ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

শর্ত বাস্তবায়নে চাপ আসবে সাধারণ মানুষের ওপর

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১২৯৩ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে তিন বছরে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। তবে এক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে মোটা দাগে শর্তপূরণ করতে হবে। মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটিই দাম ঠিক করা, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সব সময় সমন্বয় করা, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে দেওয়া, কর অব্যাহতি কমানো ইত্যাদি। অর্থনীতির বর্তমান সময়ে শর্তগুলো পূরণের খেসারত দিতে হতে পারে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে সরকার জ¦ালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ভর্তুকি কমাতে আরও উপায় খুঁজছে। এখন পানির দাম বাড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মাসে মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। একইভাবে আবারও সমন্বয় করা হবে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের দামও। কারণ, সরকারকে এসব খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। এতেই সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এখন যদি সরকার রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, তা হলেও সেটি সাধারণ মানুষের ওপর আরও চাপ তৈরি করবে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তপূরণে সারের পর তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, এতে সরকারের ভর্তুকি কমেছে, কিন্তু বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি।
বহুজাতিক সংস্থা অক্সফাম সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘দ্য অ্যাসল্ট অব অস্টিয়ারিটি’ বা ‘কৃচ্ছ্রসাধনের নীতির অভিঘাত’। তাদের ভাষ্য, বিশ্বব্যাপী এই কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই নীতি গ্রহণে বাধ্য করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ভূমিকা আছে। তাদের কুখ্যাত কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচি (এসএপি) এক সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ এক সময় অনেক বেশি ছিল, যেমন বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের ৮০ শতাংশের ওপর এক সময় বিদেশি ঋণনির্ভর ছিল। এই কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর ঋণ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত করা। অক্সফামের প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে।

অথচ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিলে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়িয়ে দেবে। এতে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের খরচ বাড়বে। তাতে পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে, যার ভুক্তভোগী হবেন সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান আমাদের সময়কে বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম ইতোমধ্যে সরকার বাড়িয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। আইএমএফের ঋণের জন্য অনেক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। তবে এগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা। দেশের পরিস্থিতি মাথায় রেখে সংস্কারগুলো সময়মতো করতে পারলে মানুষের ওপর চাপ তৈরি হতো না। ঋণ পেতে অনেক ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু সময়মতো কাজগুলো করলে মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতো না। এ জন্য সরকারকে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ প্রশমিত করতে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির করার ক্ষেত্রে অনেক সময় সিস্টেম লস কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, ভর্তুকি কমানো, সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের এক দর করাসহ সব ধরনের সংস্কারেরই একটা মূল্য ও ব্যথা আছে। এ ব্যথা বহন করতে হয় শেষ পর্যন্ত জনগণকে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষকে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলেও যেটা দেখা গেছে। সংস্কারের মূল্যটা গরিব মানুষের বদলে সুবিধাভোগী শ্রেণির ওপরও পড়ুক, এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সাহসী ভূমিকা দেখতে চাই। অর্থনীতি এখন যে ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আইএমএফের পরামর্শ মানতে গেলে মূল্যস্ফীতি তো কমবেই না, উল্টো বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য সামাজিক কর্মসূচি চালু রাখতে হবে।

