে আলোচনার শুরুতে আইএলওর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রিচার্ড এ আদেজোলা গত ২৯ জানুয়ারি আইএলওর কাছে উত্থাপিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে ২০২১ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে আইএলওর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে জোরালো অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সরকার ও অংশীজনদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে আইএলওর কারিগরি সহায়তা এবং মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
এর পর আইএলওর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বাংলাদেশের আইনমন্ত্রীকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান। আইনমন্ত্রী তার বক্তৃতায় লিখিত প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা তুলে ধরেন। এর পর জাতীয় নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন শ্রম আইনের সংশোধন করা গেল না তা ব্যাখ্যা করেন। সংসদের আগামী অধিবেশনে তিনি শ্রম আইন সংশোধনে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি এ সময় জানান, শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম হত্যার চার্জশিট প্রস্তুত, দ্রুতই সম্পন্ন হবে বিচার কাজ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন সলিডারিটি সেন্টারের পরিচালক জেফরি ভগ্ট বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ততার স্বাধীনতা নেই। দরকষাকষিতে যুক্ততার হার খুবই কম। শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নানা ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে। নারী কর্মীরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশের শ্রম আইনে যে সংস্কার হয়েছে তা একেবারেই ন্যূনতম। বিশেষ করে শ্রম অধিকার চর্চার ন্যূনতম শর্ত পথনকশা অনুযায়ী পূরণে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশে শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ও অংশীজনদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার সুপারিশ করে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)। আইএলওর নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের করা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার খসড়া পর্যবেক্ষণে এ সুপারিশ করা হয়।