ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিএনপিতে সাংগঠনিক অ্যাকশন শুরু

  • মঈন উদ্দিন খান
  • আপডেট সময় ১১:৪৫:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
  • ১১০৫ বার পড়া হয়েছে

– ঢাকাসহ চার মহানগর বিএনপি ও যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত, আসছে তরুণ নেতৃত্ব
– ভেঙে দেয়া হবে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও

সরকারবিরোধী আন্দোলন ব্যর্থতার জেরে ঢাকাসহ চার মহানগর বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফের সাংগঠনিক অ্যাকশনের মাধ্যমে দলগঠন শুরু করেছে দলটি। জানা গেছে, আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বে দলের গুরুত্বপূর্ণ এসব সংগঠন সাজাবে বিএনপি। ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে কমিটি ভেঙে দেয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, আজ-কালের মধ্যেই সেখানে নতুন কমিটি দেয়া হবে। ফলে নেতৃত্বে কারা আসছেন, এখন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। পদপ্রত্যাশীরাও ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবিরে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এসব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সেখানে নতুন কমিটি দেয়া হবে। নতুন সেই কমিটির নেতৃত্বে সংগঠন আরো সুসংহত ও গতিশীল হবে।

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বছরের বেশি কালব্যাপী রাজপথে আন্দোলন করে বিএনপি। তবে সরকারের দমন-পীড়নের পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে কার্যকর ও প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখায় সরকারবিরোধী সেই আন্দোলনে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি বলে মনে করে দলটি। এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াতে মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও গত ১ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে সেখানে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। তখনই যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের। তবে ১২ মার্চ থেকে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ায় সে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়ে যায়। রমজানজুড়ে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে সংগঠনকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এ ছাড়া তৃণমূলে সংগঠনকে উজ্জীবিত করতে সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে গিয়ে কারামুক্ত নেতাদের সংবর্ধনা দিয়েছে যুবদল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার পাশাপাশি গত ৫ জুন জামিনে কারামুক্ত হওয়ার পর যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুও কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। এরপরই প্রায় বছরখানেক মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হলো।

২০২২ সালের ২২ মে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সভাপতি এবং আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের ৮ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর নয় মাস পর গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সংগঠনটির ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়।

জানা গেছে, আজ-কালের মধ্যে যুবদলের নতুন আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিলুপ্ত কমিটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন মোনায়েম মুন্না, মামুন হাসান ও নুরুল ইসলাম নয়ন। যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের নামও রয়েছে আলোচনায়। তবে সাবেক ছাত্রনেতারাও যুবদলের নেতৃত্বে আসতে জোর লবিং শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এ দিকে ২০২১ সালের ২ আগস্ট আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্যসচিব করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একইসাথে আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্যসচিব করে গঠন করা হয় মহানগর উত্তর বিএনপির ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিও। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় বিগত আন্দোলন সফলে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির ওপর ব্যাপক ভরসা ও আস্থা ছিল দলের হাইকমান্ডের।

কিন্তু বিগত কয়েকটি আন্দোলনের মতো এবারও হাইকমান্ডের আশা পূরণ করতে পারেনি মহানগর বিএনপি। একদফার আন্দোলন চলাকালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন দমহানগর উত্তর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আমানের অনুপস্থিতিতে পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনারকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। আন্দোলনের মধ্যেই গত ২ নভেম্বর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হককেও গ্রেফতার করা হয়। তবে আগে থেকে মহানগরের রাজনীতির সাথে ডোনারের সেভাবে সম্পৃক্ততা না থাকায় চূড়ান্ত পর্যায়ে মহানগর উত্তরে জোরাল আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। অবশ্য এ জন্য মহানগর উত্তরে ‘সংগঠন না থাকার’ অভিযোগও করেন এই পেশাজীবী নেতা, যা তিনি পরে বিএনপির হাইকমান্ডকেও জানান বলে জানা যায়।

