ভবন আছে, শিক্ষকও আছেন। কিন্তু পাঠদানের জন্য নেই শিক্ষার্থী। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত হাজিরা খাতায় শতভাগ উপস্থিতি।
অভিযোগ আছে, অডিটের সময় মাদ্রাসা থেকে ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে আসা হয় বিদ্যালয়ে। ঝালকাঠির রাজাপুরের ১২১ নম্বর নিজ গালুয়া মরহুম ফজলুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।
কিন্তু গত সোমবার গিয়ে একজন শিক্ষার্থীরও দেখা মেলেনি বিদ্যালয়টিতে। ছাত্র-ছাত্রী না আসার কারণে অফিস কক্ষে গল্পে মশগুল ছিলেন শিক্ষকেরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিষ্ঠানটি শুধু কাগজপত্রেই ঠিকঠাক আছে, বাস্তবে এটাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলে মনে হয় না। শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেই বললেই চলে, কিন্তু আছেন পাঁচজন শিক্ষক। একরকম বসে বসেই বেতন নিচ্ছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় শিক্ষকেরা নিয়মিত স্কুলে এসে হাজিরা দেন, আবার ছুটির সময় শেষ হওয়ার আগেই বাড়িতে চলে যায়। অডিটের সময় পার্শ্ববর্তী সিরাতুন নবী (স.) মডেল মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের এনে এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রেজিস্ট্রার ও কাগজপত্রে ৫১ জন শিক্ষার্থী দাবি করলেও ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রেণিকক্ষের হাজিরা খাতার হিসেব কষতে গিয়ে গিয়ে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৫৪তে। তবে ৩০ তারিখে হাজিরা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফাতিমা বেগম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম। তবে নিয়মিত ৩ থেকে ৫ জন আসে। কিন্তু হাজিরা খাতায় উপবৃত্তি পাওয়ার লক্ষ্যে সবাইকে উপস্থিতি দেখানো হয়।
উপবৃত্তি দিলেও তারা কেন স্কুলে আসে না এবং ৩০ তারিখে হাজিরা খাতায় কেন হাজিরা নেওয়া হলো না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের টিফিনের বিরতিতে অফিস কক্ষে বসেই হাজিরা দিয়ে দেই। আজকে কোনো শিক্ষার্থী না থাকায় হাজিরা নেওয়া হয়নি। ওরা সবাই নূরানী মাদ্রাসায় যায়, আমরা তো ওদের জোর করতে পারি না।’
সিরাতুন নবী (স.) মডেল মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘১২১ নং নিজ গালুয়া মরহুম ফজলুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী আমার মাদ্রাসায় পড়ে না। বরং যখন ওই স্কুলে অডিট আসে তখন আমার মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের স্কুলের বলে কর্তৃপক্ষকে দেখানো হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজম খান বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষার্থী না থাকলে নাই, অসুবিধা কী? আমরা তো আর কোথাও নিয়ে রাখি নাই।
স্কুলের শিক্ষার্থী পার্শ্ববর্তী নূরানী মাদ্রাসায় পড়ে, যার জন্য স্কুলে আসে নায়।’ তার স্কুলের শিক্ষার্থীরা কেন নূরানী মাদ্রাসায় পড়ে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন ‘আরবি পড়ার জন্য ওই মাদ্রাসায় যায়।’
রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘এ রকম উপজেলায় ৩ থেকে ৪টা স্কুল রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অশোক কুমার সমাদ্দার বলেন, ‘আমি বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের এটিওকে স্কুলটি ভিজিট করে রিপোর্ট প্রদান করার জন্য বলে দিচ্ছি। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’