ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিরাজনীতিকীকরণের শঙ্কায় বিএনপি

  • সূর্যোদয় ডেস্ক:
  • আপডেট সময় ১২:০৬:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ১০৮৬ বার পড়া হয়েছে

এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে যেমন বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা হয়েছিল, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আবারো সে রকম প্রচেষ্টার আশঙ্কা করছে বিএনপি। দলটির অভ্যন্তরে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বিষয়টি যেমন রয়েছে, তেমনি এই সরকারের উদ্দেশ্য কিংবা কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এক দিকে নির্বাচন কিংবা রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী বক্তব্য, অন্য দিকে বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো কোনো পক্ষের ‘পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন’ নিয়ে দলটি কিছুটা হলেও শঙ্কায় পড়েছে। গত মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে শীর্ষ নেতারা কথা বলেছেন বিরাজনীতিকীকরণসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে নিয়েও।

এ বিষয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেছেন, ৫ আগস্টের পর কোনো কোনো পক্ষ গণতন্ত্রের লড়াইয়ে থাকা বৃহৎ দল বিএনপিবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। এর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত রয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে আমরা ওয়ান-ইলেভেনের গন্ধ পাচ্ছি। বিরাজনীতিকীকরণের গন্ধ পাচ্ছি। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনীতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সম্ভব না। আমরা এখানে বিরাজনীতিকীকরণ করব, আর আমলাতন্ত্র দেশ চালাবে সেটা হবে না। দেশ চলতে হবে জনগণের সাথে সম্পৃক্তদেরকে নিয়ে। সে জন্য গণতান্ত্রিক পন্থা হচ্ছে উৎকৃষ্ট পন্থা।
রাষ্ট্র সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কথা হয়েছে। সরকারের কার্যক্রমে যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ দুই মাস পার হতে চলল, কিন্তু এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তা ছাড়া তারা আগামী দিনের রাষ্ট্র বিনির্মাণে বর্তমান সরকার কী চিন্তা করছেন, কখন নির্বাচন দেবেন, রাষ্ট্র সংস্কার কিভাবে করবেন, আগে রাষ্ট্রের সব সংস্কার নাকি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে যথেষ্ট স্পেস দিতে চায় কি না- এসব নিয়ে জনমনে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। এসব প্রশ্নের উত্তর সরকারকে জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জানা গেছে, বিএনপির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে কয়েকজন নেতা বলেন, প্রশাসনে কয়েক ধাপে রদবদল করা হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীরা এখনো রয়ে গেছে। তা ছাড়া রদবদলে ঘুরে-ফিরে তাদেরকেই আনা হচ্ছে। এতে করে উল্টো আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্টদের পুনর্বাসন হচ্ছে। এই প্রশাসন দিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আবার কেউ কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের মেয়াদ নিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলছে। একবার বলছে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে দেড় বছর, একবার বলছে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে। আবার বলছে দেড় বছরের মধ্যে সব সংস্কার কাজ শেষ করা হবে, তারপর নির্বাচন দেয়া হবে। তাদের মেয়াদকাল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারের একটা বক্তব্যের সাথে আরেকটা বক্তব্য মিলছে না।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা হলে তা আখেরে সবার জন্য ক্ষতিই বয়ে আনবে।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৬টি কমিশনের গঠন কার্যক্রম আলোচনায় তোলেন দুই-একজন নেতা। তারা বলেন, ৬টি কমিশনের ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরুর কথা ছিল। ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা কাজ করে রিপোর্ট দিবে। সরকার এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসবে। কিন্তু এখন আবার সুর পাল্টে বলছে, আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে তারা আলোচনায় বসবেন। আগামী সপ্তাহে সম্ভবত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া হতে পারে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কথাবার্তা ও আচরণের মধ্য কোনো মিল থাকছে না, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কোনো কোনো নেতা।

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ৬টি কমিশন তথা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারকে সহযোগিতা করতে তাদের গঠিত এই ৬ কমিশনের সাথে মিল রেখে ৬টি কমিটি গঠন করে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির সভায় প্রস্তাবিত ৬টি কমিটির মধ্যে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্য আছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক সুপন ও প্রফেসর ড. নাজমু জামান ভূঁইয়া ইমন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে। সদস্য হলেন- অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিচারক ইকতেদার হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসিম।

পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। সদস্য হচ্ছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইউম, সাবেক ডিআইজি খোদা বক্স ও সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান।
প্রশাসন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সদস্যরা হলেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শরফুদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান নাম রয়েছে। সদস্য হচ্ছেন- ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে। সদস্য হচ্ছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাধান্য দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকেই গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন তারা।
জানা গেছে, সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বৈঠকে বিএনপির একটি ছোট টিম অংশ নেবে। সেখানে দু-একজন বিশেষজ্ঞও থাকতে পারে। তবে টিমে কারা কারা থাকবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ ছাড়া বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী ও এমপিরা বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। হত্যা মামলার পরও এসব আসামি কিভাবে পালালেন, কারা তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে- এসব বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

আজকের সূর্যোদয়

আজকের সূর্যোদয় প্রত্রিকায় আপনাদের স্বাগতম। ‍আমাদের নিউজ পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পাশে থাকুন।

বরিশালে মুজিবিয়ানের ৮৭ নেতাকে খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা

