এক বছর আগে নির্মাণ শেষ হয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের। হলটিতে প্রায় ৬০০ ছাত্রীর আসন বণ্টনের জন্য পাঁচ মাস আগে আবেদনও নেওয়া হয়। কিন্তু হলটিতে ছাত্রীদের ওঠার দিনক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ হলটি খুলে দেওয়া হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেয়াদের শেষ সময়ে ববি উপাচার্য প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে হলটি উদ্বোধন করাতে চান। কিন্তু এই অপেক্ষা কবে শেষ হবে তা বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউ।
বিশ্ববিদালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের তথ্যমতে, প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২২ সালের মার্চে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের কাজ সম্পন্ন হয়। এর আগে ছাত্রীনিবাসের কাজ নিজস্ব ঠিকাদারকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য বারবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। যে কারণে হলের নির্মাণকাজ শেষ হতেও দেরি হয়। এ প্রসঙ্গে ববির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের উপপরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, তিনি প্রকল্পের দায়িত্ব পান ২০২২ সালের ২৩ মে। এর আগেই হলটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ভূমিকা সরকার বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ছাত্রীদের মেসে থাকা ব্যয়বহুল। কিন্তু নতুন হলের নির্মাণ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর। অথচ খোঁড়া যুক্তিতে ছাত্রীদের আসন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানতে চান প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের আগে ছাত্রীদের আসন বণ্টনে নিষেধ করেছেন? নাকি প্রধানমন্ত্রীর অজুহাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছাত্রীকে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ছাত্রীদের জন্য সচল একমাত্র ছাত্রীনিবাস শেখ হাসিনা হলে এক শয্যায় দুজন থাকেন। এক কক্ষে আটজনের আসন। কীভাবে ছাত্রীরা সেখানে থাকেন?
মৃত্তিকা ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা রহমান বলেন, তাঁরা পাঁচ মাস আগে এই ছাত্রীনিবাসে আসন পেতে মৌখিক পরীক্ষাও দিয়েছেন। হলটিতে শয্যা, ফ্যান, লাইট, আয়া, বুয়া, স্টাফ, প্রভোস্টও আগে থেকেই অলস সময় কাটাচ্ছেন। ছাত্রীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। তাঁরা পরিকল্পনা নিয়েছেন শিগগিরই উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ভাগের তিন ভাগ ছাত্রীই হলের বাইরে বাড়তি ব্যয় বহন করে থাকেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট তাসনুভা হাবিব জিসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে হলটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। উদ্বোধন হলেই আবেদন করা ছাত্রীদের হলে তুলবেন। তবে কবে নাগাদ উদ্বোধন হতে পারে তা তাঁর জানা নেই। প্রভোস্ট তাসনুভা বলেন, ‘আসলে ওদেরও (ছাত্রী) অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু উদ্বোধন না হলে তো হলে ছাত্রীদের জায়গা দেওয়া যাবে না। এ হলে ডাবলিং করে ছয় শতাধিক ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘উপাচার্যের চার বছরের মেয়াদ আগামী ৫ নভেম্বর শেষ হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে হলটি উদ্বোধন করার ইচ্ছা তাঁর। কিন্তু এই ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে তিনি ছাত্রীদের দুরবস্থার কথা ভাবছেন না। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা প্রায় চার হাজার।’ ববির ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া হল খুলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, হলটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তারিখ চেয়েছেন। মন্ত্রণালয় যেদিন প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল দেবে, সেদিনই উদ্বোধনের পর খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু কবে নাগাদ তা হতে পারে, এর কোনো তথ্য জানাতে পারেননি তিনি। আজকের পত্রিকা