ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আজানের সময় কানে আঙুল দেয়া

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:৫৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • ১১০৪ বার পড়া হয়েছে

আজানের সময় কানে আঙুল দেয়ার বিষয়ে প্রথমে আমাদের একটি সহজ শরয়ি মূলনীতি জানতে হবে, আর সেটি হলো- ‘ইসলামে অনাবশ্যক (ফরজ নয়) এমন কোনো বিষয় যদি পরবর্তীকালে সময়ের পরিক্রমায় নিষ্প্রয়োজন হয়ে যায় তাহলে সেটিকে করা না করার বিধানের উসুল হিসেবে মানদণ্ড স্থাপন করার নাম হলো ‘উরফ’, অনেকে একই বিষয়কে ‘আদাত’ হিসেবেও সাব্যস্ত করে থাকেন। তবে উরফ এবং আদাতের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

কেননা, একটি হলো সাধারণ কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো হেরফের ছাড়াই অটল থাকার বিষয়; অন্যটি সাধারণ কিছু আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রবিশেষ কেবল। উরফের এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা ইসলামী শরিয়তে ‘মুবাহ’ (করা না করাতে কোনো সমস্যা নেই) মর্মে অভিহিত।

যা হোক, আজানের সময় আঙুল দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কী? আজানের সময় আঙুল দেয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায় হাদিসে এভাবে-
আবু জুহায়ফা রা: বলেন, আমি বেলাল রা:-কে আজান দিতে দেখলাম এবং তাকে মুখ ঘুরাতে দেখলাম। এ সময় তার দুই আঙুল উভয় কানের মধ্যে ছিল। [মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস-৬৫৩, বুলগুল মারাম, হাদিস-১৮২, আহমাদ : ৪/৩০৯-৩০৮, তিরমিজি-১৯৭। (ইমাম তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন) ইবনে মাজাহ, হাদিস-৭১১ (এই হাদিসটিও সহিহ যদিও এ হাদিসের সনদে দুর্বলতা আছে), ইবনে মাজাহ, হাদিস-৭১০ (হাদিসটি দুর্বল), ইরওয়া, হাদিস-২৩০, ২৩১, আবু দাউদ-৫২০ (হাদিসটি মুনকার, অর্থাৎ পরিত্যাজ্য), মুহাক্কিক সুমাইর আজ-জুুহাইরি বুলগুল মারামের (নং-১৮২) ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি বুখারিতে ৬৩৪ নং এবং মুসলিমে ৫০৩ নং-এ ইবনে আবি জুহায়ফাহ থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন)।

সুতরাং, আজানের সময় কানে আঙুল দেয়ার বিষয় নিয়ে মুহাক্কিকরা প্রায় সবাই একমত হয়েছেন যে, কানে আঙুল দিলে নিজের আওয়াজ কত বড় হচ্ছে তা বুঝা যায় না, ফলে তুলনামূলক বড় আওয়াজ করা সম্ভব হয়। ঠিক এই ইঙ্গিতই রয়েছে সুনানে ইবনে মাজার (দুর্বল একটি বর্ণনা) ৭১০ নম্বর হাদিসে।
এ ছাড়া ইমাম তিরমিজি তার হাদিসের ব্যাখায় বলেন, এই নিয়মের প্রতি জ্ঞানীদের আমল রয়েছে। তারা মুয়াজ্জিনের জন্য মুস্তাহাব মনে করেন যেন তিনি আজানের সময় দুই আঙুল কানে প্রবেশ করান। কানে আঙুল রাখার কারণস্বরূপ বলা হয়েছে- এমন রাখলে আওয়াজ উঁচু করতে সাহায্য করে এবং মুয়াজ্জিনের অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় যে, ‘সে এখন আজান দিচ্ছে’।

শুধু তাই নয়, মুহাক্কিকরা সবাই এই মতের ওপর ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন যে, ‘রাসূল সা: যেহেতু কানে আঙুল দেয়ার কোনো নির্দেশ দেননি সেহেতু আঙুল না দিয়ে আজান দিলে তাতে কোনো সমস্যা হবে না। এমনকি, অনেকে বর্তমান যুগে বরং আঙুল না দিয়ে আজান দেয়া সমীচীন মনে করেন। (বাদায়েয়ুস সানায়ে, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৭৪, আদ্দুররুল মুখতার, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৮৮, আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬০৪, ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়াহ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৯)
সুতরাং, আজানের সময় যদি কেউ কানে আঙুল না দেন, তাহলেও আজান শুদ্ধ হয়ে যাবে।

