ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিদেশি ঋণ ৫ বছরে দ্বিগুণ

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১১:২৬:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১১৩৬ বার পড়া হয়েছে

বিদেশি উৎস থেকে বাংলাদেশের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর শেষে এই ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। যা এক বছর আগেও ছিল ৯ হাজার ১৪৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত এক বছরে বেড়েছে ২৩৭ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত ৫ বছরের ব্যবধানে এই ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও গত বছরই সবচেয়ে কম বেড়েছে। এদিকে বছর বছর বাড়ছে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণও। গত বছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫২ ডলার বা ৫৯ হাজার ১০৮ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ নেয়া ব্যাপকহারে বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই বেড়েছে ঋণ। তবে দেশের জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ এখনো নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি যেকোনো দেশের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ এখন জিডিপির প্রায় ২১ শতাংশেরও কম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনে দিনে চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। আগে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সুদবিহীন কিংবা নামমাত্র সুদে ঋণ পাওয়া গেলেও, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি বিবেচনায় সস্তা ঋণ পাওয়া থেকে বাদ পড়ছে দেশ। এ ছাড়া আগে থেকেই কমে গেছে অনুদান।
সম্প্রতি দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন অনেকেই। কারণ গত কয়েক বছর ধরে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বেসরকারি বিদেশি ঋণে সরকারের সার্বভৌম গ্যারান্টি থাকায় ঋণগ্রহীতা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সরকারকে দায় শোধ করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ তুলনামূলক বেশি বেড়েছে। তা ছাড়া করোনার কারণে এসব ঋণ পরিশোধ না করে সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। সে কারণে এখন ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল শেষে বিদেশি উৎস থেকে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৮১ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে ছিল ৫ হাজার ২১৩ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে তা ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ডলার, ২০২১ সালে তা দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৪৩ কোটি ডলারে। আর গত বছর তা ৯ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত ৫ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বিদেশি ঋণ।

বিপুল অঙ্কের এই বিদেশি ঋণের মধ্যে ৭৪ শতাংশ সরকারি খাতের। বাকি ২৬ শতাংশ ঋণ নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাত। অর্থাৎ মোট বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলার। বাকি ২ হাজার ৪৩১ কোটি ডলার ঋণ গেছে বেসরকারি খাতে। যদিও গত বছরের জুনে সার্বিক বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ৯ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। তবে গত কয়েক মাস স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ থাকায় মোট বিদেশি ঋণের স্থিতি কিছুটা কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশি ঋণের ওপর এতটা নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। কারণ এই ঋণের বোঝা দেশের সাধারণ মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরও বর্তায়। আগামীতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তিনি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

বিদেশি ঋণ ৫ বছরে দ্বিগুণ

আপডেট সময় ১১:২৬:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বিদেশি উৎস থেকে বাংলাদেশের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। গত বছর শেষে এই ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। যা এক বছর আগেও ছিল ৯ হাজার ১৪৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত এক বছরে বেড়েছে ২৩৭ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত ৫ বছরের ব্যবধানে এই ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যদিও গত বছরই সবচেয়ে কম বেড়েছে। এদিকে বছর বছর বাড়ছে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণও। গত বছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫২ ডলার বা ৫৯ হাজার ১০৮ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ নেয়া ব্যাপকহারে বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই বেড়েছে ঋণ। তবে দেশের জিডিপির অনুপাতে বিদেশি ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ এখনো নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে জিডিপির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের স্থিতি যেকোনো দেশের জন্য নিরাপদ। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ এখন জিডিপির প্রায় ২১ শতাংশেরও কম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনে দিনে চড়া সুদের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। আগে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সুদবিহীন কিংবা নামমাত্র সুদে ঋণ পাওয়া গেলেও, এখন সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি বিবেচনায় সস্তা ঋণ পাওয়া থেকে বাদ পড়ছে দেশ। এ ছাড়া আগে থেকেই কমে গেছে অনুদান।
সম্প্রতি দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন অনেকেই। কারণ গত কয়েক বছর ধরে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বেসরকারি বিদেশি ঋণে সরকারের সার্বভৌম গ্যারান্টি থাকায় ঋণগ্রহীতা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে সরকারকে দায় শোধ করতে হবে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ তুলনামূলক বেশি বেড়েছে। তা ছাড়া করোনার কারণে এসব ঋণ পরিশোধ না করে সময় বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। সে কারণে এখন ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৭ সাল শেষে বিদেশি উৎস থেকে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৮১ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে ছিল ৫ হাজার ২১৩ কোটি ডলার। ২০১৯ সালে তা ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ডলার, ২০২০ সালে ৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ডলার, ২০২১ সালে তা দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৪৩ কোটি ডলারে। আর গত বছর তা ৯ হাজার ৩৮০ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত ৫ বছরের মধ্যে ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায় বিদেশি ঋণ।

বিপুল অঙ্কের এই বিদেশি ঋণের মধ্যে ৭৪ শতাংশ সরকারি খাতের। বাকি ২৬ শতাংশ ঋণ নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাত। অর্থাৎ মোট বিদেশি ঋণের মধ্যে সরকারের নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলার। বাকি ২ হাজার ৪৩১ কোটি ডলার ঋণ গেছে বেসরকারি খাতে। যদিও গত বছরের জুনে সার্বিক বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ৯ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। তবে গত কয়েক মাস স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ থাকায় মোট বিদেশি ঋণের স্থিতি কিছুটা কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশি ঋণের ওপর এতটা নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। কারণ এই ঋণের বোঝা দেশের সাধারণ মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপরও বর্তায়। আগামীতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শও দেন তিনি।