ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঘুষের খামকাণ্ডের ওসি ক্লোজড

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ০৪:৪৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
  • ১০৯৫ বার পড়া হয়েছে

খামকাণ্ডে রাজশাহী মহানগর পুলিশের চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলমকে ক্লোজ করা হয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) আরএমপি কমিশনারের নির্দেশে তাকে থানা থেকে ক্লোজ করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে বসে একব্যক্তির কাছ থেকে ‘ঘুষের খাম’ নেওয়ার ভিডিও ফাঁসের পর ওসি মাহবুবের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফাঁস হওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওসি মাহবুব আলম তার চেয়ারে বসে আছেন। টেবিলের অপর দিকে চেয়ারে বসে থাকা নামে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘মাহবুব ভাই, ভাই উঠব ভাই।’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আচ্ছা।’ তখন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘একটু কথা বলে যাই।’ ওসি তার দিকে মনোযোগ দিয়ে বলেন, ‘হুম।’ সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, একটা ছোট ইয়ে, খাম দেন।’ ওসি তখন মুচকি হাসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘মাহবুব ভাই, আপনি আমাকে চেনেন, জানেন, বোঝেন। আমি বিপদে পড়ছি বলেই আপনার কাছে আসছি ভাই। আমি বিপদেই পড়ি।’ তখন তৃতীয় এক কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘দাও।’

এরপর ওসি তার টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটি খাম বের করে দেন। ওসি তৃতীয় ওই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘দিলাম ভাই, বুইঝেন। তাকে অবশ্য আগেরটাও আমি হেল্প করছি।’ ওই ব্যক্তি তখন বলেন, ‘আমি জানি, আমি মাহবুব ভাইয়ের কাছে আসলে ভাই কাজ হবে।’ এ সময় ওসি বলেন, ‘না, যথেষ্ট হেল্প করছি।’ কথা বলতে বলতে সামনে থাকা ওই ব্যক্তি ভরা খাম টেবিলে এগিয়ে দিলে ওসি সেটি আবার নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দেন।

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন! আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলবো, তখন বুঝবেন ও আমাকে কী পর্যায়ে পেরেশানিতে নিয়ে আসছে। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না, যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি। সে জি এম স্যারের কাছে ৪০ জন লোক নিয়ে গেছে রিমুভ ফরম সার্ভিস করার জন্য আমার বোনের। আমি কী বোঝাবো বলেন!’

তখন ওসি বলেন, ‘দুজনেরই পানিশমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, আমার বোনের যদি পানিশমেন্ট হয় হোক, কিন্তু এই অপরাধ; অন্যায় যে করে, আর যে সহে দুজনে সমান অপরাধী।’ ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও এখানেই শেষ হয়।

তবে যে ব্যক্তি খামটি ওসিকে দিয়েছেন তার দাবি, তার বোনকে শ্লীলতাহানির কিছু গোপনীয় নথিপত্র একটি খামে করে তিনি ওসিকে দিয়েছিলেন সেই ভিডিওই ছড়ানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ওই খাম দেওয়ার সময় সেখানে বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই খামে করে নথিপত্র ওসিকে দেওয়া হয়। ওসি মাহবুব দাবি করেছেন, ওই খাম নেওয়ার সময় তার কক্ষে আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তার এবং পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এ ভিডিও ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন ওসি।

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে কথা হয় খাম প্রদানকারী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীতেই। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার বোন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে চাকরি করেন। সম্প্রতি তিনি কর্মকর্তার দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ওসির সঙ্গে দেখা করেন এবং কিছু নথিপত্র একটি খামে করে ওসিকে দেন। গত মাসের এ ঘটনা। এটি নিয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে বেশ কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন। বেশি লোক থাকার কারণে গোপন নথিপত্র একটি খামে দেওয়া হয়েছিল। সেটি কেউ ভিডিও করে ভাইরাল করেছে। ওই খামে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন আমরা তো ভিকটিম। আমরা কেন পুলিশকে টাকা দিতে যাব।’

এদিকে, ওসি চন্দ্রিমা থানার মাহবুব আলম দাবি করেন, এটা গত মাসের ২০ তারিখের ঘটনা, এক নারীর শ্লীলতাহানি বিষয়ে কিছু নথিপত্র একজন খামে করে আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। সেখানে মিডিয়া কর্মীসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেটি কেউ ভিডিও করে রেখেছিল। তার এবং পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সেই ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, চন্দ্রিমা থানার ওসির একটি খাম লেনদেনের ভিডিও কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে। তবে, খামে কী আছে সেটি নিশ্চিত নয়। তবে ওসি মাহবুবকে ক্লোজ করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ঘুষের খামকাণ্ডের ওসি ক্লোজড