লেখক : গবেষক, টেকনাফ, কক্সবাজার

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

আজানের সময় কানে আঙুল দেয়া

আপডেট সময় ১১:৫৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আজানের সময় কানে আঙুল দেয়ার বিষয়ে প্রথমে আমাদের একটি সহজ শরয়ি মূলনীতি জানতে হবে, আর সেটি হলো- ‘ইসলামে অনাবশ্যক (ফরজ নয়) এমন কোনো বিষয় যদি পরবর্তীকালে সময়ের পরিক্রমায় নিষ্প্রয়োজন হয়ে যায় তাহলে সেটিকে করা না করার বিধানের উসুল হিসেবে মানদণ্ড স্থাপন করার নাম হলো ‘উরফ’, অনেকে একই বিষয়কে ‘আদাত’ হিসেবেও সাব্যস্ত করে থাকেন। তবে উরফ এবং আদাতের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে।

কেননা, একটি হলো সাধারণ কোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে কোনো হেরফের ছাড়াই অটল থাকার বিষয়; অন্যটি সাধারণ কিছু আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রবিশেষ কেবল। উরফের এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা ইসলামী শরিয়তে ‘মুবাহ’ (করা না করাতে কোনো সমস্যা নেই) মর্মে অভিহিত।

যা হোক, আজানের সময় আঙুল দেয়ার প্রয়োজনীয়তা কী? আজানের সময় আঙুল দেয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায় হাদিসে এভাবে-
আবু জুহায়ফা রা: বলেন, আমি বেলাল রা:-কে আজান দিতে দেখলাম এবং তাকে মুখ ঘুরাতে দেখলাম। এ সময় তার দুই আঙুল উভয় কানের মধ্যে ছিল। [মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস-৬৫৩, বুলগুল মারাম, হাদিস-১৮২, আহমাদ : ৪/৩০৯-৩০৮, তিরমিজি-১৯৭। (ইমাম তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান সহিহ বলেছেন) ইবনে মাজাহ, হাদিস-৭১১ (এই হাদিসটিও সহিহ যদিও এ হাদিসের সনদে দুর্বলতা আছে), ইবনে মাজাহ, হাদিস-৭১০ (হাদিসটি দুর্বল), ইরওয়া, হাদিস-২৩০, ২৩১, আবু দাউদ-৫২০ (হাদিসটি মুনকার, অর্থাৎ পরিত্যাজ্য), মুহাক্কিক সুমাইর আজ-জুুহাইরি বুলগুল মারামের (নং-১৮২) ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি বুখারিতে ৬৩৪ নং এবং মুসলিমে ৫০৩ নং-এ ইবনে আবি জুহায়ফাহ থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন)।

সুতরাং, আজানের সময় কানে আঙুল দেয়ার বিষয় নিয়ে মুহাক্কিকরা প্রায় সবাই একমত হয়েছেন যে, কানে আঙুল দিলে নিজের আওয়াজ কত বড় হচ্ছে তা বুঝা যায় না, ফলে তুলনামূলক বড় আওয়াজ করা সম্ভব হয়। ঠিক এই ইঙ্গিতই রয়েছে সুনানে ইবনে মাজার (দুর্বল একটি বর্ণনা) ৭১০ নম্বর হাদিসে।
এ ছাড়া ইমাম তিরমিজি তার হাদিসের ব্যাখায় বলেন, এই নিয়মের প্রতি জ্ঞানীদের আমল রয়েছে। তারা মুয়াজ্জিনের জন্য মুস্তাহাব মনে করেন যেন তিনি আজানের সময় দুই আঙুল কানে প্রবেশ করান। কানে আঙুল রাখার কারণস্বরূপ বলা হয়েছে- এমন রাখলে আওয়াজ উঁচু করতে সাহায্য করে এবং মুয়াজ্জিনের অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায় যে, ‘সে এখন আজান দিচ্ছে’।

শুধু তাই নয়, মুহাক্কিকরা সবাই এই মতের ওপর ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন যে, ‘রাসূল সা: যেহেতু কানে আঙুল দেয়ার কোনো নির্দেশ দেননি সেহেতু আঙুল না দিয়ে আজান দিলে তাতে কোনো সমস্যা হবে না। এমনকি, অনেকে বর্তমান যুগে বরং আঙুল না দিয়ে আজান দেয়া সমীচীন মনে করেন। (বাদায়েয়ুস সানায়ে, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৭৪, আদ্দুররুল মুখতার, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩৮৮, আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৬০৪, ফতোয়ায়ে হাক্কানিয়াহ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৯)
সুতরাং, আজানের সময় যদি কেউ কানে আঙুল না দেন, তাহলেও আজান শুদ্ধ হয়ে যাবে।

লেখক : গবেষক, টেকনাফ, কক্সবাজার