উত্তরের মতো মহানগর দক্ষিণেও তেমন আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। আন্দোলনের শুরুতে গত বছরের ২২ মে দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করা হলে তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করা হয়। দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বাইরে থাকলেও আন্দোলনের পুরোটা সময়জুড়ে ছিলেন আত্মগোপনে। এর ফলে দক্ষিণেও গড়ে ওঠেনি জোরাল আন্দোলন। অবশ্য আত্মগোপনে থাকলেও আন্দোলন সংগঠিত করতে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের সাথে সালামের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে দাবি তার ঘনিষ্ঠজনদের। সব মিলিয়ে আন্দোলন ব্যর্থতায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতৃত্বের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন দলের হাইকমান্ড। ফলে ভেঙে দেয়া হয়েছে দলের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ইউনিটের কমিটি।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, শিগগিরই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে নতুন আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে, যেটা হবে তারুণ্যনির্ভর। দীর্ঘদিন ধরে বয়স্করা মহানগরের নেতৃত্ব দিলেও এবার তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে চান হাইকমান্ড। ফলে দুই মহানগরেই সভাপতি পদে নতুন মুখ আসতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিনিয়র কাউকে নেতৃত্বে আনা না হলে মহানগর উত্তরের সভাপতি পদে বিদায়ী কমিটির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ পদে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে নীরব কারাগারে থাকায় তার সম্ভাবনা কম বলে অনেকে মনে করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের নাম আলোচনায় রয়েছে।
উত্তরের শীর্ষ পদে যুবদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম শোনা গেলেও তাকে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হতে পারে। তাকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হতে পারে। অবশ্য টুকু যুগ্ম মহাসচিব হতে চান বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের দাবি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণে রফিকুল আলম মজনুকে সভাপতি এবং তানভীর আহমেদ রবিনকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে শীর্ষ পদে দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হামিদুর রহমান হামিদ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিব এবং সদ্য বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ইশরাক হোসেনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে হামিদুর রহমান হামিদ অপেক্ষাকৃত বয়ষ্ক হওয়ায় এবং মহানগরে ছোট্ট বলয় নিয়ে উঠবস করায় তার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, জাতীয়বাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও যেকোনো মুহূর্তে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। অন্যান্য মহানগরীতেও দেয়া হবে নতুন কমিটি। বরিশাল মহানগররীতে মনিরুজ্জামান ফারুক ও জিয়াউদ্দিন সিকদারের নেতৃত্বে নতুন কমিটি দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছে বিএনপি। পাশাপাশি যুবদলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কমিটি গঠন, পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় জাতীয়তাবাদী যুবদল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। যথাসময়ে সেখানে নতুন করে কমিটি ঘোষণা করা হবে। নতুন কমিটির মাধ্যমে সংগঠন আরো ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত ও গতিশীল হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুনর্গঠন নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সংগঠনের সব নেতৃত্বই পাল্টে ফেলা হবে। ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

বিএনপিতে সাংগঠনিক অ্যাকশন শুরু

আপডেট সময় ১১:৪৫:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪

– ঢাকাসহ চার মহানগর বিএনপি ও যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত, আসছে তরুণ নেতৃত্ব
– ভেঙে দেয়া হবে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও

সরকারবিরোধী আন্দোলন ব্যর্থতার জেরে ঢাকাসহ চার মহানগর বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফের সাংগঠনিক অ্যাকশনের মাধ্যমে দলগঠন শুরু করেছে দলটি। জানা গেছে, আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বে দলের গুরুত্বপূর্ণ এসব সংগঠন সাজাবে বিএনপি। ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে কমিটি ভেঙে দেয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, আজ-কালের মধ্যেই সেখানে নতুন কমিটি দেয়া হবে। ফলে নেতৃত্বে কারা আসছেন, এখন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। পদপ্রত্যাশীরাও ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবিরে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এসব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সেখানে নতুন কমিটি দেয়া হবে। নতুন সেই কমিটির নেতৃত্বে সংগঠন আরো সুসংহত ও গতিশীল হবে।

সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বছরের বেশি কালব্যাপী রাজপথে আন্দোলন করে বিএনপি। তবে সরকারের দমন-পীড়নের পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে কার্যকর ও প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখায় সরকারবিরোধী সেই আন্দোলনে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি বলে মনে করে দলটি। এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াতে মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও গত ১ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে সেখানে নতুন নেতৃত্ব আনা হয়। তখনই যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের। তবে ১২ মার্চ থেকে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হওয়ায় সে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়ে যায়। রমজানজুড়ে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে সংগঠনকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। এ ছাড়া তৃণমূলে সংগঠনকে উজ্জীবিত করতে সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে গিয়ে কারামুক্ত নেতাদের সংবর্ধনা দিয়েছে যুবদল। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার পাশাপাশি গত ৫ জুন জামিনে কারামুক্ত হওয়ার পর যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুও কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। এরপরই প্রায় বছরখানেক মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হলো।

২০২২ সালের ২২ মে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সভাপতি এবং আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে যুবদলের ৮ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর নয় মাস পর গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সংগঠনটির ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হয়।