আপডেট সময় ০৪:৪৪:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

খামকাণ্ডে রাজশাহী মহানগর পুলিশের চন্দ্রিমা থানার ওসি মাহবুব আলমকে ক্লোজ করা হয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) আরএমপি কমিশনারের নির্দেশে তাকে থানা থেকে ক্লোজ করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরে বসে একব্যক্তির কাছ থেকে ‘ঘুষের খাম’ নেওয়ার ভিডিও ফাঁসের পর ওসি মাহবুবের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফাঁস হওয়া ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, ওসি মাহবুব আলম তার চেয়ারে বসে আছেন। টেবিলের অপর দিকে চেয়ারে বসে থাকা নামে এক ব্যক্তি বলছেন, ‘মাহবুব ভাই, ভাই উঠব ভাই।’ জবাবে ওসি বলেন, ‘আচ্ছা।’ তখন ওই ব্যক্তি বলেন, ‘একটু কথা বলে যাই।’ ওসি তার দিকে মনোযোগ দিয়ে বলেন, ‘হুম।’ সামনে বসে থাকা ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, একটা ছোট ইয়ে, খাম দেন।’ ওসি তখন মুচকি হাসেন। এ সময় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘মাহবুব ভাই, আপনি আমাকে চেনেন, জানেন, বোঝেন। আমি বিপদে পড়ছি বলেই আপনার কাছে আসছি ভাই। আমি বিপদেই পড়ি।’ তখন তৃতীয় এক কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘দাও।’

এরপর ওসি তার টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটি খাম বের করে দেন। ওসি তৃতীয় ওই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘দিলাম ভাই, বুইঝেন। তাকে অবশ্য আগেরটাও আমি হেল্প করছি।’ ওই ব্যক্তি তখন বলেন, ‘আমি জানি, আমি মাহবুব ভাইয়ের কাছে আসলে ভাই কাজ হবে।’ এ সময় ওসি বলেন, ‘না, যথেষ্ট হেল্প করছি।’ কথা বলতে বলতে সামনে থাকা ওই ব্যক্তি ভরা খাম টেবিলে এগিয়ে দিলে ওসি সেটি আবার নিয়ে ড্রয়ারে রেখে দেন।

ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি না পারতে এ পর্যন্ত আসলাম। বিশ্বাস করেন! আমি আরেক দিন এসে ডিটেইলস বলবো, তখন বুঝবেন ও আমাকে কী পর্যায়ে পেরেশানিতে নিয়ে আসছে। না হলে আমি আপনার কাছে আসতাম না, যদি অফিশিয়ালি সলিউশন করতে পারতাম আমি। সে জি এম স্যারের কাছে ৪০ জন লোক নিয়ে গেছে রিমুভ ফরম সার্ভিস করার জন্য আমার বোনের। আমি কী বোঝাবো বলেন!’

তখন ওসি বলেন, ‘দুজনেরই পানিশমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ জবাবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই, আমার বোনের যদি পানিশমেন্ট হয় হোক, কিন্তু এই অপরাধ; অন্যায় যে করে, আর যে সহে দুজনে সমান অপরাধী।’ ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের এই ভিডিও এখানেই শেষ হয়।

তবে যে ব্যক্তি খামটি ওসিকে দিয়েছেন তার দাবি, তার বোনকে শ্লীলতাহানির কিছু গোপনীয় নথিপত্র একটি খামে করে তিনি ওসিকে দিয়েছিলেন সেই ভিডিওই ছড়ানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, ওই খাম দেওয়ার সময় সেখানে বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই খামে করে নথিপত্র ওসিকে দেওয়া হয়। ওসি মাহবুব দাবি করেছেন, ওই খাম নেওয়ার সময় তার কক্ষে আরও বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তার এবং পুলিশ বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে এ ভিডিও ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন ওসি।

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে কথা হয় খাম প্রদানকারী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীতেই। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার বোন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে চাকরি করেন। সম্প্রতি তিনি কর্মকর্তার দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি ওসির সঙ্গে দেখা করেন এবং কিছু নথিপত্র একটি খামে করে ওসিকে দেন। গত মাসের এ ঘটনা। এটি নিয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে বেশ কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন। বেশি লোক থাকার কারণে গোপন নথিপত্র একটি খামে দেওয়া হয়েছিল। সেটি কেউ ভিডিও করে ভাইরাল করেছে। ওই খামে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন আমরা তো ভিকটিম। আমরা কেন পুলিশকে টাকা দিতে যাব।’

এদিকে, ওসি চন্দ্রিমা থানার মাহবুব আলম দাবি করেন, এটা গত মাসের ২০ তারিখের ঘটনা, এক নারীর শ্লীলতাহানি বিষয়ে কিছু নথিপত্র একজন খামে করে আমাকে দিয়ে গিয়েছিল। সেখানে মিডিয়া কর্মীসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেটি কেউ ভিডিও করে রেখেছিল। তার এবং পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সেই ভিডিও ছড়ানো হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, চন্দ্রিমা থানার ওসির একটি খাম লেনদেনের ভিডিও কর্মকর্তাদের নজরে এসেছে। তবে, খামে কী আছে সেটি নিশ্চিত নয়। তবে ওসি মাহবুবকে ক্লোজ করে সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।