ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

৪৬১৯ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:১৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১২৯৯ বার পড়া হয়েছে

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ঐতিহাসিক প্রতীক শহীদ মিনার। যে মিনার বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী। অথচ রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৫০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো সেই শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়নি। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর আর স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও রংপুর বিভাগের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীরা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানতে পারছে না। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানও করতে পারছে না। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই তারা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ-কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে তাতেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সচেতনমহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি দ্রুত সরকারি নির্দেশনা বাস্তয়ায়নে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক।

জানা যায়, রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় ৯ হাজার ৫৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৪ হাজার ৯২৫টিতে। বাকি ৪ হাজার ৬১৯টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তবে বিভাগের মধ্যে দিনাজপুর জেলায় প্রায় শতভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। আর সবচেয়ে কম শহীদ মিনার রয়েছে গাইবান্ধা জেলায়। স্থানীয়রা জানান, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, তারা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষাশহীদ ও সংগ্রামীদের স্মরণ করেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাি নিবেদন করে থাকেন। এতে দুর্ভোগসহ নানা সমস্যা হয়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি করছেন সর্বস্তরের মানুষ।

রংপুর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলার ১ হাজার ৪৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৮৩৫টিতে। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে ৯৯২টির মধ্যে ৩৫৪টিতে, পঞ্চগড়ে ৬৬৩টির মধ্যে মাত্র ১২৩টিতে, দিনাজপুরে ১ হাজার ৮৭০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৪টিতে, নীলফামারীতে ১ হাজার ৮৫টির মধ্যে ৮৩২টিতে, লালমনিরহাটে ৬৬৮টির মধ্যে ৪৪৭টিতে, কুড়িগ্রামের ১ হাজার ২৪০টির মধ্যে ২১৬টি রয়েছে এবং গাইবান্ধায় ১ হাজার ৪৬৫টির মধ্যে ২৫৪টিতে শহীদ মিনার রয়েছে।
সরেজমিনে রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করে থাকেন। আবার কেউ কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলো না এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। অনেক বিদ্যালয়ে জায়গা স্বল্পতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা বলেন, ভাষাশহীদদের স্মরণ করতে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে। রংপুরের ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেন বড়দা বলেন, সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত। এই মিনার আমাদের ইতিহাস ও অর্জনের অন্যতম স্তম্ভ। বর্তমানে বিভাগের অর্ধেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এতে জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে না। ফলে তারা ইতিহাস চর্চার সুযোগ পাচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিকের উপ-পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ের তালিকা করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বেশকিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। বাকিগুলোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

৪৬১৯ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার

আপডেট সময় ১১:১৬:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ঐতিহাসিক প্রতীক শহীদ মিনার। যে মিনার বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের সাক্ষী। অথচ রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ৫০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনো সেই শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়নি। ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর আর স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও রংপুর বিভাগের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীরা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানতে পারছে না। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানও করতে পারছে না। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই তারা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ-কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে তাতেই শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সচেতনমহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি দ্রুত সরকারি নির্দেশনা বাস্তয়ায়নে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হোক।

জানা যায়, রংপুরসহ বিভাগের ৮ জেলায় ৯ হাজার ৫৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৪ হাজার ৯২৫টিতে। বাকি ৪ হাজার ৬১৯টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। তবে বিভাগের মধ্যে দিনাজপুর জেলায় প্রায় শতভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। আর সবচেয়ে কম শহীদ মিনার রয়েছে গাইবান্ধা জেলায়। স্থানীয়রা জানান, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, তারা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশ ও কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে সেখানে ফুলেল শ্রদ্ধায় ভাষাশহীদ ও সংগ্রামীদের স্মরণ করেন। আবার কেউ কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাি নিবেদন করে থাকেন। এতে দুর্ভোগসহ নানা সমস্যা হয়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি করছেন সর্বস্তরের মানুষ।

রংপুর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর জেলার ১ হাজার ৪৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৮৩৫টিতে। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে ৯৯২টির মধ্যে ৩৫৪টিতে, পঞ্চগড়ে ৬৬৩টির মধ্যে মাত্র ১২৩টিতে, দিনাজপুরে ১ হাজার ৮৭০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৪টিতে, নীলফামারীতে ১ হাজার ৮৫টির মধ্যে ৮৩২টিতে, লালমনিরহাটে ৬৬৮টির মধ্যে ৪৪৭টিতে, কুড়িগ্রামের ১ হাজার ২৪০টির মধ্যে ২১৬টি রয়েছে এবং গাইবান্ধায় ১ হাজার ৪৬৫টির মধ্যে ২৫৪টিতে শহীদ মিনার রয়েছে।
সরেজমিনে রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই।

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করে থাকেন। আবার কেউ কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলো না এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়গুলোতে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণে বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। অনেক বিদ্যালয়ে জায়গা স্বল্পতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা বলেন, ভাষাশহীদদের স্মরণ করতে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে। রংপুরের ভাষাসৈনিক আশরাফ হোসেন বড়দা বলেন, সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত। এই মিনার আমাদের ইতিহাস ও অর্জনের অন্যতম স্তম্ভ। বর্তমানে বিভাগের অর্ধেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। এতে জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে না। ফলে তারা ইতিহাস চর্চার সুযোগ পাচ্ছে না। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শহীদ মিনার নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিকের উপ-পরিচালক মো. মুজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ের তালিকা করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বেশকিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে। বাকিগুলোর জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।