ঢাকা , রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ঝালকাঠিতে মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রির হাট, ব্যস্ত কারিগররা

‘আষাঢ়ে বাদল নামে খাল-বিল থৈ থৈ, লাফিয়ে ওঠে টেংরা-পুঁটি তাই নিয়ে হৈ চৈ’। আষাঢ়ের শেষের দিকে খাল-বিল, নদী-নালাসহ চারদিকে পানিতে টইটুম্বুর। এ সময় দেশীয় মাছের অবাধ বিচরণ দেখা যায়।

বৈশাখ মাসের নতুন পানিতে সাধারণত মাছের বংশ বৃদ্ধি হয়। দেশীয় মাছের স্বাদ নিতে গ্রামের খালে এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে চাই-বুছনা (এক ধরনের মাছ ধরার ফাঁদ) পেতে মাছ ধরেন গ্রামের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। তাই চাহিদার জোগান দিতে এবং মৌসুমি আয়ে চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

সরেজমিনে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের বারইকরণ ও সরই গ্রাম পানের জন্য বিখ্যাত। এলাকার পান চাষিদের পাশাপাশি অন্য পেশার এবং শ্রমজীবী লোকজনও পিছিয়ে নেই কোনো ক্ষেত্রে।

তাদের প্রচেষ্টা চলছে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে। মৌসুমি কাজ হিসেবে চাই-বুছনা ও জাল বুনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কেবল ঘরের কর্তা নন, বুনন কাজে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী, সন্তান, ভাই, মা ও বাবা। তাদের সহযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে যায় বুনন কাজ।

সরই গ্রামের কারিগর দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাঘ মাসে চোখের দৃষ্টিতে অনুমান করে ১২০ থেকে দেড়শ টাকায় প্রতিটি বাঁশ কিনতে হয়। এরপর বাঁশ আকারমতো কেঁটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে শলা তৈরি করা হয়।

প্রতি সপ্তাহের ৩ দিন বাঁশ থেকে শলা তৈরি করি। বাকি ৪ দিন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিটি বুছনা তৈরিতে ২২০ থেকে ২৫০টি শলা লাগে। একটি ভালো বাঁশ থেকে ৩টি বুছনা তৈরি করা যায়।

মাঘ মাস থেকে এ কাজ শুরু করেছি। আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে। আমাকে সহযোগিতা করছে ভাই জালাল, স্ত্রী নাজমা, ছেলে নাজমুল, মেয়ে মীম, মা নুরবানু ও বাবা সুলতান শেখ। মূলধনের অভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতি বছরই কাজ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একেকটি বুছনা বিক্রি করি ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঝালকাঠি স্টেডিয়াম মোড়ে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে ৬০টি বুছনা নিয়ে বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে অন্যরা পাইকারি কিনে নেন।

সংসারের খরচ, বাবা-মায়ের চিকিৎসা খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ এবং ঋণ শোধ করে সব মিলিয়ে বছরের আয়-ব্যয় সমান সমান থাকে। সরকারি সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর আশা করছি।’

চাই-বুছনা জেলার এক হাট থেকে অন্য হাটে নৌ ও সড়ক পথে সরবরাহ করেন কারিগররা। চলতি মৌসুমে বুনন ও বিক্রয় কাজেই ব্যস্ত থাকেন তারা। নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘দেলোয়ারের কার্যক্রম কুটির শিল্পের আওতায় পড়ে।

আর্থিক সমস্যার কারণে জেগে উঠতে পারছে না। সহায়তা পেলে স্বচ্ছল হতে পারতো।’ ঝালকাঠি বিসিকের সহকারী মনিটরিং এবং মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে এলে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যাবে।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

ঝালকাঠিতে মাছ ধরার ফাঁদ বিক্রির হাট, ব্যস্ত কারিগররা

আপডেট সময় ০৩:৪৮:২২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

‘আষাঢ়ে বাদল নামে খাল-বিল থৈ থৈ, লাফিয়ে ওঠে টেংরা-পুঁটি তাই নিয়ে হৈ চৈ’। আষাঢ়ের শেষের দিকে খাল-বিল, নদী-নালাসহ চারদিকে পানিতে টইটুম্বুর। এ সময় দেশীয় মাছের অবাধ বিচরণ দেখা যায়।

বৈশাখ মাসের নতুন পানিতে সাধারণত মাছের বংশ বৃদ্ধি হয়। দেশীয় মাছের স্বাদ নিতে গ্রামের খালে এবং উন্মুক্ত জলাশয়ে চাই-বুছনা (এক ধরনের মাছ ধরার ফাঁদ) পেতে মাছ ধরেন গ্রামের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। তাই চাহিদার জোগান দিতে এবং মৌসুমি আয়ে চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

সরেজমিনে জানা গেছে, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের বারইকরণ ও সরই গ্রাম পানের জন্য বিখ্যাত। এলাকার পান চাষিদের পাশাপাশি অন্য পেশার এবং শ্রমজীবী লোকজনও পিছিয়ে নেই কোনো ক্ষেত্রে।

তাদের প্রচেষ্টা চলছে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে। মৌসুমি কাজ হিসেবে চাই-বুছনা ও জাল বুনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কেবল ঘরের কর্তা নন, বুনন কাজে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী, সন্তান, ভাই, মা ও বাবা। তাদের সহযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে যায় বুনন কাজ।

সরই গ্রামের কারিগর দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মাঘ মাসে চোখের দৃষ্টিতে অনুমান করে ১২০ থেকে দেড়শ টাকায় প্রতিটি বাঁশ কিনতে হয়। এরপর বাঁশ আকারমতো কেঁটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে শলা তৈরি করা হয়।

প্রতি সপ্তাহের ৩ দিন বাঁশ থেকে শলা তৈরি করি। বাকি ৪ দিন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিটি বুছনা তৈরিতে ২২০ থেকে ২৫০টি শলা লাগে। একটি ভালো বাঁশ থেকে ৩টি বুছনা তৈরি করা যায়।

মাঘ মাস থেকে এ কাজ শুরু করেছি। আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে। আমাকে সহযোগিতা করছে ভাই জালাল, স্ত্রী নাজমা, ছেলে নাজমুল, মেয়ে মীম, মা নুরবানু ও বাবা সুলতান শেখ। মূলধনের অভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতি বছরই কাজ করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একেকটি বুছনা বিক্রি করি ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঝালকাঠি স্টেডিয়াম মোড়ে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে ৬০টি বুছনা নিয়ে বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে অন্যরা পাইকারি কিনে নেন।

সংসারের খরচ, বাবা-মায়ের চিকিৎসা খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ এবং ঋণ শোধ করে সব মিলিয়ে বছরের আয়-ব্যয় সমান সমান থাকে। সরকারি সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর আশা করছি।’

চাই-বুছনা জেলার এক হাট থেকে অন্য হাটে নৌ ও সড়ক পথে সরবরাহ করেন কারিগররা। চলতি মৌসুমে বুনন ও বিক্রয় কাজেই ব্যস্ত থাকেন তারা। নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘দেলোয়ারের কার্যক্রম কুটির শিল্পের আওতায় পড়ে।

আর্থিক সমস্যার কারণে জেগে উঠতে পারছে না। সহায়তা পেলে স্বচ্ছল হতে পারতো।’ ঝালকাঠি বিসিকের সহকারী মনিটরিং এবং মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, ‘তারা আমাদের কাছে এলে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা যাবে।’