বিরাজনীতিকীকরণের শঙ্কায় বিএনপি

আপডেট সময় ১২:০৬:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে যেমন বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা হয়েছিল, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আবারো সে রকম প্রচেষ্টার আশঙ্কা করছে বিএনপি। দলটির অভ্যন্তরে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতার বিষয়টি যেমন রয়েছে, তেমনি এই সরকারের উদ্দেশ্য কিংবা কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এক দিকে নির্বাচন কিংবা রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী বক্তব্য, অন্য দিকে বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো কোনো পক্ষের ‘পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন’ নিয়ে দলটি কিছুটা হলেও শঙ্কায় পড়েছে। গত মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে শীর্ষ নেতারা কথা বলেছেন বিরাজনীতিকীকরণসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে নিয়েও।

এ বিষয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে বলেছেন, ৫ আগস্টের পর কোনো কোনো পক্ষ গণতন্ত্রের লড়াইয়ে থাকা বৃহৎ দল বিএনপিবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে। এর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত রয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে আমরা ওয়ান-ইলেভেনের গন্ধ পাচ্ছি। বিরাজনীতিকীকরণের গন্ধ পাচ্ছি। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনীতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সম্ভব না। আমরা এখানে বিরাজনীতিকীকরণ করব, আর আমলাতন্ত্র দেশ চালাবে সেটা হবে না। দেশ চলতে হবে জনগণের সাথে সম্পৃক্তদেরকে নিয়ে। সে জন্য গণতান্ত্রিক পন্থা হচ্ছে উৎকৃষ্ট পন্থা।
রাষ্ট্র সংস্কারসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কথা হয়েছে। সরকারের কার্যক্রমে যথেষ্ট অস্পষ্টতা রয়েছে বলে মনে করেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ দুই মাস পার হতে চলল, কিন্তু এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তা ছাড়া তারা আগামী দিনের রাষ্ট্র বিনির্মাণে বর্তমান সরকার কী চিন্তা করছেন, কখন নির্বাচন দেবেন, রাষ্ট্র সংস্কার কিভাবে করবেন, আগে রাষ্ট্রের সব সংস্কার নাকি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে যথেষ্ট স্পেস দিতে চায় কি না- এসব নিয়ে জনমনে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। এসব প্রশ্নের উত্তর সরকারকে জাতির সামনে পরিষ্কার করতে হবে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জানা গেছে, বিএনপির বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের ভালো-মন্দ দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে কয়েকজন নেতা বলেন, প্রশাসনে কয়েক ধাপে রদবদল করা হলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগীরা এখনো রয়ে গেছে। তা ছাড়া রদবদলে ঘুরে-ফিরে তাদেরকেই আনা হচ্ছে। এতে করে উল্টো আওয়ামী লীগের আশীর্বাদপুষ্টদের পুনর্বাসন হচ্ছে। এই প্রশাসন দিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আবার কেউ কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের মেয়াদ নিয়ে নিজেরাই বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলছে। একবার বলছে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে দেড় বছর, একবার বলছে দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন হবে। আবার বলছে দেড় বছরের মধ্যে সব সংস্কার কাজ শেষ করা হবে, তারপর নির্বাচন দেয়া হবে। তাদের মেয়াদকাল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সরকারের একটা বক্তব্যের সাথে আরেকটা বক্তব্য মিলছে না।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা হলে তা আখেরে সবার জন্য ক্ষতিই বয়ে আনবে।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৬টি কমিশনের গঠন কার্যক্রম আলোচনায় তোলেন দুই-একজন নেতা। তারা বলেন, ৬টি কমিশনের ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরুর কথা ছিল। ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা কাজ করে রিপোর্ট দিবে। সরকার এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসবে। কিন্তু এখন আবার সুর পাল্টে বলছে, আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সাথে তারা আলোচনায় বসবেন। আগামী সপ্তাহে সম্ভবত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়া হতে পারে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কথাবার্তা ও আচরণের মধ্য কোনো মিল থাকছে না, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কোনো কোনো নেতা।

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে ৬টি কমিশন তথা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারকে সহযোগিতা করতে তাদের গঠিত এই ৬ কমিশনের সাথে মিল রেখে ৬টি কমিটি গঠন করে বিএনপি।

স্থায়ী কমিটির সভায় প্রস্তাবিত ৬টি কমিটির মধ্যে সংবিধান পুনর্গঠন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। সদস্য আছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক সুপন ও প্রফেসর ড. নাজমু জামান ভূঁইয়া ইমন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে। সদস্য হলেন- অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিচারক ইকতেদার হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসিম।

পুলিশ বিভাগ সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। সদস্য হচ্ছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জহিরুল ইসলাম, সাবেক আইজিপি আবদুল কাইউম, সাবেক ডিআইজি খোদা বক্স ও সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান।
প্রশাসন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে। সদস্যরা হলেন- সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সাবেক বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি শরফুদ্দিন চাকলাদার ও বিচারপতি এ এফ এম আবদুর রহমান নাম রয়েছে। সদস্য হচ্ছেন- ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।
নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানকে। সদস্য হচ্ছেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক সচিব আবদুর রশিদ।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাধান্য দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকেই গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন তারা।
জানা গেছে, সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বৈঠকে বিএনপির একটি ছোট টিম অংশ নেবে। সেখানে দু-একজন বিশেষজ্ঞও থাকতে পারে। তবে টিমে কারা কারা থাকবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এ ছাড়া বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, মন্ত্রী ও এমপিরা বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। হত্যা মামলার পরও এসব আসামি কিভাবে পালালেন, কারা তাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে- এসব বিষয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।