জানা গেছে, আজ-কালের মধ্যে যুবদলের নতুন আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিলুপ্ত কমিটির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন মোনায়েম মুন্না, মামুন হাসান ও নুরুল ইসলাম নয়ন। যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের নামও রয়েছে আলোচনায়। তবে সাবেক ছাত্রনেতারাও যুবদলের নেতৃত্বে আসতে জোর লবিং শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এ দিকে ২০২১ সালের ২ আগস্ট আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্যসচিব করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একইসাথে আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও আমিনুল হককে সদস্যসচিব করে গঠন করা হয় মহানগর উত্তর বিএনপির ৪৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিও। ঢাকা রাজধানী হওয়ায় বিগত আন্দোলন সফলে মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির ওপর ব্যাপক ভরসা ও আস্থা ছিল দলের হাইকমান্ডের।

কিন্তু বিগত কয়েকটি আন্দোলনের মতো এবারও হাইকমান্ডের আশা পূরণ করতে পারেনি মহানগর বিএনপি। একদফার আন্দোলন চলাকালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন দমহানগর উত্তর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আমানের অনুপস্থিতিতে পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনারকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। আন্দোলনের মধ্যেই গত ২ নভেম্বর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হককেও গ্রেফতার করা হয়। তবে আগে থেকে মহানগরের রাজনীতির সাথে ডোনারের সেভাবে সম্পৃক্ততা না থাকায় চূড়ান্ত পর্যায়ে মহানগর উত্তরে জোরাল আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। অবশ্য এ জন্য মহানগর উত্তরে ‘সংগঠন না থাকার’ অভিযোগও করেন এই পেশাজীবী নেতা, যা তিনি পরে বিএনপির হাইকমান্ডকেও জানান বলে জানা যায়।

উত্তরের মতো মহানগর দক্ষিণেও তেমন আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। আন্দোলনের শুরুতে গত বছরের ২২ মে দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করা হলে তাকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করা হয়। দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বাইরে থাকলেও আন্দোলনের পুরোটা সময়জুড়ে ছিলেন আত্মগোপনে। এর ফলে দক্ষিণেও গড়ে ওঠেনি জোরাল আন্দোলন। অবশ্য আত্মগোপনে থাকলেও আন্দোলন সংগঠিত করতে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের সাথে সালামের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে দাবি তার ঘনিষ্ঠজনদের। সব মিলিয়ে আন্দোলন ব্যর্থতায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতৃত্বের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন দলের হাইকমান্ড। ফলে ভেঙে দেয়া হয়েছে দলের গুরুত্বপূর্ণ এই দুই ইউনিটের কমিটি।

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, শিগগিরই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে নতুন আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে, যেটা হবে তারুণ্যনির্ভর। দীর্ঘদিন ধরে বয়স্করা মহানগরের নেতৃত্ব দিলেও এবার তরুণদের ওপর আস্থা রাখতে চান হাইকমান্ড। ফলে দুই মহানগরেই সভাপতি পদে নতুন মুখ আসতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিনিয়র কাউকে নেতৃত্বে আনা না হলে মহানগর উত্তরের সভাপতি পদে বিদায়ী কমিটির সদস্যসচিব আমিনুল হকের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। এ পদে যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের নামও শোনা যাচ্ছে। তবে নীরব কারাগারে থাকায় তার সম্ভাবনা কম বলে অনেকে মনে করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরের নাম আলোচনায় রয়েছে।
উত্তরের শীর্ষ পদে যুবদলের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম শোনা গেলেও তাকে কেন্দ্রীয় বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হতে পারে। তাকে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক করা হতে পারে। অবশ্য টুকু যুগ্ম মহাসচিব হতে চান বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের দাবি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণে রফিকুল আলম মজনুকে সভাপতি এবং তানভীর আহমেদ রবিনকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে শীর্ষ পদে দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি হামিদুর রহমান হামিদ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিব এবং সদ্য বিদায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ইশরাক হোসেনের নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে হামিদুর রহমান হামিদ অপেক্ষাকৃত বয়ষ্ক হওয়ায় এবং মহানগরে ছোট্ট বলয় নিয়ে উঠবস করায় তার সম্ভাবনা কম বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, জাতীয়বাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও যেকোনো মুহূর্তে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। অন্যান্য মহানগরীতেও দেয়া হবে নতুন কমিটি। বরিশাল মহানগররীতে মনিরুজ্জামান ফারুক ও জিয়াউদ্দিন সিকদারের নেতৃত্বে নতুন কমিটি দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছে বিএনপি। পাশাপাশি যুবদলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কমিটি গঠন, পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় জাতীয়তাবাদী যুবদল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। যথাসময়ে সেখানে নতুন করে কমিটি ঘোষণা করা হবে। নতুন কমিটির মাধ্যমে সংগঠন আরো ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত ও গতিশীল হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পুনর্গঠন নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সংগঠনের সব নেতৃত্বই পাল্টে ফেলা হবে। ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।