এদিকে কর-জিডিপির হার ঋণপ্রাপ্তির প্রথম দুই বছর দশমিক ৫০ শতাংশ ও পরের বছর দশমিক ৭০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলেছে আইএমএফ। দেশের রাজস্ব প্রশাসনের প্রবণতা হচ্ছে, যারা কর দেন, তাদের ওপরই বাড়তি করের বোঝা চাপানো। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে সরকার সে পথেই যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এসব সংস্কারের কথা বলে আসছিলাম। কিন্তু সেগুলো হয়নি। ঋণের কারণে যদি সেগুলো বাস্তবায়িত হলে ভালো। কর আদায় বৃদ্ধি মানে কিন্তু করহার বৃদ্ধি নয়, যারা কর দেন না তাদের কাছ থেকে কর আহরণ করতে হবে। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। এ জন্য চাপ তৈরি হবে, তবে তা নিরসনে সরকারকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চালু থাকা কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যেসব কারণে আমাদের অর্থনীতিতে সংকট চলছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ২০১২ সালেও আইএমএফ অনেক পরামর্শ দিয়েছিল, যেগুলো এখন পুনরায় বলছে। এগুলো যদি আমরা নিজেরাই অনুধাবন করে বাস্তবায়ন না করি, তা হলে কাজের কাজ কিছু হবে না। সংস্কারের বিষয়ে আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এটা শুধু অর্থনীতির বিষয় না। এখানে রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয়ও আছে।

আমাদের অর্থনীতির প্রধান জায়গাগুলো যেমন- অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, নীতিমালা, নীতির বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ইত্যাদি এখনো শক্তিশালী অবস্থানে নেই। এ কারণে আমরা সাম্প্রতিক সংকট দেখছি। এক সঙ্গে টাকার এত অবমূল্যায়নের প্রয়োজন ছিল না। আগে থেকেই একটু একটু করে অবমূল্যায়নের সুযোগ ছিল। অর্থনীতিবিদরা চার-পাঁচ বছর ধরে এ পরামর্শই দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেটি কর্ণপাত করা হয়নি। এ কারণে হুট করে টাকার এতটা অবমূল্যায়ন হয়েছে। আইএমএও অনেক সংস্কারের শর্ত দিয়েছে। ফলে এসব সংস্কার করা গেলে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া বিদেশি ঋণ প্রকৃত অর্থে কাজে লাগাতে পারব।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

শর্ত বাস্তবায়নে চাপ আসবে সাধারণ মানুষের ওপর

আপডেট সময় ১১:০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে সাড়ে তিন বছরে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। তবে এক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে মোটা দাগে শর্তপূরণ করতে হবে। মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দেওয়া, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে একটিই দাম ঠিক করা, জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে সব সময় সমন্বয় করা, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে দেওয়া, কর অব্যাহতি কমানো ইত্যাদি। অর্থনীতির বর্তমান সময়ে শর্তগুলো পূরণের খেসারত দিতে হতে পারে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষকে।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে সরকার জ¦ালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। পাশাপাশি ভর্তুকি কমাতে আরও উপায় খুঁজছে। এখন পানির দাম বাড়ানোর অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। এ ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মাসে মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হবে। একইভাবে আবারও সমন্বয় করা হবে পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাসের দামও। কারণ, সরকারকে এসব খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। এতেই সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এখন যদি সরকার রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়, তা হলেও সেটি সাধারণ মানুষের ওপর আরও চাপ তৈরি করবে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তপূরণে সারের পর তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, এতে সরকারের ভর্তুকি কমেছে, কিন্তু বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি।
বহুজাতিক সংস্থা অক্সফাম সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ‘দ্য অ্যাসল্ট অব অস্টিয়ারিটি’ বা ‘কৃচ্ছ্রসাধনের নীতির অভিঘাত’। তাদের ভাষ্য, বিশ্বব্যাপী এই কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই নীতি গ্রহণে বাধ্য করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ভূমিকা আছে। তাদের কুখ্যাত কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচি (এসএপি) এক সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের পরিমাণ এক সময় অনেক বেশি ছিল, যেমন বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের ৮০ শতাংশের ওপর এক সময় বিদেশি ঋণনির্ভর ছিল। এই কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল, আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলোর ঋণ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত করা। অক্সফামের প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে।

অথচ অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিলে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়িয়ে দেবে। এতে পণ্য ও সেবা উৎপাদনের খরচ বাড়বে। তাতে পণ্যের দামও বেড়ে যেতে পারে, যার ভুক্তভোগী হবেন সাধারণ মানুষ।

এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান আমাদের সময়কে বলেন, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম ইতোমধ্যে সরকার বাড়িয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। আইএমএফের ঋণের জন্য অনেক সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। তবে এগুলো আমাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা। দেশের পরিস্থিতি মাথায় রেখে সংস্কারগুলো সময়মতো করতে পারলে মানুষের ওপর চাপ তৈরি হতো না। ঋণ পেতে অনেক ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু সময়মতো কাজগুলো করলে মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হতো না। এ জন্য সরকারকে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ প্রশমিত করতে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির করার ক্ষেত্রে অনেক সময় সিস্টেম লস কমানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, ভর্তুকি কমানো, সুদের হার বৃদ্ধি, ডলারের এক দর করাসহ সব ধরনের সংস্কারেরই একটা মূল্য ও ব্যথা আছে। এ ব্যথা বহন করতে হয় শেষ পর্যন্ত জনগণকে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষকে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলেও যেটা দেখা গেছে। সংস্কারের মূল্যটা গরিব মানুষের বদলে সুবিধাভোগী শ্রেণির ওপরও পড়ুক, এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সাহসী ভূমিকা দেখতে চাই। অর্থনীতি এখন যে ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আইএমএফের পরামর্শ মানতে গেলে মূল্যস্ফীতি তো কমবেই না, উল্টো বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য সামাজিক কর্মসূচি চালু রাখতে হবে।

এদিকে কর-জিডিপির হার ঋণপ্রাপ্তির প্রথম দুই বছর দশমিক ৫০ শতাংশ ও পরের বছর দশমিক ৭০ শতাংশ হারে বৃদ্ধির কথা বলেছে আইএমএফ। দেশের রাজস্ব প্রশাসনের প্রবণতা হচ্ছে, যারা কর দেন, তাদের ওপরই বাড়তি করের বোঝা চাপানো। আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে সরকার সে পথেই যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এসব সংস্কারের কথা বলে আসছিলাম। কিন্তু সেগুলো হয়নি। ঋণের কারণে যদি সেগুলো বাস্তবায়িত হলে ভালো। কর আদায় বৃদ্ধি মানে কিন্তু করহার বৃদ্ধি নয়, যারা কর দেন না তাদের কাছ থেকে কর আহরণ করতে হবে। এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। এ জন্য চাপ তৈরি হবে, তবে তা নিরসনে সরকারকে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চালু থাকা কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।

সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান জানান, যেসব কারণে আমাদের অর্থনীতিতে সংকট চলছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ২০১২ সালেও আইএমএফ অনেক পরামর্শ দিয়েছিল, যেগুলো এখন পুনরায় বলছে। এগুলো যদি আমরা নিজেরাই অনুধাবন করে বাস্তবায়ন না করি, তা হলে কাজের কাজ কিছু হবে না। সংস্কারের বিষয়ে আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এটা শুধু অর্থনীতির বিষয় না। এখানে রাজনৈতিক অর্থনীতির বিষয়ও আছে।

আমাদের অর্থনীতির প্রধান জায়গাগুলো যেমন- অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, নীতিমালা, নীতির বাস্তবায়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ইত্যাদি এখনো শক্তিশালী অবস্থানে নেই। এ কারণে আমরা সাম্প্রতিক সংকট দেখছি। এক সঙ্গে টাকার এত অবমূল্যায়নের প্রয়োজন ছিল না। আগে থেকেই একটু একটু করে অবমূল্যায়নের সুযোগ ছিল। অর্থনীতিবিদরা চার-পাঁচ বছর ধরে এ পরামর্শই দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেটি কর্ণপাত করা হয়নি। এ কারণে হুট করে টাকার এতটা অবমূল্যায়ন হয়েছে। আইএমএও অনেক সংস্কারের শর্ত দিয়েছে। ফলে এসব সংস্কার করা গেলে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া বিদেশি ঋণ প্রকৃত অর্থে কাজে লাগাতে পারব।